বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষিকার সর্বস্ব লুট করে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল
দিনাজপুর থেকে আবু তাহের : এক স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে পরকীয়া করে ফেঁসে গেছেন দিনাজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফরিদুল ইসলাম। স্ত্রী’র মর্যাদা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে দীর্ঘ দুই বছর ওই শিক্ষিকার সঙ্গে চেয়ারম্যান পরকীয়ায় জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘ সম্পর্কের পর স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করায় বিচার চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থায় লিখিত অভিযোগ করেছেন অসহায় স্কুল শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীন।
তবে ঘটনাটি বর্তমানে দিনাজপুর শহরে “টক অব দ্যা টাউন” এ রূপ নিয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত এই উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনায় খোদ তার দলীয় নেতা-কর্মীরাই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর মেয়ে মাহমুদা পারভীন দিনাজপুর শহরের পুলিশ লাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা। বিয়ের পর ঘর সংসার করার এক পর্যায়ে সন্তান রেখে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান।
তার সন্তান এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। স্বামীর অবর্তমানে সন্তানকে নিয়ে ভালই কাটছিল তার। কিন্তু দু’বছর আগে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তার জীবনে আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হয়। চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বিবাহিত জীবনে তিন মেয়ে সন্তানের জনক। স্ত্রী বর্তমান থাকার পরও তিনি শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
মাহমুদা পারভীনকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম।এভাবে ২০১৪ সাল হতে টানা দু’বছর তাদের এই পরকীয়া চলার পর যখন মাহমুদা পারভীন তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন তখনই সুর পাল্টে যায় চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলামের।
প্রথমে তিনি মাহমুদা পারভীনকে নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাহমুদা পারভীন চেয়ারম্যানের প্রতারণা বুঝতে পেরে বিয়ের জন্য আরো বেশি চাপ দিতে থাকলে তখন চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম স্কুল শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনকে হত্যার ভয়-ভীতি দেখাতে থাকেন। এমনকি তার চাকরি থেকে সরানো হুমকি দেন।
পরে উপায় না পেয়ে মাহমুদা পারভীন পুরো ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্রশাসকের কাছে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে মাহমুদা পারভীন উল্লেখ করেন যে, তাকে স্ত্রীর মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি দেয়া কথা বলে চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম তার সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি বলেন, ‘একটি ছেলের আশায় ফরিদুল ইসলাম আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
আমি তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি, তাই আমার সবকিছু দিয়ে ফেলেছি। ফরিদুল ইসলামের মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে, তাকে বিয়ে দিয়ে মাহমুদাকে ঘরে তোলা আশ্বাস দেয়। শুধু তাই নয়, ফরিদুলের তিনটি মেয়ে আছে, এখন একটি ছেলে দরকার।
অভিযোগে মাহমুদা পারভীন বলেন, ফরিদুল ইসলাম আমাকে বলে আমার তিনটি মেয়ে এখন আমি একটি ছেলে চাই। তাই তুমি আমাকে ‘একটি ছেলে দিও’। মাহমুদা পারভীন তার অভিযোগের মাধ্যমে ফরিদুল ইসলামের স্ত্রীর মর্যাদার দাবী করেছেন। স্ত্রী’র মর্যাদা না দিলে তার বিচারও চেয়েছেন ওই স্কুল শিক্ষিকা।
এদিকে সূত্র জানিয়েছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম দলের নেতা ও সুশীল সমাজকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন এবং স্কুল শিক্ষিকা মাহমুদা পারভীনকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখারও চেষ্টা করছে।
এব্যাপারে সাংবাদিকরা মাহমুদা পারভীনের সাথে তার স্কুলে সাক্ষাত করলে তিনি অভিযোগের কথা স্বীকার করেন এবং ফরিদুল ইসলামের বিচার দাবী করে কেঁদে ফেলেন। সাধারণ মানুষ ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকের কাছে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেন, আসলে বিষয়টি এতদূর গড়াবে বুঝতে পারিনি। তিনি এ বিষয়ে সংবাদ না করার জন্য সাংবাদিকদের বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।