বিদেশে দুই নেত্রীর ঈদ…
: শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াশেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসার পর দুজনই দেশের বাইরে একসঙ্গে ঈদ করেছেন, এ রকম ঘটনা মনে পড়ে না। তাঁরা সাধারণত দেশেই ঈদ করেন দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বজনদের সঙ্গে। হজ বা অন্য কোনো উপলক্ষে একজন দেশের বাইরে থাকলেও আরেকজন দেশেই ঈদ করেছেন। এবারই ব্যতিক্রম হলো। ঈদুল আজহা তাঁরা পালন করলেন দেশের বাইরে।
নেতা-নেত্রীদের ঈদ মানেই বাড়তি আনন্দ। ক্ষমতায় থাকলে সেই আনন্দ আরও বেড়ে যায়। বিরোধী দলে থাকলে মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। প্রথা অনুযায়ী ঈদের দিনে দুই নেত্রী দলীয় নেতা-কর্মীর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী ও কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন। প্রায় একই সময়ে তাঁরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কিন্তু স্থান ভিন্ন।
গত রোজার ঈদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই কাছাকাছি। প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে। আর বিএনপির নেত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে। দুই নেত্রীর শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানটিও বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। তাঁরা দেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিপরীত অবস্থান নেন।
প্রধানমন্ত্রী হয়তো বললেন, দেশের মানুষ খুব ভালো আছে। তাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে। তাই তারা আনন্দের সঙ্গে ঈদের উৎসবে শরিক হচ্ছে। আর তখনই বিএনপি নেত্রী বলবেন, দেশের মানুষ মোটেই ভালো নেই। তারা ঈদের উৎসবে শরিক হতে পারছে না। এবারে বিদেশে থাকলেও তাঁদের বক্তৃতা বিবৃতির ভাষায় তেমন হেরফের হবে বলে মনে হয় না।
বিএনপির নেত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন, দেশের অবস্থা ভালো নয়। ঈদ পালনের পরিবেশ নেই।
এবারে দুই নেত্রী একই সঙ্গে দেশের বাইরে থাকলেও তাঁদের সফরের উদ্দেশ্য ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক গিয়েছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে। সেখানে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগ দেবেন। একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর যৌথ সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকার জন্য ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ শীর্ষক যে পুরস্কার পেয়েছেন, সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার কথা আছে।
আর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সফরে। গত বছর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর এটিই বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ। সেখানে তাঁর চিকিৎসা করানোরও কথা রয়েছে। এ ছাড়া দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ঢাকা ও নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে গিয়ে পৌঁছেছেন। সে জন্য আশা করা যায়, দলের সাংগঠনিক বিষয়েও কথাবার্তা হবে।
দুই নেত্রী দেশের বাইরে যাওয়ার আগে পরস্পরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। এ জন্য আমরাও তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তবে দুই নেত্রী একই দেশে ঈদ উদ্যাপন করছেন না। প্রধানমন্ত্রী ঈদ করলেন নিউইয়র্কে, আর বিএনপির নেত্রী ঈদ লন্ডনে। বাংলাদেশের মানুষ যখন শুক্রবার সকালে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করবেন, তার আগেই দুই নেত্রীর ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। কেননা লন্ডন ও নিউইয়র্কে তার আগেই ঈদ উদ্যাপিত হয়ে যাবে।
তবে দেশের বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী যখন বিদেশে ঈদ উদ্যাপন করবেন, তখন প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি আত্মীয়স্বজন থেকে অনেক দূরে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকবেন। তাঁরাও নিজেদের মতো করে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন বা করেছেন। তবে দুই নেত্রীর কাছে অনুরোধ, দেশের ঝগড়া বিদেশে নেবেন না। আপনাদের ঈদের শুভেচ্ছা।