• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

বিমান দূর্ঘটনার মাধ্যমে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র?


প্রকাশিত: ৫:৩৫ এএম, ৯ জুন ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০২ বার

এস রহমান   :   হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ঝুঁকিপূর্ণ মেটালিক বস্তু Hasina_PM-www.jatirkhantha.com.bdফেলে রেখে বিমান দূর্ঘটনার মাধ্যমে এবার ঢাকাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল ! কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? এসএসএফের চৌকস কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতায় এ যাত্রায় রক্ষা পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা সহ তার সফর সঙ্গীরা।

প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি ফ্লাইটে’র চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে কার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইটে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব অবহেলা করলো সেটা নিয়ে?

অার ঘটনাটি এমন সময় ঘটেছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর শেষে বাংলাদেশে ফিরছিলেন এবং শেখ হাসিনা দেশে না থাকা অবস্থায় দেশে ঘটে যায় প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ইন্ধনে কয়েকটি লোমহর্ষক খুনের ঘটনা। তাহলে কি এখানে কোন প্রতিক্রিয়াশীল চক্র কাজ করেছে?

সিভিল এভিয়েশন ও গোয়েন্দা সূত্র জাতিককন্ঠকে জানায়, হয়রত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় ৩৭ মিনিট আকাশে চক্কর দিতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটিকে। এটি শাহজালালে অবতরণের আগ মুহূর্তে হঠাৎ কন্ট্রোল টাওয়ারের মাধ্যমে ফ্লাইটটি অবতরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)।

টাওয়ার থেকে ওই ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন জামিলকে জানানো হয়, রানওয়ের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ মেটালিক বস্তু পড়ে আছে। মুহূর্তে পাইলট অবতরণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আকাশে চক্কর দিতে থাকেন। এভাবে প্রায় ৩৭ মিনিট আকাশে চক্কর দেয়ার পর অবতরণের অনুমতি পান পাইলট। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৌদি আরব থেকে ঢাকায় ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।

দেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জাতিরকন্ঠকে জানান, রানওয়ে থেকে যেসব মেটালিক বস্তু অপসারণ করা হয়েছে সেগুলো না সরালে ফ্লাইটটি ল্যান্ড করার পর বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা ছিল।এরমধ্যে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনার আশংকা ছিল  উড়োজাহাজের চাকা ফেটে জাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়তে পারত। মেটালিক বস্তুগুলো উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে ঢুকে যেতে পারত।

এতে আগুনও ধরার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। তাছাড়া চাকার সঙ্গে ঘর্ষণেও উড়োজাহাজে আগুন ধরে বড় ধরনের ক্রাশ হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। সূত্রের মতে, এসএসএফের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় অল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ওই ভিভিআইপি ফ্লাইটটি রক্ষা পেয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআরের একটি এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন থেকেই ওই মেটালিক বস্তুগুলো রানওয়েতে পড়েছিল। ওইদিন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ক্যাপ্টেন শোয়েব আলীর নেতৃত্বে ওই ফ্লাইটটি উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে ইঞ্জিনের হট সেকশনে ত্রুটি ধরা পড়ে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইটটি রানওয়ে থেকে টেকঅপ করে কিছুদূর যাওয়ার পরই রাইট সাইডের ইঞ্জিনের হট সেকশন থেকে বেশ কিছু মেটালিক বস্তু খুলে রানওয়েতে পড়ে। এরপর পাইলট ফ্লাইটটি বাতিল করে এয়ারক্রাফটটি হ্যাঙ্গারে ফেরত পাঠান।

নিয়ম অনুযায়ী উড়োজাহাজটি হ্যাঙ্গারে ফেরত পাঠানোর পর সিভিল এভিয়েশনের অ্যারো এটিএস (এয়ার ট্রাফিক সিস্টেম) বিভাগের উচিত ছিল রানওয়ে থেকে মেটালিক বস্তুগুলো অপসারণ করা। কিন্তু অভিযোগ আছে, ভিভিআইপি ফ্লাইট আছে জেনেও এটিএস বিভাগ তা করেনি।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক ফ্লাইট সেফটি উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবির জানান, এ ঘটনায় দুটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই মেটালিক বস্তু কিভাবে রানওয়েতে পড়েছিল তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

সিএএবি সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট অ্যাক্সিডেন্ট ইন্সপেকশন বিভাগ থেকে।

বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘অ্যাক্সিডেন্ট ইজ অ্যাক্সিডেন্ট’। এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল সেটা বের করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারপর কে দোষী সেটা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে ক্লোজ করা হয়েছে।

বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত শাহজালালে নোটাম (বিমান ওঠানামা বন্ধ) ছিল। তারপরও কিভাবে রানওয়েতে এ ধরনের মেটালিক বস্তু থাকল এটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, মূলত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্লিয়ার না থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। রানওয়ে পরিষ্কার ও নিরাপদ রাখার দায়িত্ব ছিল সিভিল এভিয়েশনের।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা জানান, রানওয়েতে ঝুঁকিপূর্ণ মেটালিক বস্তুু পড়ে থাকার পরও এটিএস বিভাগ তা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যে কোনো ভিভিআইপি ফ্লাইট অবতরণের আগ মুহূর্তে  নিয়ম অনুযায়ী এসএসএফের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা রানওয়েতে গিয়ে ফাইনাল তল্লাশি করে।

সিভিল এভিযেশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে এসএসএফ সদস্যরা দূর থেকে দেখতে পান রানওয়েতে বোমাসদৃশ কিছু বস্তু পড়ে আছে। তারা গাড়ি নিয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যান এবং এসব বস্তুু দেখে আঁতকে ওঠেন।

বিমান সূত্র জানায়, সৌদি আরব সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিমানের বিজি (০৩৬) ফ্লাইটে ঢাকার আকাশে পৌঁছেন। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ফ্লাইট উড্ডয়ন-অবতরণের আগে এসএসএফ বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।

রানওয়ে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এসএসএফ সদস্যরা দেখতে পান সেখানে বেশ কিছু মেটালিক বস্তু পড়ে আছে। পরে এসএসএফ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে এসব মেটালিক বস্তু সরিয়ে নেয়ার পর ফ্লাইটটিকে অবতরণের সংকেত বার্তা পাঠান ককপিটে। তারপর রাত আটটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হওয়া মন্ত্রী ও ভিআইপিরাও এ খবর জেনে আঁতকে ওঠেন। এ সময় একাধিক মন্ত্রী জানতে চান- রানওয়ে ক্লিয়ার রাখা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব কার? জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের এটিএস আর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী ও সদ্য গঠিত এভসেক সেল বিমানবন্দরে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছেন।

সিভিল এভিয়েশনের মেম্বার (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা এভসেক সদস্যদের পেশাগত কর্মদক্ষতা ও দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সাধারণ নিরাপত্তা বিভাগের পাশাপাশি অতিরিক্ত ইউনিট হিসেবে এভসেক মোতায়েন করার পরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন একাধিক মন্ত্রী ও ভিআইপি।

মঙ্গলবার শাহজালালে গিয়ে এ সম্পর্কে সাধারণ কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের আগেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাত দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে এভসেক গঠন করেন মেম্বার অপারেশন। উচ্চ বেতনের নিয়োগপ্রাপ্ত এসব সদস্য নিরাপত্তার কাজের চেয়ে বসে বসে অলস সময় কাটান, আর সাধারণ নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর খবরদারি করেন। এ নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বাঁধছে।