বিপিএল ফাইনাল কার-কুমিল্লা না বরিশাল? পাল্লা ভারী মাশরাফির ?
নীপা খন্দকার: বিপিএলের ক্রেজ ক্রিস গেইল, কুমার সাঙ্গাকারা, শহীদ আফ্রিদি, ড্যারেন স্যামিরা আজ কেউ নেই। বিপিএল শেষ হওয়ার আগেই দৃশ্যপট থেকে উধাও টি-টোয়েন্টির এই বিখ্যাত কুশীলবেরা। এখন শক্তি স্থানীয় ক্রিকেটাররাই। এখন প্রশ্ন উঠেছে দুই ফাইনালিস্ট এর কে জিতবে? কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস না বরিশাল বুলস? এখন প্রত্যাশা আবু হায়দার, সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মুর্তজা বা মাহমুদউল্লাহর কাছে।
ফাইনালের আগে ২৩ দিনের টুর্নামেন্টের শেষ দৃশ্যে এসে ঢাকা, চট্টগ্রামই নেই! বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেটের আলোচনায় কুমিল্লা বা বরিশালের আগে আসে এসব নাম। ঢাকা গত দুই বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন, চট্টগ্রামের আছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেট ঐতিহ্য। অথচ ফাইনালের চৌকাঠেই আসতে পারেনি তাদের কেউ। ক্রিকেটারদের চারণভূমি রাজশাহী আর খুলনা তো টুর্নামেন্টেই ছিল না।তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, বরিশাল বুলস ফাইনালে উঠেছে বলে এটা ভাবার কারণ নেই যে, দেশের অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেটে তারাই এগিয়ে।
গভীরে গেলে বরং উল্টো চিত্র বেরিয়ে আসার শঙ্কা প্রবল। বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে সাফল্য আসলে কখনোই স্থানীয় ক্রিকেটের জোর প্রকাশ করে না। বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকপক্ষেরই ওই অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। প্লেয়ার্স বাই চয়েজ ভিত্তিতে ক্রিকেটার কেনাবেচা হওয়ায় খেলোয়াড় তালিকায়ও নেই আঞ্চলিকতার আবেগ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অবশ্য প্রথমটা আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক পক্ষ কুমিল্লার। কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও সেই অঞ্চলেরই মানুষ। কুমিল্লার মানুষও দলটাকে নিয়ে আবেগের ভেলায় ভাসছে।
বরিশাল বুলসের খেলোয়াড় তালিকায় শাহরিয়ার নাফীসের উপস্থিতিও বরিশালবাসীর জন্য হতে পারে সান্ত্বনার। শাহরিয়ারও তাতে আপ্লুত। ফাইনালে বরিশালের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিতে প্রস্তুত এই বাঁহাতি, ‘বরিশালের ছেলে হয়ে বরিশাল দলে খেলাটা আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। এখানে আমার আবেগও আছে।’ শাহরিয়ারের বিশ্বাস, লিগ পর্ব এবং কোয়ালিফায়ারের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে তাদের শিরোপা জয় অসম্ভব হবে না। তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর অ্যাঙ্কেলের চোট বড় এক দুশ্চিন্তাই বটে।
কুমিল্লার জন্য এই জাতীয় ব্যাপার ডালভাত হয়ে গেছে। চোট-আঘাত নিয়েই তাদের এত দূর আসা। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তো প্রায় প্রতি ম্যাচ শেষেই সেরা দল নামাতে না পারার আফসোসে পুড়েছেন। অধিনায়ক নিজে, অলক কাপালি, শোয়েব মালিক, নুয়ান কুলাসেকারা—সবারই কোনো না কোনো সমস্যা ছিল।
তবে সমস্যা নিয়েই যখন এত দূর আসা গেছে, ফাইনালের আগে এসব আর মাথায় আনছেন না কোচ। সালাউদ্দিন বরং মাশরাফির পিঠ চাপড়ে দিলেন অসুস্থ শরীর নিয়েও দলটাকে আগলে রাখায়, ‘মাশরাফি ফিফটি করে একটা ম্যাচ জেতানোর পরই আমাদের দল পুরো ছন্দ পেয়েছে। সে ওই ইনিংসটা না খেললে দলের আত্মবিশ্বাস আসত না। ওই ইনিংসের পর থেকেই মনে হয়েছে, আমরা মাঠে নামলেই জিতব।’
মাশরাফির দর্শন ভিন্ন হবে স্বাভাবিক। সাদামাটা দল নিয়েও ফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব তিনি বিলিয়ে দিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক থেকে শুরু করে খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের মধ্যে, ‘একা কখনোই একটা দলকে বদলানো যায় না। এটা টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ, ম্যানেজার, খেলোয়াড় সবার কাছ থেকে আসতে হয়। এই কৃতিত্ব সবার। সবার কৃতিত্বেই ফাইনাল পর্যন্ত আসা।’
আর বিপিএল-রোমাঞ্চটাকে ফাইনাল পর্যন্ত ধরে রাখার কৃতিত্ব? ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অনেক রকম বাজিই হয়। তবে ফাইনাল খেলবে কুমিল্লা ও বরিশাল, বিপিএলের শুরুতে এমন বাজি বিশ্বের চতুরতম জুয়াড়ির পক্ষেও ধরা সম্ভব ছিল কি না কে জানে! শিরোপা যার হাতেই উঠুক, বিপিএলের সবচেয়ে বড় চমক উপহার দেওয়ার কৃতিত্ব দিতে হবে দুই ফাইনালিস্টকেই।