বিশ্বের সবচেয়ে দামী পাথর চান-
জ্যোতিষরাজ লিটন দেওয়ান চিশতী : যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রত্নপাথর কোনটি? অনেকে হয়তো হীরা, রুবী, নীলা বা পান্নার কথা ভাবছেন। কিন্তু এই ভিডিওটি দেখার পর হয়তো আপনার ধারনা পাল্টে যেতে পারে। কারণ এখানে এমন অনেক পাথরের নাম আছে যে পাথরের দেখা তো দুরের কথা আপনি কখনো নামও শুনেননি। যদি জেনে থাকেন বা না জেনে থাকেন তবে আজকের এই তথ্য আপনার জন্য-গ্র্যান্ডিডিয়েরাইট (Grandidierite)গ্রান্ডিডিয়েরাইট খুবই দুষ্প্রাপ্য রত্নপাথর এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত। মাদাগাসকারে ১৯০২ সালে সর্বপ্রথম এটা পাওয়া গিয়েছিল। প্রতি ক্যারেটের মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
কারণ পৃথিবীতে ৪ হাজারের বেশি খনিজ পদার্থ রয়েছে। এদের বেশিরভাগই হয়তো আমরা বাস্তব জীবনে কখনো দেখিনি। রাসায়নিক গঠন, প্রতিসরণ, বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, স্ফটিক গঠনের ও প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে খনিজ পদার্থকে রত্নপাথর হিসেবে গন্য করা হয় এবং এর মুল্য নির্ধারণ করা হয়। আর যখন এই রত্নপাথরটি হয় দুর্লভ তখন রত্নপাথরটি হয়ে যায় অমূল্য। তাই আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই পৃথিবীর এমন দামি দশটি খনিজ পাথরের নাম ও দাম –
১০। পাওড্রেট্টেইট
কানাডার পাওড্রেটে পরিবার ১৯৬০ সালে সেইন্ট হিলারি কিউবেক পাহাড়ে সর্বপ্রথম এই খনিজ পাথর আবিষ্কার করে। এটা দেখতে অনেকটা গোলাপি রংয়ের। প্রতি ক্যারেটের মূল্য ৩ হাজার মার্কিন ডলার। তবে ২০০০ সালের পর বার্মার মগকে ৯.৪১ ক্যারেটের সর্বপ্রথম রত্নপাথর মানের পাওড্রেট্টেইট আবিষ্কৃত হয়।
৯। বেনিটয়েট
উজ্জল নীলাভ বর্ণের পাথর এটি যা ব্যারিয়াম, টাইটানিয়াম এবং সিলিকার দিয়ে তৈরি। দুর্লভ এই পাথরটি ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান বেনিটো কাউন্টিতে এটি সর্বপ্রথম পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে সেই জায়গার নাম অনুসারেই এর নামকরণ করা হয় বেনিটয়েট। প্রতি ক্যারেটের মূল্য ৪ হাজার মার্কিন ডলার।
৮। মুসগ্রেভাইট
অস্ট্রেলিয়ার মুসগ্রেভ অঞ্চলে ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম এই পাথর পাওয়া যায়। এটা খুবই দুষ্প্রাপ্য এবং কঠিন পাথর। মুসগ্রেভিটে তৈরি হয় অ্যালমুনিয়াম অক্সাইডের সাথে ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং জিংকের বিক্রিয়ার ফলে। প্রতি ক্যারেটের মূল্য ৬ হাজার ডলার।
৭। রেডবেরিল
রেড বেরেল তৈরি হয় ব্যারিলিয়াম, এলুমিনিয়াম এবং সিলিক্যাটের সংমিশ্রনে। প্রকৃতিতে যে সমস্ত বেরিল পাওয়া যায় সেগুলো বর্ণহীন এবং সঠিক বর্ণের আলাদা আরো উপদান প্রয়োজন হয়। রেড বেরিল আমেরিকার ইউটা আঞ্চলের থোমাস রেঞ্জ এলাকায় পাওয়া যায়। এই পাথরের মূল্য প্রতি ক্যারেট ১০ হাজার মার্কিন ডলারের উপরে এবং দুষ্প্রাপ্য পাথরটি ২ থেকে ৩ ক্যারেট ওজনের খুবই কম পাওয়া যায়।
