বিএনপির বিক্ষোভে ড. ইউনূসকে টেনে এনে ছবি তোলার কারিশমা-
নিউইয়র্ক থেকে লিটন এরশাদ: নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভরত বিএনপি-কর্মীদের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখা যাওয়ার পর তোলপাড় আলোচনা সমালোচনা চলছে। আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে খোদ ড.ইউনূসকে নিয়েও।এদিকে বিএনপির বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার খবর ভুয়া বলে জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার।বিক্ষোভের সময় নিউ ইয়র্কে হিল্টন হোটেলের সামনে মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাসাস নেতা গোলাম ফারুক শাহীন (বাঁয়ে) এবং বিএনপি নেতা সেলিম রেজা (ডানে)। শাহীনের পেছনে তারেক রহমানের শ্যালক শরাফত হোসেন বাবুকেও (চশমা চোখে) দেখা যাচ্ছে।
প্রবাসী বিএনপি নেতাদের মাঝখানে নোবেল বিজয়ী ইউনূসের হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ করে কয়েকটি ইন্টারনেট সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, তিনি ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। গত রোববার দুপুরে নিউ ইয়র্কের হিলটন হোটেলের বলরুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।ওই সময় ‘কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশি অমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের’ ব্যানারে হোটেলের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ করছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা।প্রত্যক্ষদর্শীরা জাতিরকন্ঠকে জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ইউনূস হিলটন হোটেল থেকে বেরিয়ে আসার পর বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীন এগিয়ে গিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
বিএনপি নেতা সেলিম রেজা, তারেক রহমানের শ্যালক শরাফত হোসেন বাবুসহ আরও কয়েকজন এ সময় এগিয়ে যান। ইউনূসও হাসিমুখে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। জাসাস নেতা শাহীন তাকে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় ‘তার মত নেতৃত্ব’ প্রয়োজন, যাতে গণতন্ত্র ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা’ সম্ভব হয়।বিএনপি নেতাদের দাবি, ইউনূস বিষয়টি ‘মাথায় রাখবেন’ বলে তাদের জানিয়েছেন। কথপোকথনের সময় অনেকেই বিক্ষোভের পোস্টার, ব্যানার নিয়ে ইউনূসের সঙ্গে ছবি তোলেন। ‘ইউনূস তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’ স্লোগান শোনা যায় এ সময়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে স্লোগান দেন। জামায়াত সমর্থকদের স্লোগান ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে।সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক বলেন, “আমি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। উনি বলেছেন, ‘একটি মিটিং আছে, তাই এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম’।”ওই ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এলে সোমবার ইউনূস সেন্টার থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, বিএনপির বিক্ষোভে ড. ইউনূসের যোগ দেওয়ার খবর ‘ভুয়া’।
প্রফেসর ইউনূস ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে একটি মিটিং শেষ করে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের পাশে একটি সড়ক দিয়ে অপর একটি মিটিংয়ের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তার যাবার পথে রাস্তায় তিনি একটি প্রতিবাদ সমাবেশের ভেতর দিয়ে পার হন। তিনি না থেমেই তার গন্তব্যে পৌঁছান যেখানে একদল শ্রোতা তার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল”- এই ছিল ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য।এদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে ওই বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য এসেছে।আরিফুর রহমান লিওন লিখেছেন, “জাস্ট শেইম অন ইউ।”রাহমান হোসাইনের প্রতিক্রিয়া- “গুড নিউজ”।
আবার ইউনূস সেন্টারের অস্বীকৃতিতে কামরুল ইসলাম নামে একজন প্রশ্ন তুলেছেন, “তার মানে ইউনূস সাহেব অবৈধ সরকার সমর্থন করে, প্রতিবাদের সাথে নাই…”আমানুল হক নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ইউনূস সাহেব দিন দিন তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য নিজেই অপমানিত হচ্ছেন।রনি এম রহমান বলেছেন, ইউনূস যখন বিএনপি বা সমমনাদের সঙ্গে যান, তখন তা একটি ‘বড় ভুল’।আবার মিরাজ হোসেন মনে করেন, পুরো বিষয়টি ইউনূসের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করার চক্রান্ত’।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সঙ্গে তার টানাপোড়েনের খবর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে। অন্যদিকে বিএনপি ইউনূসের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলছে, আওয়ামী লীগ ‘অন্ধ প্রতিহিংসা’ থেকে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশিকে ‘অপমান’ করছে।
সাধারণত রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে দেখা না গেলেও গত জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিএনপির তত্ত্বাবধায়কের দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন তিনি, যার মধ্য দিয়ে ইউনূসের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হয়।১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ইউনূস ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েও পরে পিছিয়ে যান।