• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশেষজ্ঞরা বলছেন-সবচেয়ে বড় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা,পরিবেশমন্ত্রী বলেন-সেই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি:


প্রকাশিত: ১১:২৬ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ১৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫১ বার

লিটু আনাম.মংলা থেকে:
সুন্দরবনে ট্যাংকারডুবির ঘটনায় যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলেন সেই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আজ শুক্sunderban-2রবার সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকারডুবির ১০ দিনের মাথায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, লেগে থাকা তেলে নদী তীরবর্তী গাছ ও লতাগুল্ম মারা যাবে। তবে যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা তিনি করেছিলেন, সেই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি।
আজ দুপুর ১২টার খানিক আগে মংলা নদীর নারিকেলতলা নামক স্থানে একটি সি–প্লেনে পৌঁছান পরিবেশমন্ত্রী। এরপর বন বিভাগের স্পিড বোটে করে প্রথমে শ্যালা নদীর সূর্যমুখী খালের কিছু দূর যান। সেখান থেকে দুর্ঘটনাস্থল মৃগমারীর একটু সামনে বাদামতলী খালের মুখে কিছুক্ষণ অবস্থান করে চাঁদপাই রেঞ্জের জয়মনি লঞ্চঘাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এ হিসাবে তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় কোনোভাবেই আধঘণ্টার বেশি হবে না।

sunderbanএ সময়ে ছড়িয়ে পড়া তেলের কারণে বনের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে। তবে যে পরিমাণে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম সেই পরিমাণে হয় নাই।’ তবে এর কারণে নদীর তীরে তেল লেগে থাকা গাছ এবং লতাগুল্ম মারা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বছরে বছরে গাছটা হয়। আমাদের সিসিএফ (প্রধান বন সংরক্ষক) সাহেব বলেছেন যে আগামী বছরে এটা ঠিকমতোই গজাবে।’

একই সঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী জাহাজ ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটিকে সময়মতো উদ্ধার করতে পারলে তেল ছড়ানোর পরিমাণ কমিয়ে আনা যেত বলেও মনে করেন মন্ত্রী। একপর্যায়ে তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণে এলাকার জীববৈচিত্র্যের ওপর একটা প্রভাব পড়বে বললেও পরক্ষণেই তিনি বলেন, ‘নদীতে কোথাও মরা মাছ বা মরা পাখি দেখা যায়নি। বিদেশে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন তাঁরা মরা মাছ দেখায়, তাঁরা পাখি দেখায়, কত কিছু দেখায়।’
সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এই নৌপথটি বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন আমি পরিবেশের লোক, এটা নৌপরিবহনের ব্যাপার।’
এরপর শ্যালা নদীর সংযোগ খালগুলোতে ঢুকে পড়া তেলের অবস্থা দেখার জন্য সেগুলো পরিদর্শনের কথা বললেও পরিবেশ ও বনমন্ত্রী সরাসরি চলে যান করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে। সেখানে পরিদর্শন শেষে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার উদ্দেশে মংলা ত্যাগ করেন তিনি।

সুন্দরবনে ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ বন্ধের দাবি
এর আগে মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রইসুল আলম মণ্ডলের কাছে বনের গাছ ও এখানকার জলজ প্রাণীদের ওপর তেলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনকার অবস্থা জলজ প্রাণীদের জন্য কিছুটা হলেও ভালো আছে। তবে বনের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হবে, সেটা বুঝতে সময় লাগবে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
তবে ছড়িয়ে পড়া তেলে বনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণে গবেষণারত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলছেন, নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ মেপে কেউ যদি সুন্দরবনের প্রাণী ও উদ্ভিদ আশঙ্কামুক্ত বলে, তাহলে তা হবে প্রতারণামূলক। তাঁরা বছরব্যাপী এ গবেষণার জন্য বনের ১৫টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেন। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁরা দেখতে পান, পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় প্রতি লিটার পানিতে এর আগে যেখানে ৩০০ থেকে ৪০০টি উদ্ভিদকণা এবং ২০ থেকে ৩০টি প্রাণিকণা থাকত, এখন সেখানে মাত্র ২০ থেকে ৩০টি উদ্ভিদকণা এবং এক থেকে দুটি প্রাণিকণা আছে।