৬। আলেকজ্যান্ড্রাইট
ক্রাইসোবেরিল গোত্রের আলেকজ্যান্ড্রাইট সর্বপ্রথম ১৮৩০ সালে রাশিয়ার উরাল পর্বতমালায় পাওয়া গেছে। বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন রংয়ের রূপ ধারণ করে আলেকজ্যান্ড্রাইট। আশ্চর্যজনকভাবে আলোতে পান্নার মত দেখতে এবং অন্ধকারে লাল রুবি পাথরের বর্ণ ধারণ করে এটি। আয়রন, টাইটানিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি আলেকজ্যান্ড্রাইট ও ক্রাইসোবেরিলের মধ্যে পার্থক্যের কারণ। এর প্রতি ক্যারেটের মূল্য ১২ হাজার মার্কিন ডলার।
৫। হীরা
কথায় আছে, হীরা নারীদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। এর নাম শুনেনি এমন মানুষ খুবই কম আছে। পৃথিবীতে যত কঠিনতম খনিজ পাওয়া গেছে তার মধ্যে হীরা একটি। কয়লা খনিতে পাওয়া যায় এই পাথর। ১০০ থেকে ৩০০ কোটি বছরে চাপ ও তাপে কয়লার অনু সুগঠিত হয়ে হীরায় রুপান্তর হয় যা একে করেছে সবচেয়ে শক্ত ও স্থায়ী। এর প্রতি ক্যারেটের মূল্য ১৫ হাজার মার্কিন ডলার।
৪। স্যারেন্ডিবাইট
স্যারেন্ডিবিটে খুবই দুষ্প্রাপ্য একটি খনিজ পাথর যা সর্বপ্রথম ১৯০২ সালে শ্রীলংকাতে পাওয়া যায়। সাম্প্রতি এটি মোগক অঞ্চল, মিয়ানমারেও পাওয়া গেছে। বোরন, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগ্নেসিয়ামের বিভিন্ন শাখার জটিল রাসায়নিক ফর্মুলা দিয়ে গঠিত হয় এই রত্নপাথর যার প্রতি ক্যারেট মূল্য ১৮ হাজার মার্কিন ডলার।
৩। গ্র্যান্ডিডিয়েরাইট
গ্রান্ডিডিয়েরাইট খুবই দুষ্প্রাপ্য রত্নপাথর এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত। মাদাগাসকারে ১৯০২ সালে সর্বপ্রথম এটা পাওয়া গিয়েছিল। প্রতি ক্যারেটের মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
২। ট্যাফেইট
তাফেইটি খুবই দুর্লভ খনিজ পাথর এবং অনেকে ভুলবশত এটাকে স্পাইনাল পাথর মনে করে। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে সর্বপ্রথম ১৯৪৫ সালে এটা আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তী সময়ে শ্রীলংকা এবং তানজানিয়াতেও পাওয়া যায় এই পাথর। এর প্রতি ক্যারেটের মূল্য ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার।
১। লাল হীরা
বিশ্বের এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সমস্ত খনিজ পাথরের চেয়েও সবচেয়ে বেশি মূল্যবান লাল হীরা। দুষ্প্রাপ্যতাই এর অনন্য বৈশিষ্ট্য। দুর্লভ এ পাথরের প্রতি ক্যারেটের মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারেরও উপরে। সারা পৃথিবীতে এই পর্যন্ত ৩০টিরও কম লাল হীরা পাওয়া গেছে, যাদের বেশিরভাগই অর্ধেক ক্যারেটেরও কম। ৫.১১ ক্যারেটের বিখ্যাত মোউসেইফ লাল হীরা ২০১১ সালে ৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রী করা হয় এবং এটিই এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় লাল হীরা।