বিয়ের পিড়িতে রেলমন্ত্রী-টক অব দ্য কান্ট্রি
শফিক আজিজি,ঢাকা:
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক আর চিরকুমার থাকছেন না। আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটার দিকে রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকেরা বিয়ের বিষয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কথা সত্যি। সময়মতো সব বলব। তবে চিরকুমার আর থাকছি না।’
বিয়ের অনুষ্ঠান কবে হবে—সাংবাদিকেরা তা জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, ‘সবকিছু রীতিনীতি মেনেই হবে। বিয়ের দুটো পক্ষ আছে। দুই পক্ষ বসে ঠিক করা হবে বিয়ের অনুষ্ঠান কবে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বেশি কথা কওয়া যাইব না। কোনো রকমে রাজি করা হইছে, যদি আবার ফিরে যায়!’
রেল মন্ত্রীর বিয়েতে সাজ সাজ রব
সানাই বাজবে সাতদিন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা অনেকের কাছে ভাল লাগলেও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের কাছে তা এখন বিরস লাগবে এ কথা দিব্যি করে বলা যায়।
৬৮টি বসন্ত যায় যায়, অবশেষে পাখি খাঁচা বন্দী করতে যা”েছন মুজিবুল হক। ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’ বরং কবিতার এ লাইনই বরং রেলমন্ত্রীর কাছে সত্যি হয়ে ধরা দিচেছ। কারণ তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। কনে মাস্টার্স ডিগ্রি পাস এবং আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন, বর্তমানে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করছেন।
রেলমন্ত্রীর হবু স্ত্রীর নাম না জানা গেলেও তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায় এটা নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রী নিজেই। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৫-৬ ডিসেম্বর। সংসদ ভবনের এলিডি হলে অনুষ্ঠিত হবে বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নিজ আসনে চলবে ৭দিন ব্যাপি অনুষ্ঠান। মন্ত্রীর কনে দেখার কাজ ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। কনে মন্ত্রীর পছন্দের। এখন তার নতুন জীবন শুরুর প্রস্তুতি পর্ব চলছে।
রেলমন্ত্রীর বিয়ে নিয়ে কুমিল্লা শহরে হুলুস্তুল কান্ড চলছে। কে সেই সৌভাগ্যবতী? এ প্রশ্ন সবার। বিয়ের পর রেলগাড়িতে ফার্স্ট ক্লাস কোচে চড়ে মন্ত্রী সস্ত্রীক হানিমুনে যাবেন কি না এ নিয়ে টিকা টিপ্পনি কাটছেন অনেকে। তাতে মন্ত্রীর বয়েই গ্যাছে। মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিয়ে করবেন, সেটাই শেষ কথা। পুরো মন্ত্রিসভায় এখন খুশির হিল্লোল বইছে।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ৬৮ বছর বয়সের জীবনের এত দিন ছিলেন চিরকুমার। এ জন্য তাকে মন্ত্রিপাড়ায় বাসাও বরাদ্দ দেওয়া হচেছ। অন্যদিকে চিরকুমার রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বিয়ে করছেন এই খবর এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। অনেকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন কাকে বিয়ে করছেন, স্ত্রীর নাম কী, বাড়ি কোথায়, হবু স্ত্রীর আগে বিয়ে হয়েছিল কী না ইত্যাদি ইত্যাদি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার রেল মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ইনশাল্লাহ, বিয়ে করতে যাচিছ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে ঢাকা ও কুমিল্লায়।
হবু বউয়ের পরিচয় জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পাত্রী মাস্টার্স ডিগ্রি পাস, এখন তিনি আইন পাসও
করেছে। বিয়ের পর যদি আইন পেশায় যেতে চায় তাহলে সেটি তার ইচছা।
পাত্রীর নাম ও বয়সের বিষয়ে জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গ্রামের সহজ সরল সাধাসিধে মেয়ে, ধীরে ধীরে সব জানতে পারবেন। মাস্টার্স পাস করে আইনেও পড়েছেন, তো বয়স বুঝতেই পারছেন।
পাত্রী পরহেজগার, বোরকা ছাড়া চলে না। ভাল পরিবারের মেয়ে। তার বাড়ি কুমিল্লায়। এর বেশি বলা যাবে না। নাম জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, নাম এখনই বলা যাবে না, যদি ফিরে যায়! কুমিল্লা জেলার যে কোন উপজেলায় তার বাড়ি।
তবে নিন্দুকরা বলতে শুরু করছেন, মন্ত্রীর বউ হবেন, আবার আইন পেশায় ডিগ্রী নিয়েছেন, ফের বোরকা পড়ছেন, জামায়াত করেন নাতো। আর করলেই বা কি আসে যায়। জঙ্গিদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেই চলে। বিয়ে মন্ত্রীর অথচ দেশের মানুষ তার এ বিয়ে নিয়ে কতই না আকাশ কুসুম কল্পনা করতে শুরু করেছে!
কোন ঘটক বা কারো সহযোগিতায় বিয়ে হচেছ কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোন ঘটক না, পাত্রীর সাথে আমার তিন বছর ধরে পরিচয়, পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিয়ে করতে যাচিছ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, জীবনের প্রায় পুরোটা সময় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকা রেলমন্ত্রী বিয়ে করছেন এটি নিশ্চিত করেছেন একাধিক মন্ত্রী।
গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তার বিয়ের বিষয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈঠকে তেমন কোনো গু্রুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা না হলেও রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে একাধিক মন্ত্রী অংশ নেন। একজন মন্ত্রী জানান, রেলমন্ত্রীকে মন্ত্রিপাড়ায় বাসা বরাদ্দ দেওয়া হচেছ সংসার জীবন শুরু করার কারণে। শীঘ্রই তিনি ওই বাসা বুঝে পাবেন।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, বিয়ে উপলক্ষে এক বা দুই দিনের অনুষ্ঠান করলে হবে না, কমপক্ষে চার দিনের অনুষ্ঠান করতে হবে। এতে মন্ত্রিসভায় বেশ হাস্যরস দেখা দেয়।
মন্ত্রিসভার অন্য একজন সদস্য জানান, রেলমন্ত্রীর বিয়ের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত দিন ট্রেনের ইঞ্জিন ছিল। এবার ইঞ্জিনের সঙ্গে বগিও যুক্ত হচেছ। প্রধানমন্ত্রীর কথায় বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সবাই হাসিতে ফেটে পড়েন।
——————————-
নতুন একটি ছবি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক।
ছবিতে সাদা টুপি মাথায় রেলমন্ত্রীর পাশে বিয়ের পোশাকে এক তরুণীকে দেখা যাচ্ছে।মাঝ বয়েসী তরুণীর গলায় ফুলের মালা। রজনীগন্ধার ছড়া থেকে সেখানে গুচ্ছ লাল গোলাপ উকি দিচ্ছে। বিয়ের লাল শাড়ির ঘোমটায় আধঢাকা মাথা। পাশে মুজিবুল হক সাদা পোশাকের পর চাপিয়েছেন ‘মুজিব কোর্ট’।তবে ছবিটি রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের হবু বধু হনুফা আক্তার রিক্তার কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।মন্ত্রীর হবু স্ত্রী রিক্তার বয়স ২৯। রিক্তা ২০০০ সালে এসএসসি পাস করেন। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দুল্লাই ইউনিয়নের মিয়াখোলা গ্রামে তাদের বাড়ি। তবে রিক্তা রাজধানীর ফার্মগেটে থাকেন। তার বাবার নাম মৃত হামিদুল্লাহ মুন্সী। তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হলেও কয়েক মাসে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।