• বৃহস্পতিবার , ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বিমানের লুজ নাট-বল্টু-আল্লাহ’র রহমতে বেঁচে গেছেন প্রধানমন্ত্রী!


প্রকাশিত: ২:২০ এএম, ১ ডিসেম্বর ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৯ বার

pmmmmmmmmmmmm

বিশেষ প্রতিনিধি  : আল্লাহ’র রহমতে বেঁচে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তদন্ত সূত্র বলেছে, ঢিলা নাট বল্টু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে ছিল।ঠিক এসময় ফ্লাইটটি একটি ইঞ্জিনের অয়েল প্রেসারের রেড সিগন্যাল দিচ্ছিল। ওই সময় বাঁ ইঞ্জিনের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তুর্কমেনিস্তানে অবতরণের ১২ থেকে ১৫ মিনিট আগে সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনায় ইঞ্জিন শাটডাউন না করলে যে কোনো মুহূর্তে আগুন ধরে যাওয়ার আশংকা থাকে।

বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনার অদক্ষতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনের অয়েল সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তদন্ত প্রতিবেদনে বেড়িয়ে এসেছে এ তথ্য। বুধবার সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তার সচিবালয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

pmপ্রতিবেদনটি প্রকাশের কিছুক্ষণ পরই বিমানের প্রকৌশল ও গ্রাউন্ড সার্ভিস বিভাগের ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন ইঞ্জিনিয়ার অফিসার এসএম রোকোনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন ও টেকনিশিয়ান ছিদ্দিকুর রহমান। তবে ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা দুই পাইলটসহ প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইঞ্জিনের অয়েল সিস্টেমের একটি নাট-বোল্টের অর্ধেক অংশ খোলা (লুজ) থাকার কারণে এ ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে ইঞ্জিনের অয়েল প্রেসার কমে যায়। বাধ্য হয়ে তুর্কমেনিস্তানের আসগর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করাতে হয়।

বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিমানের শীর্ষ ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও প্রকৌশল শাখার অবহেলাজনিত কারণে মূলত এ ঘটনা ঘটে। বিমান একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। এর একটি পরিচালনা পর্যদ আছে। এ পরিচালনা পর্ষদই বিমানের সব কিছু দেখাশোনা করে। এর সঙ্গে বিমান মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

সব দায়দায়িত্ব তাদের। মন্ত্রী বিমানের এ পরিচালনা পর্ষদ ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি বিমান ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আরও বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আশ্বাস দেন। এক্ষেত্রে তিনি তিনটি তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেন।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানের চিফ অব টেকনিশিয়ান ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের নেতৃত্বে তৈরি করা এ তদন্ত প্রতিবেদনে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়েছে রাঘববোয়ালদের। গ্রাউন্ড সার্ভিস বিভাগের ৬ কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে মূলত নাটের গুরুদের আড়াল করা হয়েছে।

ঘটনাটি কোনো ধরনের স্যাবোটেজ ছিল কিনা, সে ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ করেনি তড়িঘড়ি করে দেয়া এ তদন্ত প্রতিবেদনে। এ ঘটনার সঙ্গে বিমানের দুই পাইলট সরাসরি সংশ্লিষ্ট থাকলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। উল্টো প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর ওই ফ্লাইটে যাওয়া সব ককপিট ক্রু ও প্রকৌশলীর ওপর থাকা উড্ডয়ন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিমান।

আজ থেকে তাদের আবারও ফ্লাইট সিডিউলের আওতায় আনা হচ্ছে বলে বিমানের সিডিউলিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর ওই ফ্লাইটে মোট ৬ পাইলট, ৪ ইঞ্জিনিয়ারসহ ২৯ জন ক্রু ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ছয়জন ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দায়িত্ব অবহেলা সংক্রান্ত অপরাধ প্রমাণিত হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইঞ্জিনের বাইরের অংশের অয়েল (লুব্রিকেন্ট) সিস্টেমের একটি নাট-বোল্ট অর্ধেক খোলা (লুজ) ছিল। ওই ঢিলা অংশ দিয়ে ইঞ্জিন থেকে লুব্রিকেন্ট বেরিয়ে যায়। পাকিস্তানের লাহোর পার হওয়ার পর পাইলটরা অয়েল প্রেসার কমে যাওয়ার সিগন্যাল পান। এরপর তারা বিমানের পরিচালক প্রকৌশল উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান ও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মোসাদ্দিক আহমেদকে জানান।

ঢাকা থেকে রাডার বার্তার মাধ্যমে তাদের দ্রুত আশপাশের কোনো বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সঙ্গে দ্রুত ত্রুটিযুক্ত ইঞ্জিন শাটডাউন করার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় ওই ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে বলে সাবধান করা হয়। তারপরও দুই পাইলট ক্যাপ্টেন এবিএম ইসমাইল ও সিনিয়র ক্যাপ্টেন এবং বিমানের চিফ অব ট্রেনিং আমিনুল ইসলাম ইঞ্জিন শাটডাউন না করে দুই ইঞ্জিন চালিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করেন।

জানা গেছে, যখন অয়েল প্রেসারের রেড সিগন্যাল দিচ্ছিল তখন বিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০ হাজার ফুট উপরে ছিল। ওই সময় বাঁ ইঞ্জিনের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তুর্কমেনিস্তানে অবতরণের ১২ থেকে ১৫ মিনিট আগে সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনায় ইঞ্জিন শাটডাউন না করলে যে কোনো মুহূর্তে আগুন ধরে যাওয়ার আশংকা থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে পাইলটের ক্লিয়ারেন্স লাগে। এই ক্লিয়ারেন্স দেয়ার আগে দুই পাইলট এয়ারক্রাফটের বাইরের অংশ ও দুই ইঞ্জিন ঘুরে ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টের গাড়িগুলো দিয়ে ইঞ্জিনের বাইরের অংশগুলোতে থাকা নাট-বোল্টগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। এ সময় কোনো ধরনের লিকেজ আছে কিনা, পাখা থেকে তেল জাতীয় কোনো দ্রব্য ঘামাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখেন। ওইদিনও ওই ফ্লাইটটি উড্ডয়নের আগে দুই পাইলট ইঞ্জিনের বাইরের অংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তারপরও তাদের চোখে নাট-বোল্টটির এই লুজ কানেকশন চোখে পড়ল না কেন তা রহস্যজনক।

জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেন ক্যাপ্টেন ইসমাইল ও আমিনুল। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণেই দুই বন্ধুকে কৌশলে রক্ষা করার জন্য তারা তড়িঘড়ি করে ৬টি নিম্নশ্রেণীর কর্মকর্তাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। অপরদিকে ঘটনার দিন বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ওই ফ্লাইটের দায়িত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বহরে থাকা বিমানের চারজন প্রকৌশলী, একাধিক সিবিএ নেতা, বিএফসিসি ও সিকিউরিটি সেকশনের একাধিক কর্মকর্তাকেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়েছে রিপোর্টে। এসব কারণে তদন্ত রিপোর্টটি নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে গোটা বিমানজুড়ে।

এদিকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রশ্ন ওঠার পর প্রধানমন্ত্রীর ফিরতি ফ্লাইটের লাইন পাইলট হিসেবে ক্যাপ্টেন খাজাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফিরতি ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন হিসেবে বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাতে তার নেতৃত্বে পাইলটদের একটি টিম প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে।