বিশ্ব শান্তির জন্যে’ই হাসিনার নোবেল জরুরী
এস রহমান : বিশ্ববাসীর কাছে মাদার অব হিউম্যানিটি হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি অর্জনকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ৭১তম জন্মদিন। ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্বগুণ, দূরদর্শিতা এবং সুগভীর রাজনৈতিক চেতনা মনোভাব সম্পন্ন নেত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের চার দশক ধরে নেতৃত্ব দেয়া শেখ হাসিনা তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ডের সময় বিদেশে অবস্থান করায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এদেশে শুরু হয় সামরিক শাসনের এক অন্ধকার যুগ। অভিশপ্ত সময়ের খোলসে বন্দি হয় জাতি।
এই বন্দিদশা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে এবং জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষার শপথে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে বাংলার পথে-প্রান্তরে নিরন্তর ছুটেছেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে চলা বাংলাদেশে দীর্ঘ ২১ বছর পর তার নেতৃত্বেই ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।গ্রেনেড ও বুলেটের মুখ থেকে বারবার বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নপূরণের শেষ ঠিকানায় পরিণত হয়েছেন।
বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নত এবং মর্যদাপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুসহ উন্নয়নের মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে তার হাত ধরেই। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যার বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান এবং অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’তে ভূষিত হয়েছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে ৬ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা ক্ষুধা-দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার মত বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরষ্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘ ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’, ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ‘শান্তিবৃক্ষ পদক’ ২০১৩ সালে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে প্রয়াত রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বাবু বলেছিলেন, এখন আর আমরা শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিতে যাই না, উনি আগের থেকে অনেক প্রজ্ঞাবান এবং উপমহাদেশের রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রতিভার অধিকারী এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কারোর পরামর্শ ব্যতিরেকে।
ইতঃপূর্বে শেখ হাসিনার গৃহিত একক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র এবং দলের জন্য সহযোগী উপকরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনাকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সুপারিশ কিংবা পরামর্শ প্রদান করেন না। কারণ রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় তিনি এতটাই পারদর্শী হয়েছেন যে, নিজের সিদ্ধান্তগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে প্রতিনিয়ত সফলভাবেই।
তাঁর প্রমাণ দিয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তজার্তিক সংস্থা। ২০১০ সালের ৮ মার্চ নারী দিবসের শতবর্ষ পালন উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সিএনএন এশীয়দের মধ্যে ক্ষমতাধর ৮ জন নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিলো সেখানে শেখ হাসিনার অবস্থান ছিল ৬ষ্ঠ স্থানে। অন্যদিকে, ২০১০ সালে টাইমস সাময়িকীর অনলাইন ম্যাগাজিনের জরিপে বিশ্বের সেরা ক্ষমতাধর নারীর মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা।
২০১৬ সালের ২৪ মার্চ ফরচুন ম্যাগাজিনের জরিপে শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দশম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিবেচনার ক্যাটাগরি ছিল: ব্যবসা, সরকার ব্যবস্থা, বিশ্ব প্রীতি ও কলায় যে মানুষগুলি বিশ্বে পরিবর্তন এনেছে এবং একই সঙ্গে অন্যের জন্য এ মানুষগুলি অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত বর্তমান বিশ্বের ১৮ জন নারী নেতৃত্বকে নিয়ে “উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিষ্টারস” বইয়ের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার ছবি অনন্য মর্যাদার অংশীদার। লেখক রিচার্ড ও ব্রিয়েন শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে ৩ পৃষ্ঠার নিবন্ধন লেখেন।
আন্তর্জাতিকভাবেও শেখ হাসিনা গৃহিত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতি যেকোন দেশের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত। এশিয়ার তিন পরাশক্তি চীন, ভারত ও জাপানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার পরিচায়ক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া সহ বিশ্বের নীতি নির্ধারণী দেশগুলোর সাথে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কগুলোও উল্লেখ করার মতই।
দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ন্যায়, সততা, সুশাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে শেখ হাসিনাকে ধরা হয় এবং স্বয়ং জাতিসংঘ বাংলাদেশের উন্নয়নে বারংবার প্রশংসা করেছেন এবং সে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকৃতঅর্থেই সঠিক পরিকল্পনা, নিয়মানুবর্তিতা, দায়িত্বশীলতা, বিচক্ষণতা এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে বিশ্বে মর্যাদায় শেখ হাসিনার অনন্য সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইত্যবসরে।
সর্বশেষ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে নিজের এবং রাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সর্বশেষ জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ে সভায় যোগ দিতে গিয়েও তিনি সদর দপ্তরে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে ফের বলেছেন, ‘যদি আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি তাহলে আরও ৫ অথবা ৭ লাখ লোককেও খাওয়াতে পারবো।’
চরম সত্য যে, মিয়ানমারের নিষ্ঠুর সামরিক জান্তা রাখাইনে যে নির্মম অবস্থা তৈরি করেছে তাতে করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিলনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কাজেই এবার বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের একটাই দাবি ২০১৭ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারে শেখ হাসিনাকে ভূষিত করে তাঁর যোগ্যতার আসনে প্রতিষ্ঠিক করা হোক।