বিনা বিচারে ১৭ বছর বন্দি শিপন
হাইকোর্ট রিপোর্টার : বিনা বিচারে ১৭ বছর কারাগারে বন্দি থাকা মো. শিপনকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ ছাড়া শিপনের জামিননামা দাখিল করতে ঢাকা লিগ্যাল এইড কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে দীর্ঘ ১৭ বছর আটক শিপনের জামিন পাওয়ার পর পুনর্বাসনের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর শিপনকে আজ আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে আদালতে হাজির করে। এ সময় আদালত শিপনকে কাঠগড়ায় ডেকে তাঁর পরিচয় জানতে চান। দীর্ঘ ১৭ বছর বিনা বিচারে আটক থাকার বিষয়েও খোঁজখবর নেন।
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে মামলাটি দীর্ঘদিন নিষ্পত্তি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত। আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের নিযুক্ত পিপি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। দীর্ঘ সময় বিনা বিচারে পড়ে থাকার বিষয়ে এখানে জজ সাহেবদের গাফিলতিও রয়েছে। কেউ দায়িত্ব পালন করছেন না।’
এরপর আদালত সেখানে উপস্থিত সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করেন। পরে শিপনকে জামিন দিয়ে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আদালত।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের দুই মহল্লার বাসিন্দাদের মধ্যে মারামারিতে এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের আত্মীয় মো. জাবেদ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মো. শিপনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়। এজাহারে তাঁর বাবার নাম ছিল অজ্ঞাত। পরে অভিযোগপত্রের সময় তাঁর বাবার নাম মো. রফিক দেওয়া হয়।
এ মামলায় ২০০০ সালে গ্রেপ্তার হন শিপন। গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২-এ আছেন তিনি। তবে কোনো অগ্রগতি নেই এই মামলার। প্রায় প্রতি মাসেই নির্ধারিত তারিখে শিপনকে আদালতে হাজির করা হলেও হাজির হন না কোনো সাক্ষী। তাই শেষ হয় না মামলার বিচারকাজও।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল শিপনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। ওই প্রতিবেদন গত ৩০ অক্টোবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে ৮ নভেম্বর শিপনকে আদালতে হাজির ও তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার নথি তলব করেন।