বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের-কি ফাল্টুস?
এস রহমান: বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের কি তাহলে ফাল্টুস? কারন, সুইস ব্যাংক জানিয়েছে, ওই নামে সেখানে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে কথিত বিপুল পরিমাণ সম্পদের রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর দেশে যে সম্পদের তথ্য মুসা দিয়েছেন, সেগুলোর সব তাঁর দখলে নেই। ফলে তাঁর ওই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে দুদক কর্মকর্তাদের মধ্যেও।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘তিনি দুদকের কাছে বিশাল জমি-জমার হিসাব দিয়েছেন। আবার বলছেন, কোনো জায়গা তাঁর দখলে নেই। আবার বিদেশে আটক ১২ বিলিয়ন ডলারের যে তথ্য দিয়েছেন, সেখান থেকে সেই তথ্যও পাচ্ছি না। তিনিও তথ্য দিচ্ছেন না। মনে হচ্ছে তিনি যতটা না করেছেন, তার চেয়ে বেশি বলছেন।’
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে মুসা বিন শমসেরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তাঁর ১২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ছয় শ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) ‘ফ্রিজ’ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় সাত শ কোটি টাকা) অলংকার জমা রয়েছে।
গাজীপুর ও সাভারে তাঁর নামে প্রায় এক হাজার দুই শ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুসা। বর্তমান বাজার দরে এসব জমির মূল্য প্রায় এক হাজার দুই শ কোটি টাকারও বেশি। অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকায় এসব সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করে নামজারি করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মুসা।
মুসার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু চিঠির উত্তরে ব্যাংকটি জানিয়েছে, সেখানে ওই নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাই ওই ব্যক্তির নামে কোনো সম্পদও নেই। সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষের জবাব পাওয়ার পর প্রকৃত তথ্য জানতে মুসাকে আবারও দুদকে তলব করা হয়েছে। আজ সোমবার দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত তলবি নোটিশ মুসা বিন শমসের ঠিকানা বরাবর পাঠানো হয়। নোটিশে মুসাকে ১৩ জানুয়ারি সকাল দশটায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মুসা বিন শমসেরকে এর আগে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেও সুইস ব্যাংকের হিসাব নম্বর জানতে পারেনি দুদক। এবারের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য না জানালে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রদানে অসহযোগিতার অভিযোগে মামলা করা হতে পারে। এ অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। মামলার পর আইন অনুযায়ী অনুসন্ধানও চলতে থাকবে।
অনুসন্ধানে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেলে পরে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হবে। এ মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
২০১৪ সালের জুন মাসে বিজনেস এশিয়া নামের একটি সাময়িকীতে মুসাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে ওই বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ১৮ ডিসেম্বর প্রায় ৪০ জন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর বহর নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন তিনি। পরে দুদকের অনুসন্ধান দলটি মুসার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যাটকোতে গিয়ে তাঁকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেন, ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ ওই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।