বিএনপি জঙ্গিবাদে উসকানি দিয়েছে বিচার হবে গণআদালতে-প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গণআদালতে’ তাদের বিচার হবে। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদের উত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী- জঙ্গিদের উসকে দিয়েছে। জনগণ তাদের বিচার করবে। গণআদালতে বিচার হবে। বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিদের স্থান হবে না। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বার্ষিকীতে মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।অভিভাবক, শিক্ষক, ধর্মগুরুসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যেন ওই পথে না যায়, সেভাবে শিক্ষা দিতে হবে। আত্মঘাতীরা ভাবছে, তারা বেহেশতে যাবে, তারা বেহেশতে যাবে না। তারা দোজখে যাবে। ইসলামে আত্মঘাতীদের কোনো স্থান দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের সূচনা করেন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১০ জানুয়ারির গুরুত্ব তুলে ধরে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। ৩৭ মিনিটের বক্তব্যে সরকারপ্রধান পঁচাত্তরপরবর্তী সরকারগুলোর সমালোচনা করেন এবং তার সরকারের নেওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। আর এরপর বাংলাদেশে ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ শুরু হয়, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ‘থেমে যায়’। পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, ‘নিজেদের আখের গোছানোই’ তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তারা কখনো জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি। কারণ তাদের দেহ এ দেশে থাকলেও মন পড়ে থাকত পাকিস্তানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের দেশকে পিছিয়ে দিল। সন্ত্রাস ও লুটপাট ছাড়া তারা কিছুই দিতে পারে নাই। উন্নয়ন কীভাবে হবে, যদি তারা লুটপাটে ব্যস্ত থাকে? চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক মিত্র করায় বিএনপির শাসনামলে দেশ পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
পিছিয়ে দেবে না কেন- বিএনপি যখন ক্ষমতায় গেল, তাদের দোসর কে? জামায়াতে ইসলামী। তারা কারা, যুদ্ধাপরাধী। ওই যুদ্ধাপরাধী হিসাবে যাদের বিচার হয়েছে, যাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে, তারাই ছিল খালেদা জিয়ার কেবিনেটের মন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানালে তারা কেন আমাদের এগিয়ে নেবে? তারা চাইল দেশকে পিছিয়ে দাও, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ‘২৫-৩০ বছর আগেই’ বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে পারত এবং দেশের মানুষ ‘সুখে-শান্তিতে জীবন-যাপন’ করতে পারত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর দেশ আবার উন্নয়নের ধারায় ফিরেছে মন্তব্য করে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিত করার উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো যারা গৃহহীন, আগামীতে তাদের ঘর করে দেব। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।আমরা যা ওয়াদা করি, তা পালন করি।
বেলা আড়াইটায় ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু করেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভাস্থলে উপস্থিত হন বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে। তার সঙ্গে সভামঞ্চে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দ সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজক্যলাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাইদ খোকন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তার এবং ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন জনসভায়।
সমাবেশ উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা পতাকা ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন। তাদের অনেকেরই গায়ে দেখা যায় সবুজ-লাল টি শার্ট, মাথায় সবুজ ক্যাপ। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে উদ্যানের চারপাশ।
এদিকে সভামঞ্চ এবং সোহরাওয়ার্দীর আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। জনসভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ মোড় থেকে মৎস্য ভবন মোড়ের দুপাশে এবং টিএসসির মোড় থেকে দোয়েল চত্বর মোড়ের দুপাশের রাস্তা বন্ধ থাকবে জানিয়ে চালকদের বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
জিপিও মোড়, প্রেসক্লাব, কাকরাইল মসজিদ মোড়, এলিফেন্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড়, দোয়েলচত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়ায় গুলিস্তান, মতিঝিল, ফাইর্মগেট, মগবাজারসহ আশপাশের সড়কগুলোতে বিকালে যানজট দেখা যায়।