• মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বসেরা ১০টি প্রেমের কাহিনী


প্রকাশিত: ১:১৩ পিএম, ২৩ আগস্ট ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪১৪ বার

1স্কারলেট ও’হারা অ্যান্ড রেথ বাটলারঃ
বলা হয়ে থাকে বিখ্যাত লেখক Margaret Mitchell এর কালজয়ী ক্লাসিক “Gone with the Wind,” হল ভালোবাসা বাসি মানুষের জন্য এক বাইবেল! সিভিল ওয়ারের পটভূমি নিয়ে, এবং স্কারলেট-বাটলারের বাঁধন হারা-উন্মাতাল প্রেম, মানসিক টানাপোড়ন, চাওয়া- পাওয়ার হিসেব, দেশের অস্থির সময়—এই সব কিছু মিলিয়েই এটি হয়ে উঠেছে অমর এক সাহিত্য কর্ম। উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্কারলেট কখনোই কারও বাঁধনে নিজেকে বাঁধতে নারাজ ছিল। কিন্তু বাটলারের উন্মত্ত প্রেমকে সে কখনোই উপেক্ষা করতে পারেনি। সুখী জীবনের চিন্তায় বিভোর স্কারলেটের সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। তাঁর মনস্তান্তিক দ্বন্দ্ব রয়েই গেল। আর তাইতো শেষে স্কারলেট বলেছিল, “Tomorrow is another day!”

2পাউলো অ্যান্ড ফ্রান্সেসকাঃ
সত্য কাহিনী অবলম্বনে এই চরিত্র দুটি নেয়া হয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত লেখক Dante-এর অমর সাহিত্য কর্ম হল “Divine Comedy” থেকে। ফ্রান্সেসকার স্বামী মালাটেস্তা ছিলেন একজন ভয়ানক অপরাধী। তাঁর ছোট ভাই পাউলোর সাথে মিলে ফ্রান্সেসকা Dante এর বই পড়ে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে প্রেম জন্মে নেয়। ঘটনা জানাজানি হবার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রান্সেসকার স্বামী দুজনকেই হত্যা করে।

ওডিসিয়াস অ্যান্ড পেনেলোপঃ
গ্রীক অন্যান্য প্রেমের গল্পের মতোই, এই জুটির প্রেমমেও ছিল, ত্যাগ আর বিসর্জন। প্রেমের ক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণের বেশীর ভাগ কাহিনীরই 3মূলমন্ত্র হল, “Tragedy and sacrifice.” জুটি তাঁদের মিলনের জন্য অপেক্ষা করেছিল দীর্ঘ ২০ বছর! তাঁদের বিয়ের কিছু পরেই ওডিসিয়াসকে যুদ্ধে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর প্রত্যাবর্তননের আশায় আশায় পেনেলোপ তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল ২০ বছর। এরমধ্যে তিনি ১০৮ জন রাজাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, অপরদিকে ওডিসিয়াসও স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্থ ছিলেন। তিনিও অনেক দেবীর প্রেম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। Homer রচিত এই এপিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, “ভালোবাসার অন্য নাম- অপেক্ষা!” তিনি বলেছেন, “remember that true love is worth waiting for!”

নেপোলিয়ন অ্যান্ড জোসেপাইনঃ
মহাবীর নেপোলিয়ন ২৬ বছর বয়সে, বয়সে বড় তাঁর রাজ্যের এক ধনী মহিলা জোসেপাইনের প্রেমে পড়েন। 4তাঁরা দুজনেই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ, এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন। অনেকটা রাজ্য শাসনের ভারে অনেকটা অগোচরেই ছিল এই প্রেম। যদিও তাঁরা সর্বদাই স্বীকার করতেন তাঁদের সম্পর্কের কথা। নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তাঁর সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। কিন্তু চিরজীবন তাঁরা তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ধরে রেখেছিলেন।

