সম্পাদকীয় ডেস্ক.ঢাকা: সম্পূর্ণ বিনা নোটিশে বিনা মূল্যে মুঠোফোনে যোগাযোগের প্রযুক্তি ভাইবার ও ট্যাঙ্গোসহ আরও কয়েকটি অ্যাপস বন্ধ করে নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে যোগাযোগে এই সরকারি অবরোধ দুই দফা বাড়িয়ে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। যদিও সাময়িক, তবু তা জনগণের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ২০১৩ সালের জুন মাসে সৌদি আরবও এভাবে ভাইবার নামের যোগাযোগ অ্যাপস তাদের দেশে অকার্যকর করে দিয়েছিল।
গত শনিবার ভোর ছয়টা থেকে রোববার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ভাইবার ও ট্যাঙ্গো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর মোবাইল কোম্পানিসহ এই সেবা-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দেওয়া নতুন নির্দেশে এই সময়সীমা ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। দৃশ্যত, নিরাপত্তার অজুহাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কার্যত এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কোটি পরিবার, যাদের স্বজনেরা প্রবাসে অবস্থান করছেন। দেশ থেকে দেশে এবং দেশ-বিদেশের মধ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক এই মোবাইল যোগাযোগ প্রবাসীদের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ সহজ করে তুলেছিল। সরকারি এই সিদ্ধান্তে আপাতত এই সুযোগ বন্ধের অসুবিধা অসংখ্য মানুষকে ভোগ করতে হবে।
কোনো রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই কেবল নির্বাহী আদেশে মানুষের যোগাযোগকে বাধাগ্রস্ত করার দৃষ্টান্ত কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে নেই। এর আগেও ফেসবুকসহ ইন্টারনেটসেবা সাময়িকভাবে বন্ধের নজির রয়েছে, যা পাকিস্তান বা সৌদি আরবের মতো অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গেই তুলনীয়।
বিএনপি জোট অবরোধ করে জনগণের চলাচল প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে, ঘটছে নাশকতার ঘটনা, তাদের দমনে সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে বহু নিরীহ জনসাধারণও বহুভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, ভাইবার-ট্যাঙ্গো বন্ধ করে কি পেট্রলবোমায় মানুষ হত্যা থামানো গেছে? অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের আশপাশে নাশকতা হলেও কেউই ধরা পড়ে না।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন হঠকারিতাকেই পরিহাস করে বলেছিলেন, ‘দ্বার রুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?’