‘বিহারীদের পুনর্বাসন করুন নতুবা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করুন’
পল্লবী প্রতিনিধি : বিহারীদের পূনর্বাসন করা পর্যন্ত উচ্ছেদ বন্ধ রাখার আহবান জানিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ (ন্যাপ বাংলাদেশ) এর মহাসচিব নেয়াজ আহমদ খান বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলনকারী চক্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করুন। এজন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন ন্যাপ নেতা। বুধবার (০৩.০২.২০২১) বিকালে রাজধানীর মিরপুর-১১ এর ভাসানী মোড়ে বাংলাদেশী বিহারী পূণর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) পল্লবী থানা শাখা ক্যাম্পের বর্তমান স্থানেই উর্দূভাষী বিহারী মুসলমানদের পাশাপাশি ভূমিহীন বাঙ্গালীদের পূনর্বাসননের দাবীতে আয়োজিত এক সমাবেরেশ তিনি এ আহবান জানান।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় নামকরণের দাবী জানানো হয়। বিকাল সাড়ে তিনটায় সমাবেশ আরম্ভ হয় ও রাত ০৮:১৫ মিনিটে শেষ হয়। কর্মসূচির শুরুতেই পুলিশ দুইটি মাইক চালু রেখে সকল মাইক বন্ধ করে দেয় ও আয়োজকদের মাইক খুলতে বাধ্য করে। উত্তেজনা দেখা দিলে বিহারী নেতৃত্ববৃন্দ তাদের সমর্থক কর্মীদেরকে শান্ত করান।
বিবিআরএ এর পল্লবী থানার শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিহারী নেতা শা’বান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ (ন্যাপ বাংলাদেশ) এর মহাসচিব জননেতা নেয়াজ আহমদ খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত ৭৬ টি ক্যাম্পের উর্দূভাষী বিহারী মুসলমানদের পূণর্বাসনে কোন সরকারই এগিয়ে আসেনি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত ৫০ বছরেও কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান কোন ক্যাম্প পরিদর্শন করেননি। সম্ভবত ক্যাম্প নামক কারাগার হতে এই অসহায় মানুষদের বের করার ও পূণর্বাসন করার মানবিক অনভূতি হারিয়ে ফেলেছেন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। সুযোগ বুঝেই কিছু লোক ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে উর্দূভাষী বিহারীদের অবদান বিভিন্নভাবে অস্বীকার করে নেতিবাচক প্রচারনা চালায়।
একটি সংঘবদ্ধ রিলিফখোর চক্র কর্তৃক বাংলাদেশী উর্দূভাষী বিহারিদেরকে তাথাকথিত ‘আটকেপড়া পাকিস্তানী’ নামে প্রচারের ফলে দেশের মানুষ প্রায়ই বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। ১৭৫৭ সালে পলাশির আম্রকাননে এ অঞ্চলের হারানো স্বাধীনতাকে পূনরুদ্ধারে যারা সবকিছু ত্যাগ করেছেন সেই অগ্রযোদ্ধা বিহারী মুসলমানগন গত ৫০ বছর যাবৎ বিভিন্ন নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। যা এদেশের অতিথিপরায়ন মানুষ কোনভাবেই কামনা করেন না। প্রধান অতিথি বলেন যে, স্থানীয় বাঙ্গালী ভূমিদস্যু চক্রের স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের বাড়ী-ঘর না ভেঙ্গে ও এভিনিউ রাস্তার এলাইনমেন্ট আঁকাবাকা করে শুধুমাত্র অসহায় বিহারীদের ক্যাম্পের স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়ে অবিচার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।
সমাবেশের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশী বিহারী পূনর্বাসন সংসদ (বিবিআরএ) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ কাওসার পারভেজ ভুলু বলেন যে, ক্যাম্পের দুর্বিসহ ও অনাকাংখিত অবস্থা হতে দ্রুত নিস্তার পাওয়ার লক্ষ্যে বিবিআরএ গত ০২.০১.২০০৬ ইং তারিখে সরকারের নিকট পূণর্বাসনের ৭ দফা দাবী উত্থাপন করে।বিবিআরএ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, সরকারের নিকট তারা ২০১০ সালে বাজেটে বিহারীদের পূণর্বাসনের জন্য অর্থ বরাদ্দের দাবী জানিয়ে মাননীয় অর্থ মন্ত্রীকে ও ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান করলেও অবস্থা তথইবচ।
পূনর্বাসনের বিভিন্ন দাবিতে বিহারী ক্যাম্পের বিভিন্ন লেখা সম্বলিত ব্যানার ও ফেষ্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে উপস্থিত হন। তাদের ব্যানার ও ফেষ্টুনের লেখাগুলো হল- রিলিফ নয় কাজ চাই সবার আগে শিক্ষা চাই, পূনর্বাসনের পূর্বে সকল প্রকার উচ্ছেদ বন্ধ কর, রেডিও টিভিতে উর্দূ ভাষার অনুষ্ঠান বৃদ্ধি কর, মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে ক্যাম্প বাচাঁও, সবার আগে পূনর্বাসন চাই উন্নয়নে বাঁধা নাই প্রভৃতি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক মহাসচিব মোহাম্মাদ জাহিদ, তোফাজ্জল হোসেন আজাদ, জাবেদ আহমেদ, মহিলা নেত্রী মেহজাবিন, সুলতান আহমদ, আলম শাহ, মাহতাব ভাসানী, সুমন জাহাঙ্গীর, শেখ আলী ইমাম পাপ্পু, ওমর ফারুক, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, মোঃ মুর্শিদ, খুরশিদ আলম, আনিসুর রহমান বেচু, হাবিবুল্লাহ পারভেজ, মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, নান্নু কাদেরী, মোঃ শামিম, মোহাম্মাদ আরমান, মোহাম্মাদপুর জেনেভা ক্যাম্প শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আরজু খান প্রমুখ।