বিতর্কিত এমপি লিটন অবশেষে লালঘরে-এলাকায় আনন্দ মিছিল মিষ্ঠি বিতরনের ধুম
বিশেষ প্রতিবেদক: শিশু সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলায় গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংসদ মনজুরুল ইসলামকে গাইবান্ধায় নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এই সাংসদকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ লিটনকে আজ যেকোনো সময় বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হবে।এদিকে এমপি গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।মানুষ আইনের শাসন কায়েম হয়েছে বলেও মনে করছে।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাত ১০টার দিকে উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর পর রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে নেওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে। ২৫ মিনিট পর রাত সোয়া ১১টার দিকে গাইবান্ধার উদ্দেশে লিটনকে নিয়ে রওনা হয় ডিবির একটি দল। আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গতকালই নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার অবকাশকালীন চেম্বার আদালতের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। ফলে তাকে গ্রেফতারে আইনগত বাধা দূর হয়। এরপরই রাতে গ্রেফতার হন সরকারি দলের বিতর্কিত এই এমপি। তিনি উত্তরায় এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছিলেন। গ্রেফতারের সময় ডিবির সঙ্গে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের একটি দলও ছিল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জাতিরকন্ঠকে বলেন, বুধবার রাত ১০টার দিকে এমপি লিটনকে গ্রেফতার করা হয়। রাতেই তাকে গাইবান্ধায় পাঠানো হয়েছে।ডিবির ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম জাতিরকন্ঠকে বলেন, সরকারদলীয় একজন জনপ্রতিনিধি গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ হলো, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। পুলিশ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নির্মোহভাবে পালন করেছে। আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই লিটনকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়।
গতকাল রাতে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে এমপি লিটনকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট। গাড়ির ভেতরে তিনি মাথা নিচু করে বসেছিলেন। সোয়া ১১টার দিকে প্রথমে একটি মাইক্রোবাস ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়। এর পর সাদা রঙের দ্বিতীয় মাইক্রোবাস বেরিয়ে আসে। ওই মাইক্রোবাসেই ছিলেন এমপি লিটন। পরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আরেকটি মাইক্রোবাস ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসে।
রাত ১১টার দিকে ‘সংসদ সদস্য’ লেখা স্টিকারযুক্ত গাড়িতে ডিবির কার্যালয়ে যান এমপি লিটনের একজন স্বজন। কিছু সময় ডিবি কার্যালয়ে অবস্থানের পর তিনি বেরিয়ে আসেন। এ সময় সংবাদকর্মীরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
এমপি লিটনের গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে গাইবান্ধায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এমপিকে গ্রেফতার করায় লিটনবিরোধী সমর্থকরা সরকারকে ধন্যবাদ জানায়।এমপির বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ার পরও এতদিন গ্রেফতার না করায় নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল। অনেকেই বলছিলেন, আইনপ্রণেতা হয়েও তিনি আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শিশু সৌরভকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হওয়ার পর ২ অক্টোবর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন এই এমপি। গত সোমবার হাইকোর্টে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির সময় আদালত চত্বরে তাকে দেখা যায়। যদিও পুলিশ দাবি করেছিল, এমপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর বিতর্কিত এই এমপিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন বলে জানা যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি নিম্ন আদালতকে পাশ কাটিয়ে সোমবার উচ্চ আদালতে আসেন।