বিএনপি নেতা হওয়ার চাবি এবার লন্ডনে-তদবিরে তকদির ফেরাতে ব্যস্ত নেতারা
প্রিয়া রহমান : বিএনপি নেতা হওয়ার চাবি এবার লন্ডনে ; তদবিরে তকদির ফেরাতে ব্যস্ত নেতারা । আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে লন্ডনে তারেক রহমান এবং ঢাকায় দলের চেয়ারপার্সন গুলশান অফিস সরগরম।সারাদেশ-বিদেশ থেকে পদ পদবীর জন্য লবিং তদবির চলছে। প্রভাবশালী নেতাদের বাসা-বাড়িতে ভীড়,নেয়া হচ্ছে দামি মিষ্ঠি এবং উপটৌকনও।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রিয় অফিসে ভীড়। গত ৭ বছর যেসব নেতারা দলে নিস্ক্রিয় ছিলেন তারা পদ পাওয়ার তদবিরে এখন দিন-রাত এক করে ফেলছেন। তাদের অতীতের রেকর্ড, দলের কোন কোন পদে ছিলেন, কি কি করেছেন এসব আমলনামা তুলে ধরছেন নতুন করে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদিন সাক্ষাতের জন্য লাইন ধরছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা। কেউ সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। তিনি সাক্ষাতকারীদের কথা শুনছেন। কাউকে আশ্বাস দিচ্ছেন, অধিকাংশকে বলছেন ‘দেখবো’।
বেগম জিয়া দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হওয়ায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মওকায় তাকে সালাম দেয়া সুযোগ ঘটছে অনেকের। সাক্ষাতপ্রার্থী নেতাদের কাউকে যখন বেগম জিয়া প্রশ্ন করছেন- এতোদিন নিস্ক্রিয় ছিলেন কেন? আন্দোলন সংগ্রামে খোঁজ পাওয়া যায়নি কেন? জবাবে অধিকাংশ নেতা বলছেন, মামলা-হুলিয়া আত্মগোপনে থাকার কথা। কোন কোন নেতা বেগম জিয়াকে জানাচ্ছেন- তাদেরকে দলে অতীতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। তাদেরকে উপযুক্ত পদ দিয়ে কাজের সুযোগ করে দিলে তারা কাজ করতে পারবেন।
এদিকে বিদেশ থেকে কেউ যাচ্ছেন লন্ডন কেউ আসছেন ঢাকা। বিভিন্ন দেশের প্রবাসী নেতারাও এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পদবী চান। তাদের যুক্তি- ঢাকার নেতাদের অনেকেই যখন দল ও জিয়া পরিবারের সঙ্গে বেইমানি করেছিল, প্রবাসী নেতারা তখন তার প্রতিবাদসহ প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন। কাজেই প্রবাসী নেতারাও তাদের যোগ্যতা অনুসারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ-পদবি আশা করতেই পারেন। তাদের ত্যাগ-কন্ট্রিবিউশন কম নয়। ওয়ান-ইলেভেনের’ সময়ই তা প্রমাণিত হয়েছে। কোন কোন প্রবাসী নেতা চাচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ। আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও তাদের।
তারা বলছেন, এই পদধারীরা দেশে থেকে কিছুই করেন না। ইউরোপ-আমেরিকা-যুক্তরাজ্যে যোগ্য নেতাদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ দিলে তারা ব্যাপক কাজ করতে পারবেন। দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লবিং করতে পারেন। সেই সুযোগ দেয়া উচিত। যুক্তরাস্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি ডেমোক্রেট নেতা গিয়াস আহমদ, ইউরোপ বিএনপির অন্যতম নেতা জাসাসের কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসরত বিএনপির ডাইহার্ট নেতাদের বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদটি দেয়া হলে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লবিং করার ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারেন। লবিং এর ক্ষেত্রে দলীয় পদবীর পরিচয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের এই প্রতিকূল সময়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন কেবল দলের প্রবাসে থাকা নেতারা।
এদিকে ইউরোপ-আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কমপক্ষে ১২টি দেশের শতাধিক নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে পদ পেতে লবিং করছেন। অনেক নেতাই এখন ঢাকায়। এদের বেশির ভাগেরই টার্গেট কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদটি। যুগ্ম মহাসচিবসহ অন্যান্য পদেও আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন। কমপক্ষে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যও হতে চান অনেকে। প্রবাসী কোন কোন নেতা এখন লন্ডনে আসা-যাওয়ায় আছেন। সেখান অবস্থানরত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছেন।
এদিকে দলের হাউকমান্ডের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানান, যারা নিস্ত্রিয় ছিলেন, আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখেননি এবং ইতোমধ্যে যাদের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে ওই সব নেতাদের কেউই থাকছেন না কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে। মূল পদগুলোতে সম্ভাব্যদের একটি খসড়া তালিকা পেয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। যেটি দীর্ঘদিনের নানা পর্যবেক্ষণ এবং সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে তৈরী করেছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
দলের কাউন্সিলে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে জাতীয় কাউন্সিল উদ্বোধন করবেন খালেদা জিয়া।