• শনিবার , ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপিকে ধুয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী o ভোয়ার সাক্ষাতকারে হত্যা সন্ত্রাস দুর্নীতি ফাঁস করলেন শেখ হাসিনা


প্রকাশিত: ৮:২৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২৩ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩২১ বার

কূটনৈতিক ডেস্ক : সন্ত্রাস, দুর্নীতি, হত্যার মতো যেসব অপকর্ম বিএনপি করেছে সেই তুলনায় তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি প্রশ্ন করেছেন, যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে কি ফুল দিয়ে বরণ করতে হবে? শনিবার সম্প্রচার হওয়া ভয়েস অব আমেরিকা (ভোয়া) কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপি লিখিতভাবে জানিয়েছে গত ১৪ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ ৪১ হাজার ৬৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৯২ জন। আমরা দেখছি গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মামলার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে গতি সঞ্চার হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, নির্বাচনের আগের সরকারের উদ্দেশ্য বিএনপিকে মাঠছাড়া করা। বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেওয়া। আন্দোলন দমন করা। তিনি আরও দাবি করেছেন, এই উদ্দেশ্যে দলের নেতা-কর্মীদের নামে পুরনো মামলাগুলো আবারও সচল করা হচ্ছে এবং মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

বিএনপির এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো নতুন করে কিছু করা নেই। তাদের বিরুদ্ধে মামলা কেন হয়েছিলো? একটা, তাদের দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসন্ত্রাস-সব থেকে বেশি মামলা হয়েছে অগ্নিসন্ত্রাসের জন্য। মামলা চলমান প্রক্রিয়া। কত বছর ধরে একেকটা মামলা চলছে। চলতে চলতে এ পর্যন্ত এসেছে।’

‘তারা মামলার যে হিসেব দিলো সেই হিসেবের কোনো তালিকা কী দিতে পেরেছে? আমার আরেকটা প্রশ্ন এখানে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী…আমার নিজের বিরুদ্ধেইতো এক ডজনের ওপর মামলা দিয়েছিলো খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আমরাতো কোনো মামলা দেইনি। যে কটা মামলা সবই তারই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, তারই নির্বাচিত সেনাবাহিনী প্রধান, তারই নির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদেরই দেওয়া মামলা।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই মামলাগুলোর এক এক করে রায় হয়েছে। সেগুলোতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। বিএনপির যাদের বিরুদ্ধে মামলা সেগুলো কিন্তু কেয়ারটেকারের সময়ের করা। আর তাছাড়া তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের দুর্নীতি, তাদের মানুষ হত্যা করা, নানাভাবে যে অপকর্ম করেছে, সেই সমস্ত মামলা। মামলাগুলি চলতে চলতে এক এক করে নিষ্পত্তি হচ্ছে। এখনই দ্রুত করা হচ্ছে, তাতো না। কিন্তু আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। এখনও কত মানুষ পঙ্গু হয়ে আছে। কত মানুষ স্বজনহারা হয়েছে। সেই জিয়াউর রহমান থেকে শুরু এ পর্যন্ত। লাশওতো গুম হয়ে গেছে। আপনজনরা দেখতেও পায়নি। আমিওতো পাইনি আমার বাবা-মায়ের লাশ দেখতে। এরকম বহু মানুষ আপনজন হারা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা সেই মামলাগুলো এখনও চলছে। মামলাতো থামে না। এবং তারা যে সমস্ত অপকর্ম করেছে সে তুলনায় তাদের কিছুই করা হয়নি। আমাদের একটা নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নামতে দিতো না। ঘরে যেয়ে যেয়ে মেরে আসতো। তুলে নিয়ে যেয়ে মারতো। তাদের অপারেশন ক্লিনহার্টে তারা যে কতগুলি মানুষ মেরেছে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর। তার একটারও বিচার হয়নি। অপারেশন ক্লিন হার্টে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের ইনডেমনিটি দিয়েছে বিএনপি সরকার। ১৫ আগস্ট যারা আমার বাবা-মা, ভাই-বোনকে হত্যা করেছে সেই খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করেছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মর্যাদা দিয়েছে জিয়াউর রহমান এরপর খালেদা জিয়া।’

‘এমনকি জনগণের ভোট চুরি ওই খুনিদের পার্লামেন্টেও তারা বসিয়েছিলো ৯৬ সালের ১৫-ই ফেব্রুয়ারির ইলেকশনে। খুনিদের মদদ দেওয়া এবং খুনিদের নিয়ে চলা এটাতো তাদেরই কাজ। আওয়ামী লীগ অহেতুক কারও বিরুদ্ধে মামলা করেনি। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা হবে, সাজা হবে এটাতো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এখানে বিএনপি বলে কিছু নেই। অপরাধী, অপরাধী। অপরাধী হিসেবেই তাদেরকে দেখতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, আমানউল্লাহ আমানসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলার নতুন করে সচল করা হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মামলার আবার নতুন-পুরাতন কী আছে। অপরাধী অপরাধীই। বিভিন্ন অপরাধ করেছে বিভিন্ন মামলা হয়েছে। যদি নতুন করে অপরাধ করে তাহলে নতুন করে মামলা হবে।

জনগণের সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সরকারের দায়িত্ব। পুরনো মামলা নতুন মামলা এভাবেতো… আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আদের এক হাজি সেলিম তার বিরুদ্ধেতো ২২৯টি মামলা দিয়েছিলো। আমাদের হাজার-হাজার, লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা তারা দিয়েছে। প্রত্যেকের হাজিরা দিযে দিয়ে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে হয়েছে। এখনও চলছে। হামলা মামলায়তো ওরা সবসময় অগ্রগামী। আর এরাতো অপরাধ করছে। মানুষ খুন করা গাড়ি পোড়ানো, পুলিশ হত্যা করা। নানাধরনের অপকর্মতো তারা করেছে-এটাতো অস্বীকার করতে পারবে না।’

‘এখনও তারা যেটা করে, তাদের মিছিল করতে দেওয়া হয়। তারা কী করে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিলো। বাস দাঁড়িয়ে আছে আগুন দিচ্ছে। যখন পুলিশ অ্যাকশন নেয় তখন সেই ছবি তুলে দেখায়-পুলিশ আমাদের মারছে। আগে যে আগুনটা দিলো বিএনপি বা তাদের ক্যাডারা, পুলিশের ওপর যে হামলাটা করলো সেটা তারা দেখায় না। এ ব্যাপারে সব থেকে বেশি পারদর্শী। কাজেই নতুন মামলা পুরনো মামলা বলে কথা না। যারা অপরাধী মামলা চলমান থাকবে। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। আদালত মামলা পরিচালনা করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ হয় না।’

তিনি বলেন, আর যে অপরাধী, ট্রাকে আগুন দিলো তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না? তাকে কি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা হবে? না কি বাহবা দেওয়া হবে যে, বাহ এতগুলি ট্রাক পুড়িয়েছে, এতগুলি গাড়ি পুড়িয়েছে, তাদের ফুল দিয়ে বাহবা জানানো হোক। কোনটা চাচ্ছে তারা? তারা একটা করে অপরাধ করবে আর এদিকে কেঁদে ফেলবে সেটা হয় না। তাদেরকেও আইন মেনে চলতে হবে, নিয়ম মেনে চলতে হবে।