• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপির ‘এক নেতার এক পদ’ রীতি নিয়ে অসন্তোষ, কান্নাকাটি


প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ৩০ এপ্রিল ১৬ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৮ বার

আসমা খন্দকার  :   বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধি চালু হওয়ায় পর বিএনপিতে 0নতুন করে সমস্যা অসন্তোষ দানা বাঁধছে।অনেকেই খুশী নন এই প্রক্রিযায়।অনেকে প্রতিদিন চেয়ারপার্সনের অফিসে এসে কান্নাকাটি করছেন।

বিএনপির নবঘোষিত নির্বাহী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। এ পদে সন্তুষ্ট নন তিনি। তার ইচ্ছা চট্টগ্রাম মহানগরের শীর্ষপদ।বিএনপির গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ বিধি চালু হওয়ায় তাকে হয় কেন্দ্রীয় নতুবা মহানগরের পদ ছাড়তে হবে। তাই পদ পরিবর্তন চেয়ে তিনি ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে অনুরোধও করেছেন। এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন বেগম জিয়া। বিষয়টি দেখবেন বলে1ও তাকে জানিয়েছেন।

একই অবস্থা চট্টগ্রামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করেরও। তিনিও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকতে চান না। তারও ইচ্ছা চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার। এ নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সামনে এসে কান্নাকাটিও করেছেন।

বিব্রত হয়ে বেগম জিয়া তাকেও বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির ৪২ সদস্যের তালিকা (আংশিক) তিন ধাপে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু পদবঞ্চিতরাই নন, পদ পাওয়া নেতাদের মধ্যেও নানা অসন্তোষ বিরাজ করছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হওয়ায় অনেকেই নিষ্ক্রিয় থাকারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
2
অনেকেই কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে আগের পদেই যাওয়ার কথা বলছেন, কিংবা এলাকাভিত্তিক পদেই থাকতে চাচ্ছেন, যা নিয়ে বেগম জিয়া শুধু বিব্রতই নন, ক্ষুব্ধও। জানা যায়, পদপ্রত্যাশী শত শত নেতার আচরণেও প্রতিদিনই অস্বস্তিতে পড়ছেন বিএনপি-প্রধান। সিনিয়র নেতাদের আচরণে অবাক তিনি। গুলশান কার্যালয়ে এসেও পদের জন্য অপ্রত্যাশিত আচরণ করছেন কেউ কেউ। ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বেগম জিয়া নিজের এ বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা একাধিকবার বলেছেন।

এজন্য কমিটি নিয়ে গুলশানের বাসায় বসেই কাজ করে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবারও অফিস করেননি তিনি। প্রথম দুই দফায় কমিটি দেওয়ার সময়ও কার্যালয়ে আসেননি। দলের পদপ্রত্যাশী নেতাদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, সরকারের অপকর্মের হাত থেকে বাঁচতে হলে জনগণকে নিয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে। সে দায়িত্ব বিএনপিকেই নিতে হবে। পদের জন্য গলা না শুকিয়ে জনগণের জন্য গলা শুকান। আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নামুন।

গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ নানা কারণে ঘোষিত কমিটিতেও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। চট্টগ্রামের দায়িত্ব পাওয়া দুই নেতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দায়িত্ব পাওয়া কয়েক নেতাকে সরিয়ে অন্যত্রও নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সময় বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। জানা যায়, নির্বাহী কমিটি কত সদস্যবিশিষ্ট হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সিনিয়র কোনো নেতাই এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারছেন না। তবে বেগম জিয়া আকারে ইঙ্গিতে এ নিয়ে কোনো কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এক নেতাকে বলেছেন, যেভাবে সবাই পদ চাচ্ছে, তাতে এক হাজার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দিলেও পদবঞ্চিত থেকে যাবে। তার চেয়ে কমিটির সদস্যসংখ্যা কমানোই ভালো। ওই নেতা বলেছেন, একেবারে কম সদস্য করাও ঠিক হবে না। তবে কমিটির রূপরেখা এখনো খোলাসা করেননি বেগম জিয়া।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ঢাউস কমিটির কথা অনেকেই বলছেন। তবে আমার মনে হয় বিএনপির মূল নির্বাহী কমিটির আকার ছোটই হবে। ৩৮৬ সদস্যের কম হবে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৫টি উপকমিটির সবাই যে নির্বাহী কমিটির সদস্য হবেন তাও নয়। তা ছাড়া ‘এক নেতার এক পদ’ হওয়ায় কেন্দ্রীয় অন্তত ৯০ নেতার আগের পদ ছাড়তে হবে। সেখানেও অনেক পদ শূন্য হবে।

অবশ্য এবার গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু নতুন পদও সৃষ্টি করা হয়েছে। তার পরও সবাইকে সন্তুষ্ট করেই নির্বাহী কমিটি করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ-প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন। ঢাকার পাশাপাশি লন্ডনেও জোর তদবির করছেন নেতারা। কয়েকজন নেতা এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে তারেক রহমান বেশ সতর্ক। বেগম জিয়ার সঙ্গেও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে নিজের প্রত্যাশিত পদের কথা বলছেন। প্রভাবশালী অন্য নেতার বাসায় বাসায়ও যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। পদপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। পদের জন্য নেতাদের প্রত্যাশা থাকবেই। একে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তবে এ নিয়ে যেন অসুস্থ কোনো প্রতিযোগিতা না হয়, সেদিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে।