বিশ্বসেরা অঘটন মেসির বিরল অর্জন
সানা হুবায়ের: বিশ্বসেরা অঘটন মেসির বিরল অর্জন-তার অপেক্ষায়ই ছিল জুরিখের এই মঞ্চ। এই রাত। ঘটলোও তাই। আবারও বিশ্বের সেরা ফুটবলারের মুকুট মাথায় পরলেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো তার শোকেসে উঠল ব্যালন ডি’অরের ওই স্বর্ণগোলক। আবারও জগৎ মেসিময়!
জুরিখের কংগ্রেস হাউসের রেড কার্পেট মাড়িয়ে মঞ্চে ওঠার আগে লিওনেল মেসি দু’পাশে বসা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নেইমার ও রোনালদোর সঙ্গে সৌজন্যের করমর্দন করলেন। এর আগে কাকা যখন মেসির নাম ঘোষণা করলেন, তখন যেন পুরো বিশ্বই হাততালিতে ফেটে পড়ল! এই কাঙ্ক্ষিত নামটিই তো তারা শুনতে চাইছিলেন বোধ হয়!
ইতিহাসে মেসির চেয়ে বেশিবার আর কোনো ফুটবলার এই মঞ্চে শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠেননি। এর আগে চারবার উঠেছেন। পঞ্চমবার উঠে মৃদুভাষী মেসি বললেন, ‘এটা আমার জন্য বিশেষ এক মুহূর্ত। ব্যাপারটা বিস্ময়কর যে, এটা আমার পঞ্চম! শৈশবে যা স্বপ্ন দেখেছি এটা তার চেয়েও বেশি কিছু।
যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। একই সঙ্গে আমার সতীর্থদেরও। তোমাদের ছাড়া কোনো কিছুই তো সম্ভব নয়। পরিশেষে আমি ফুটবলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটা আমার জন্য যা বয়ে এনেছে, ভালো কিংবা মন্দ যাই হোক না কেন, সেটা হলো মানুষ হিসেবে এটা আমাকে গড়ে তুলেছে।’
১৯৫৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা দেওয়া হতো শুধুই ইউরোপসেরা ফুটবলারদের। তখন নাম ছিল ‘ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার’। পুরস্কারটা দিত উয়েফা ও ‘ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন’। বিশ্বসেরা ফুটবলারকে পুরস্কৃত করার রীতিটা ফিফা চালু করে ১৯৯১ সালে। এবারের মঞ্চটা তাই রজতজয়ন্তী উদযাপনের মঞ্চ!
২০১০ সালে একটা বড় বাঁক আসে ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের নামফলকে। ব্যালন ডি’অর ট্রফি ও এর স্বত্বাধিকার ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিনকে যুক্ত করা হয় ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের সঙ্গে। ২০১০ সাল থেকে পুরস্কারটির নাম হয়ে যায় ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। এবার ষষ্ঠ বছরে পা দিল এই ধারা।
পাশাপাশি উয়েফা পুরস্কৃত করে যাচ্ছে ইউরোপসেরা ফুটবলারকেও। কিন্তু যখন থেকে ব্যালন ডি’অর নামটা ফিফার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তখন থেকে ইউরোপসেরা ফুটবলার নিয়ে মাতামাতিও প্রায় মিলিয়ে গেছে। অথচ, এই সেদিনও, ২০০৮ সালে রোনালদো ও ২০০৯ সালে লিওনেল মেসি পুরস্কারটা জেতার পর কী আলোড়ন তৈরি হয়েছিল সারাবিশ্বে, তা বলাই বাহুল্য!
চাইলে ২০০৭ সালে গিয়ে একটা দাগ দিয়ে রাখতে পারেন আপনি। যে দাগটা আপনাকে ১৯৯১ পূর্ব-পরবর্তী কিংবা ২০০৯ পূর্ব-পরবর্তী দাগের খতিয়ানকেও ভুলিয়ে দেবে। ২০০৭ সালে ব্রাজিলের কাকা পুরস্কারটা জেতার পর থেকেই যে ‘বিশ্বসেরা’র অভিধানে শুরু হয়ে গেল নতুন এক যুগ। মেসি-রোনালদোর যুগ!
২০০৮ সালে রোনালদো, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টানা চারবার মেসি এবং তার পর ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ফের রোনালদো- ২০০৭-এ দাগ না দিয়ে উপায় আছে!এবারও তার ব্যত্যয় যে ঘটবে না, সেটা তো গত নভেম্বরের শেষেই বোঝা গেছে। ফাইনালিস্ট হিসেবে যে আবারও মেসি-রোনালদোর নাম অঙ্কিত হলো; সঙ্গে থাকলেন ব্রাজিলের নেইমার।
কাকতালীয়, প্রথম যেবার ফাইনালিস্ট হিসেবে দু’জনের নাম উঠেছিল, সেই ২০০৭ সালে, তখনও তাদের সঙ্গে ছিলেন একজন ব্রাজিলিয়ান- কাকা। তার পর থেকে দুনিয়ায় কত রকমের পরিবর্তন হলো, এই একটি মাত্র জায়গায় কোনো পার্থক্য নেই!
এ রাতে পুরস্কার জিতলেন বর্ষসেরা কোচ হিসেবে বার্সেলোনার লুইস এনরিকে, বর্ষসেরা গোলের পুসকাস পুরস্কার যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব গোইয়ানেসিয়ার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ওয়েনডেল লিরা, বর্ষসেরা নারী ফুটবলার যুক্তরাষ্ট্রের চার্লি লয়েড এবং বর্ষসেরা নারী দলের কোচ যুক্তরাষ্ট্রের জিল এলিস।
সবার আগে ঘোষিত হলো ফিফা বর্ষসেরা দল। সেখানেও অবধারিতভাবেই থাকলেন মেসি-নেইমার-রোনালদো।তবে সব ছাড়িয়ে তিন বছর পর আবারও এ তারা জ্বলজ্বলে জুরিখের রাতে তিনিই নক্ষত্রের শিরোমণি। তিনি এক ও অদ্বিতীয় লিওনেল মেসি।