• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘বিশ্বকাপ’ শ্রীলঙ্কার—পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেছে তারা


প্রকাশিত: ১১:০৬ পিএম, ৬ এপ্রিল ১৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৪২ বার

 

 

 

‘বিশ্বকাপ’ শ্রীলঙ্কার

 না জিতলে অন্যায় হতো-

 

ক্রীড়া প্রতিবেদক
আপডেট: ২২:৪৭, এপ্রিল ০৬, ২০১৪

 

ভারতকে ফাইনালে মাটিতে নামিয়ে আনতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সাঙ্গাকারা-পেরেররা অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটি। ছবি: এএফপিক্রিকেট তাদেরকে দিয়েছে দুহাতে। শুধু দেয়নি একটি বিশ্ব শিরোপা। মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারার মুঠোয় ধরা দেয়নি কেবল একটি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের সঙ্গে কি কারো তুলনা চলে? বিশ্বকাপ হলো বিশ্বকাপ! আজ মিরপুরে দুজনের হাতে ধরা দিল সেটিও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে ১৩ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে হারিয়ে বহু আরাধ্যের বিশ্বকাপ হাতে উঠল শ্রীলঙ্কার হাতে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে মাহেলা-সাঙ্গার হাতে।
অনেককেই চমকে দিয়ে ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এর পরই এই দুই লঙ্কান কিংবদন্তির অভিষেক। এটি হয়তো ওয়ানডে বিশ্বকাপ নয়, কিন্তু জয়ের আনন্দে এতটুকু কমতি নেই শ্রীলঙ্কার। ১৮ বছরের অপেক্ষা শেষে যে আবার কোনো ‘বিশ্ব’ শিরোপা ঘরে তুলল তারা।
নিজেদের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের নেতৃত্বও দিলেন মাহেলা-সাঙ্গা। রায়নার বলে ফেরার আগে জয়াবর্ধনে করেছেন ২৪ আর সাঙ্গাকারা তো দলকে জিতিয়ে তবেই ফিরেছেন। লঙ্কান ক্রিকেটের এ বাঁহাতি মহীরুহ অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে। দুজনই দলের সর্বোচ্চ দুই স্কোরার। এর চেয়ে দারুণ সমাপ্তি কজনার হয়!
ভারতের দেওয়া ১৩১ রানের লক্ষে খেলতে নেমে শুরুতে কুশল পেরেরাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। ওই পর্যন্তই। এরপর আর শ্রীলঙ্কাকে তেমন কোনো বিপদে ফেলতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই লক্ষ্য পেরিয়ে গেছে লঙ্কানরা। জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারার সঙ্গে দিলশানের ১৮, থিসারা পেরেরা অপরাজিত ১৪ বলে ২১ স্বপ্নের সৌধ পূরণে সাহায্য করেছে দারুণভাবে। এ টুর্নামেন্টে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ভারতকে ফাইনালে মাটিতে নামিয়ে আনতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সাঙ্গাকারা-পেরেররা অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটি। এ জুটিতে আসে ৩২ বলে ৫৪।
প্রায় তিন মাস ধরে বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়েছে শ্রীলঙ্কা (বিশ্বকাপ শুরুর আগে কয়েক দিনের জন্য অবশ্য দেশে গিয়েছিলেন মালিঙ্গারা)। এর মধ্যে সব সিরিজই জিতেছে তারা। এসেছে এশিয়া কাপ ট্রফিও। বোঝাই যাচ্ছে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে কতটা মুখিয়ে ছিল তারা। শেষ পর্যন্ত লঙ্কানদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শ্রীলঙ্কা না জিতলেই অন্যায় হতো। পাঁচটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তিনবারই যে ফাইনালে উঠেছে তারা। আগের দুবারে স্বপ্ন ধরা না দিলেও অবশেষে চ্যাম্পিয়ন লেখা বোর্ড, আর ট্রফি হাতে ক্যামেরাবন্দী হলো তারাই।

ভারতের দুর্বল ব্যাটিং, শ্রীলঙ্কার দরকার ১৩১ রান

 

ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় শিরোপা জয় থেকে ১০ উইকেট দূরে ভারত। আর প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ নিতে শ্রীলঙ্কার দরকার ১৩১ রান।

 

ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে ভারত। পুরো ২০ ওভারে এ রান করেছে তারা। সর্বোচ্চ রান করেছেন বিরাট কোহলি।

 

এ ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন লঙ্কান বোলাররা। ভারতের খুব বেশি উইকেট ফেলতে না পারলেও, রান আটকানোতে অসাধারণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন লঙ্কানরা। সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন কুলাসেকারা। চার ওভারে ৭.২৫ গড়ে ২৯ রান দিয়েছেন তিনি।

 

ভারতের রান আরো কিছুটা বেশি হতে পারতো। হয়নি যুবরাজের ধীর ব্যাটিংয়ের কারণে। ২১ বলে মাত্র ১১ রান করে আউট হয়ে গেছেন তিনি। এ ছাড়া মাত্র ৪ রানে ওপেনিং জুটি ভেঙে পড়াও ভারতের কম রান হওয়ার কারণ।

 

শেষের দিকে ধোনি এসেও খুব একটি সুবিধা করতে পারেননি। সাত বলে চার রান করে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ভারতীয় দলপতিকে।

 

ভারতীয় ব্যাটিং বনাম লঙ্কান স্পিনের যে লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখেছিলো মানুষ। প্রথম ইনিংস শেষে তা পূরণ হয়নি। অবশ্য ভারতীয় স্পিন আর লঙ্কার ব্যাটিং লড়াইটা দেখার সুযোগ থাকছে এখন।

 

অন্য ব্যাটসম্যানদের জ্বলে না উঠার দিনে সপ্রতিভ ছিলেন বিরাট কোহলি। এমন অবশ্য প্রতি ম্যাচেই থাকছেন তিনি! ভারতের ইনিংস ১৩০ ছুঁয়েছে মূলত কোহলির ব্যাটের দ্যুতিতেই। ৫৮ বলে করে করা ৭৬ রানই ভারতকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছে। দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি শিরোপা জয়ের জন্য ভারত আপাতত তাকিয়ে থাকবে বোলারদের দিকে।

 

পক্ষান্তরে ভারতের চেয়ে এ ম্যাচে কিছুটা সুবিধাজনক অব্স্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা শ্রীলঙ্কার দরকার ১৩১ রান। এখন দেখার বিষয় ভারতীয় স্পিন শক্তির সেরা সময়ে শ্রীলঙ্কা কতোটা সহজে ম্যাচ জিতে। নাকি আবার ভারতীয় স্পিনের প্রলয়নাচনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে! ইতিহাস তো বলে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা কেবলই নিজেদের ছায়া হয়ে থাকে।

 

ভারতীয় সমর্থকরা আপাতত প্রার্থনায় বসতে পারেন, শ্রীলঙ্কা যাতে আজও নিজেদের ছায়া হয়ে যায়; এটা হলেই কেবল আরো একটা শিরোপা উঠতে পারে ধোনির হাতে!