বিপিএলের জাদু দেখালো যারা-
স্পোর্টস রিপোর্টার : বিপিএলে কাল ফাইনাল। এবার বিপিএলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় নিজেদের নতুন করে চিনিয়েছেন। বোলিং ফিল্ডিং এবং অলরাউন্ডার পারফরমেন্সে নজর কেড়েছেন এরা।এদের মধ্যে অন্যতম মেহেদী মারুফ। এবার বিপিএলের ১৪ ম্যাচ শেষে ব্যাটসম্যানদের সবার ওপরেই ছিলেন মারুফ। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় এক দশক কাটিয়ে দেওয়া ঢাকা ডায়নামাইটসের এই ওপেনার বেশ চমকই দেখিয়েছেন এই টুর্নামেন্টে।
তবে শুরুটা যেভাবে হয়েছে, শেষের দিকে ছন্দটা ঠিক ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম ৫ ম্যাচে যেখানে তাঁর রান ছিল ২০৩, পরের ৮ ম্যাচে সেটি ১৩৬। তবে ১৩ ম্যাচে ৩৩৯ রান করে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন শীর্ষ পাঁচে। উড়িয়ে মারতে বেশ পারঙ্গম মারুফ। নিজেও বলেন, ‘চারের চেয়ে ছক্কা মারতেই বেশি পছন্দ করি!’ তাঁর কথা মিলে যাচ্ছে পরিসংখ্যানের, ১৩ ম্যাচে ২০ ছক্কা মেরে আছেন সবার ওপরে।
মাত্র এক ম্যাচেই আফিফ চলে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সহ-অধিনায়ক মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু নিজের বিপিএল অভিষেকেই জাদু দেখিয়েছেন বোলিংয়ে। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে রাজশাহী কিংসের হয়ে ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী অফ স্পিনার। পাঁচ শিকারের মধ্যে দ্বিতীয়টি আবার টি-টোয়েন্টির ভয়ংকরতম ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে (৫) বোল্ড করে। আফিফ অবশ্য এলিমিনেটরে চিটাগংয়ের সঙ্গে উইকেটশূন্য থেকেছেন।
কোয়ালিফায়ারে এক ওভার করে ফিরিয়েছেন ভয়ংকর মূর্তিতে ব্যাট করতে থাকা নিকোলাস পুরানকে। আর অভিষেকেই দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণেই মনে রাখতে হবে আফিফকে।বিপিএলের শুরুর দিকেও আবু জায়েদ ব্যস্ত ছিলেন কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে। ইংল্যান্ড সিরিজের পর বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ কিছুদিন কাজ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান, হোসেন আলী, আলী আহমেদের মতো কিছু আবু জায়েদসাইফউদ্দিনতরুণ পেসারদের নিয়ে।
জায়েদও ছিলেন ওয়ালশের অনুশীলন। তবে বিপিএল যত সামনে এগিয়েছে ততই তিনি অপরিহার্য উঠেছেন ঢাকা দলে। ৭ ম্যাচে ৭ উইকেট, পরিসংখ্যানটা হয়তো খুব উজ্জ্বল নয়। তবে জায়েদকে চিনতে হবে ইকোনমি দিয়ে। ৫.৪৩ ইকোনমিতে আছেন শীর্ষ পাঁচে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কাজটা দারুণভাবে করেছেন ঢাকার এই পেসার।
রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট—এই বিপিএলে তাঁর সেরা বোলিং। তবে জায়েদ নিজেও মানবেন, তাঁর সেরা বোলিং বরিশাল বুলসের বিপক্ষেই, ৪ ওভারে ১ মেডেনে ১২ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। সেদিন ম্যাচসেরা সাকিব আল হাসান বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন ‘আমি মনে করি পুরস্কারটা রাহীরই (জায়েদ) প্রাপ্য ছিল।’
নাজমুলের উদ্যাপনটা বেশ পরিচিতি পেয়েছে বিপিএলে। উইকেট পেলেই হাত দিয়ে ফণা তোলেন। তাঁর সর্প-ভঙিটা সংক্রমিত হয়েছে সতীর্থদের মধ্যেও! তবে নাজমুলের বোলিংয়ে যে আসলেই কিছু বিষ আছে, সেটি টুর্নামেন্টে দেখা গেছে। রাজশাহীর হয়ে ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ৭ উইকেট। পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁর বোলিং ধার বোঝা যাবে না। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন নিয়মিত, ইকোনমি ৫.৯৬ সেটিই বলছে।
নাজমুলের সেরা বোলিং রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ হলেও সেদিন রংপুরের ব্যাটসম্যানদের কাছে সবচেয়ে বেশি দুর্বোধ্য ছিল নাজমুলের বোলিং। রাজশাহীর বাঁহাতি স্পিনার ৪ ওভারে ৮ রান দিয়ে ১ মেডেনসহ নিয়েছেন ৩ উইকেট। কাল ফাইনালেও রাজশাহীর অন্যতম ভরসা হবেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অসাধারণ বোলিং করে উচ্চকণ্ঠেই সাইফউদ্দিন জানিয়েছিলেন আগমনী বার্তা। কিন্তু সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাঁর স্বপ্নযাত্রায় বড় ধাক্কা। অবশ্য বিসিবির ছাড়পত্র পেয়েই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে বিপিএল খেলেছেন সাইফউদ্দিন। ৯ ম্যাচে পেয়েছেন ৯ উইকেট। ২০ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার যে ‘ম্যাচ উইনার’, সেটি দেখা গেছে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে। ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন তিনি।
৯ ম্যাচে ১৪৩ রান। আহামরি কোনো ইনিংসও নেই তাঁর নামের পাশে। তবুও হাসানুজ্জামানকে রাখতে হবে এই তালিকায়। রাখতে হবে তাঁর দুটি ইনিংস দেখে।
কুমিল্লার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে ৩০ বলে ৩৭ করেছিলেন হাসানুজ্জামান, খুলনা টাইটানস পেয়েছিল ১৪৪ রানের লড়াইয়ের পুঁজি। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতেও যান তাঁরা। কদিন আগে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে খুলনা যে অনায়াসে ১৫৮ রান তাড়া করেছিল, সেটিতেও হাসানুজ্জামানের বড় অবদান।
হাসানুজ্জামান১৯ বলে ৪০ রান করে খুলনার কাজটা অনেকটা সহজ করে দিয়েছিলেন তিনি। হয়তো সামর্থ্যের শতভাগ দেখা যায়নি খুলনার এই ওপেনারের কাছ থেকে। তবে তাঁর সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।