অরফিয়াস অ্যান্ড ইরিডাইসঃ
এটিও একটি গ্রীক মিথ। সাহিত্যে তাঁদের কাহিনীকে স্বীকৃত দেয়া হয়, “tale of desperate love” বলে। গ্রীক পুরাণ মতে, স্বর্গের এক বিবাহিত পরী ইরিডাইসের প্রেমে পড়েন হারপুন নামক এক 8বাদ্যবাজক অরফিয়াস। কিন্তু দেবতা এরিসটেইয়াসের সাথে এই দুর্ঘটনায় অরফিয়াস, ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়াহয় পাতালপুরীতে। কিন্তু অরফিয়াস তাঁর জাদুকরীএক বাদ্য মূর্ছনায় হারপুন বাজিয়ে দেব- দেবীর মন জয় করে ফেলে। তিনি তাঁর রাজ্য ফেলে ক্রমাগত হারপুন বাজিয়ে তাঁর ভালোবাসা ইরিডাইসের জন্য নানা জায়গায় অপেক্ষা করেছেন। অবশেষে সঙ্গীত দেবতা হেডস ও পারসিফোনের ক্ষমায় অরফিয়াস পাতালপুরীতে জান ইরিডাইসকে উদ্ধার করতে। কিন্তু শর্ত থাকে যে, অরফিয়াস পৃথিবীতে অবতরণের আগে ইরিডাইসকে পিছন ফিরে দেখতে পারবেন না। কিন্তু অরফিয়াস অতি আবেগে আর উৎকণ্ঠায় দেবতাদের শর্তের কথা ভুলে যায়, এবং ইরিডাইসকে দেখতে থাকে। ফলাফল, চিরতরের জন্য ইরিডাইসকে হারিয়ে ফেলে। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সঙ্গীত ও মিউজিক অনেক বড় ভুমিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।

প্যারিস অ্যান্ড হেলেনঃ
গ্রীক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হল, গ্রীকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক “ইলিয়াড।” নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হল, “Trojan War!” যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা “war for Helen” কিংবা “Helen of troy” নামে বিখ্যাত। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী অনন্য এই সুন্দরী হেলেন ছিলেন, ট্রয় নগরীর পার্শ্ববর্তী, স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস তাঁকে চুরি করে তাঁর রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। এতেই বেঁধে গেল ১২ বছর ধরে চলা এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। স্পার্টার পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন রাজা এগামেমনন। এমনকি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন গ্রীক দেব ও দেবীরা! ট্রয় রাজকুমার হেক্টর, প্যারিস, দেবতা অ্যাকিলিস, স্পার্টার রাজা মেনেলাস সহ অনেকেই নিহত হন। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।

ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইডঃ
7নন্য এই প্রেমের কথা আমরা জানতে পারি, মধ্য ইংরেজিয় শাসন আমলে। আয়ারল্যান্ডের রাজকুমারী ছিলেন অ্যাইসোলেইড, তিনি ছিলেন ক্রনওয়ালের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য ক্রনওয়ালে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে ট্রিস্টানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ট্রিস্টান অ্যান্ড অ্যাইসোলেইড একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। রাজা মার্ক তাঁদের দুজনকেই মাফ করে দেন, এবং বিনিমিয়ে ট্রিস্টানকে রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন। পরে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের সাথে নামের মিল থাকার কারণে ইসেউল্ট নামক এক রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু, তাঁর আত্মার পুরোটা জুড়ে ছিল অ্যাইসোলেইডের প্রতি প্রেম। এক পর্যায়ে ট্রিস্টান, অ্যাইসোলেইডের বিরহে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান। তিনি অ্যাইসোলেইড কে শেষবারের মতো দেখতে একটি জাহাজ পাঠান। তাঁর স্ত্রী ইসেউল্ট কে বলেছিলেন, অ্যাইসোলেইড যদি আসে, জাহাজে যেন সাদা পতাকা লাগানো হয়। কিন্তু স্ত্রী ইসেউল্ট মিথ্যে বলে, জাহাজে কালো পাতাকা লাগিয়ে রাখেন। ট্রিস্টান ভাবলেন অ্যাইসোলেইড আর আসবেন না। পরে তিনি মারা যান। পরে তাঁর শোকে অ্যাইসোলেইড, তাঁরই রাজ্যে মারা যান।

ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড গুইনেভারাঃ
আরেকটি রাজকীয় এবং সেই সঙ্গে ট্র্যাজিক লাভ স্টোরি গুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এই আর্থারিয়ান প্রেম কাহিনী স্যার ল্যাঞ্ছলট অ্যান্ড লেডী গুইনেভারা। ইংলিশ কিং আর্থারের স্ত্রী, রাণী গুইনেভারার প্রেমে পড়েছিলেন সেই রাজ্যের বীর একজন নাইট, স্যার ল্যাঞ্ছলট। রাজা আর্থারের অবহেলা আর অবজ্ঞার কারণে, একসময় রাণী গুইনেভারাও তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু একদিন, রাজা আর্থারের অপর নাইট স্যার আগ্রাভেইন, স্যার মোড্রেড এবং একদল সৈন্য এই যুগলকে বদ্ধ কামরায় আবিষ্কার করে ফেলে। পরকীয়ার অপরাধে রাণী গুইনেভারাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। স্যার ল্যাঞ্ছলট তাঁর প্রেমিকা লেডী গুইনেভারাকে যুদ্ধ করে বাঁচিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, কিন্তু তাঁদের এই প্রেমের জন্য পুরো রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক মৃত্যুর জন্য তাঁরা নিজেদের দায়ী করে, নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে তাঁরা দুজনেই দুটি ভিন্ন জায়গায় ধর্মের সেবক হয়ে যান।

এন্টোনি অ্যান্ড ক্লিওপার্টাঃ
অনেকের মধ্যে অন্যতম আরেকটি অমর প্রেমগাঁথার নাম, মার্ক এন্টোনি- ক্লিওপার্টা। ঐতিহাসিক এবং একই সাথে দারুণ নাটকীয় এই প্রেম হয়, অনিন্দ সুন্দরী মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টা আর তাঁর প্রধান সেনাপতি এন্টোনির মাঝে। শক্তিশালী এবং ঐতিহাসিক চরিত্রদুটির মাঝের এই অমর প্রেম আকর্ষণীয়ভাবে আমাদের কাছে তুলে এনেছিলেন Shakespeare তাঁর যাদুকরী লিখনির মাধ্যমে। রাজকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, জয়পরাজয় উপেক্ষা করে তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে রোমান দের সাথে যুদ্ধরত এন্টোনির মনোবল ভাঙার জন্য, তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যে সংবাদ শুনিয়েছিলেন যে, শত্রুরা ক্লিওপার্টাকে হত্যা করেছে। তারপর এন্টোনি নিজ ছুরিতে মৃত্যুবরণ করেন, অন্যদিকে এন্টোনির মৃত্যুসংবাদ শুনে মিসরীয় রাণী ক্লিওপার্টাও নিজ ছুরিতে আত্মহত্যা করেন। Shakespeare তাঁদের জন্য বলেছিলেন, “great love demands great sacrifices!”

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটঃ
“Never was a story of love nor woe that of Juliet and her Romeo.” সবাই-ই মেনে থাকেন এই জুটিই, প্রেমের ইতিহাস বা গল্পগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত বা সবচেয়ে বেশী বিখ্যাত। যেন ভালোবাসার অপর নাম রমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক, William Shakespeare এর কালজয়ী ট্রাজেডি হল এই “Romeo and Juliet!” দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণতরুণীর প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়া। পরবর্তী তে পরিবারের বাঁধা, ভয় দেখানো, নানা মাসসিক সংশয়- টানাপোড়ন সব উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তাদের বিয়ে করা। এবং সবশেষে, তথ্যগত ভুলবোঝা বুঝি জনিত কারণে বিষপানে দুজনের মৃত্যু!! সব মিলিয়েই, রোমিও- জুলিয়েট কাহিনী হয়ে গেছে অমর এক প্রেম গাঁথা! তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই যুগলের নাম! যুগে যুগে অসংখ্য নাটক, সিনেমা বানানো হয়েছে এই “timeless love” নিয়ে।