বিশ্ব মা দিবসের লজ্জা লোহাগড়ায়-এক সেনা সদস্যর অমানবিকতা-অবলা নারী ববিতার আর্তনাদ
নিপা খন্দকার.ঢাকা: একজন দাহিয়া কালবির কথা। ইতিহাসের এই খ-চিত্র দেড় হাজার বছর আগের। বর্বর বা অন্ধকার যুগের।সে তখনও মুসলমান হয়নি। নিজ মেয়েকে বেড়াতে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে নিয়ে যায়। পথে মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে।
একটা মাঠে পৌঁছে গর্ত করতে থাকে বাবা। অবুঝ মেয়ে বাবাকে গর্ত খনন করতে দেখে নানান প্রশ্ন করছিল। বাবার শরীরের ঘাম মুছে দিচ্ছিল অভাগিনী। কিন্তু মেয়ের এমন মায়া বাবার হৃদয় আকৃষ্ট করতে পারেনি। তাকে গর্তে ফেলে নির্মম প্রহারে রক্তাক্ত করে দাহিয়া কালবি। কচি শিশুর শরীর ফেটে রক্ত এসে পড়ছিল বাবার গায়ে। মেয়ে চিৎকার করে বলছিল! বাবা! ও বাবা, তোমার গায়ে রক্ত লাগছে। জামায় দাগ লাগছে! আর বাবা শোনো! মেয়ে হওয়া কি আমার অপরাধ! এই জন্যই আমাকে গর্তে ফেলে নির্মম প্রহার করছো!
মেয়ের অবাক করা সোহাগ আর কলিজা ছেঁড়া কান্নার সুর বাবার পাষ- হৃদয়ের বরফ গলেনি। ইসলাম গ্রহণের আগে দাহিয়া কালবির দীর্ঘ এই নির্মম নির্যাতনের কাহিনি মহানবীকেও কাঁদিয়েছে। নবীজি দাহিয়া কালবিকে হাজার বার তওবার উপদেশ দিয়ে নারীর মর্যাদা সম্মানের বাণী শুনিয়েছেন। পাঠ করেছেন ওয়া ইজাল মাওউদাতু সুয়িলাত, বি আইয়ি জানবিন কুতিলাত!-এর মতো কোরআনের কঠোর আয়াত। পঠিত আয়াতে কোরআনের ভাষ্য হলো কেয়ামতের মাঠে নারী-শিশু নির্যাতনকারী বা হত্যাকারীকে আল্লাহর আদালতে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, কেন এই পাশবিক আচরণ করেছো?
ইতিহাসের এই খ-চিত্র দেড় হাজার বছর আগের। বর্বর বা অন্ধকার যুগের। কিন্তু উত্তর আধুনিক পৃথিবীর সভ্য সমাজের একটি ছবি কতোটা নির্মম, হৃদয় বিদারক এবং লজ্জার জন্ম দিতে পারে তা প্রমাণ করলো নড়াইলের লোহাগড়ার প্রকৃতি। গ্রামের হাজার চোখের সামনে দিনের আলোতে মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় গায়ে রশি পেঁচিয়ে, গাছে বেঁধে ববিতা নামের এক নারীকে বেধড়ক প্রহার করা হয়।
কে এই ববিতা? কী তার অপরাধ?ববিতা ওই এলাকার সেনা সদস্য শফিকুল শেখের গৃহবধূ! অপরাধ? স্বামীর সংসারে ওঠতে চাওয়া!কাগজে প্রকাশিত, ববিতার নীরব ছবি থেকেও বেদনার আত্মচিৎকার ভেসে আসছে।ববিতার স্বামীর সংসারে তুলে নেওয়ার টালবাহানা থেকে ঘটনার সূত্রপাত।রাত পোহালেই বিশ্ব মা দিবস। মা জাতির মর্যাদা সম্মান উচ্চারণের ঠিক আগ মুহূর্তে বেদনার এই কাব্য কতোটা যন্ত্রণার বিবেকবানরা জানেন!
পুরুষশাসিত সমাজে স্বামীর ঘরে ওঠতে যাওয়া যদি অপরাধ হয়; তবুও ববিতার গায়ে রশি পেঁচিয়ে, গাছে বেঁধে অমানবিক, পাশবিক ও নির্মম এই নির্যাতন বেআইনি। এই নির্মম নির্যাতনকারী শফিকুল একা নয়; সঙ্গে নিয়েছে ওর মা-বাবা, ভাই বন্ধুদের।
সেনা সদস্য শফিকুলের ডাকে উষ্ণ ভালবাসার টানেই লাল টুকটুকে জামা গায়ে এসেছিলেন ববিতা। বিপরীতে পাষ- স্বামী বেদনার রক্তে লাল করলো ভালবাসার প্রতীকে।অমানবিক এই নির্যাতন একজন গৃহবধূর ছবি নয়, সমাজের হাজার কল্পণা ও বাস্তবতার নির্মম চিত্রায়ন। সুস্থ বিবেক, সভ্য সমাজ এই করুণ ছবি মেনে নিতে পারে না।
যেখানে পৃথিবীর নানা প্রান্তরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে বাঙালি নারীরা, তাদের অগ্রসরের সংবাদ পড়ছি খবরের কাগজে; সেখানে সবুজ বাংলায় এমন বেদনার কাব্য বড্ড বেমানান। সমাজের সর্বস্তরে ববিতারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াক! অধিকার নিয়ে গর্ব করুক। মায়ের সম্মান, নারীর মর্যাদা ও ইনসাফভিত্তিক অধিকার হোক আজকের প্রতিপ্রাদ্য।