বিআরটিএ’র এডি হাবিবের ৬ যুবতি কাজের মেয়ে রহস্য-৪ জনের আত্মহত্যার চেষ্ঠা
টিপু সুলতান : বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমানের বাসায় ৬ যুবতি ‘কাজের মেয়ে’ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ঘটনাটি ধামাচাপা থাকত যদি ওই বাসার চার যুবতি কাজের মেয়ে বিষাক্ত দ্রব্য খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্ঠা না করতেন। পরে পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা দরজা ভেঙ্গে যুবতি কাজের মেয়েদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মৌলভীবাজার থানা পুলিশ জাতিরকন্ঠকে জানায়, আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়। কিশোরীদের অসুস্থ অবস্থায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
যাহোক সরেজমিনে জানা গেছে, হাবিবের বাসায় চারজন যুবতি কাজের মেয়ে রহস্যজনক কারণে আজ আত্মহত্যার চেষ্ঠা করছিলেন।জানা গেছে, হাবিবুর রহমান বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক।তিনি টাঙ্গাইলে কর্মরত।
তবে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান থাকেন মৌলভীবাজার শহরের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের সহযোগিতার জন্য ‘ তার ৬ জন যুবতি কাজের মেয়েসহ মোট ৭জন কাজের লোক রয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন যুবতি মেয়ে ও একজন যুবক ছেলে।
এই সাতজনের মধ্যে থেকে দু’জনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার স্ত্রীসহ হাবিবুর রহমান পেশাগত কাজে ঢাকায় যান। বাকি পাঁচজনকে বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে ফ্ল্যাটেই রেখে যান। এদের মধ্যে চার কিশোরী শুক্রবার সকালে বিষাক্ত দ্রব্য খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় দরজা ভেঙ্গে মৌলভীবাজার থানা পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের উদ্ধার করে। কিশোরীদের অসুস্থ অবস্থায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে আমিনা বেগম (১৪), রুবিনা আক্তার (১৬) ও মলি রায় ১৫) নামে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার সদর থানার ওসি অকিল উদ্দিন। তাদের সকলেরই বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। অন্য একজনের নাম জানাতে পারেননি তিনি।
এ ঘটনায় আজ সকাল থেকে মৌলভীবাজার শহরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিএআরটিএ কমকর্তার এই ফ্ল্যাট নিয়েও দেখা দিয়েছে রহস্য। মৌলভীবাজার শহরের সেন্ট্রাল রোড এলাকার বিলাসবহুল আবাসন শাহ মোস্তফা গার্ডেন সিটির ৮ম তলার ‘সি’ ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে থাকেন হাবিবুর রহমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান আগে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর মৌলভীবাজার অফিসে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর বদলি হয়ে যান হবিগঞ্জ। সেখান থেকে পদোন্নোতি পেয়ে টাঙ্গাইল যান তিনি।
মৌলভীবাজার চাকরিকালীন অবস্থায় এই ফ্ল্যাট ভাড়া নেন হাবিবুর। এই ফ্ল্যাটেই থাকেন তাঁর স্ত্রী। ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে থাকতো ছয় যুবতি ও এক যুবক। চাকরির কারণে টাঙ্গাইল থাকলেও সরকারি ছুটির দিনে মৌলভীবাজার এসে নিজেদের ফ্ল্যাটেই থাকতেন হাবিবুর।
বিলাসবহুল এই এপার্টমেন্টের অন্যান্য বাসিন্দারা জানান, এই যুবক-যুবতিদের ‘কাজের লোক’ বলে পরিচয় দিতেন হাবিবুর ও তাঁর স্ত্রী। তবে একজন নারী ও দুই সন্তানকে সহযোগিতার জন্য সাতজন কাজের লোক রাখা নিয়ে পুরো এপার্টমেন্টজুড়েই রয়েছে রহস্য।
এই এপার্টমেন্টের দু’জন বাসিন্দা জানান, এই ছেলেমেয়েদের প্রায়ই ফ্ল্যাটে তালাবদ্ধ করে রেখে ঢাকা, টাঙ্গাইল চলে যেতেন হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। সন্দেহজনক আচরণের কারণে সম্প্রতি শাহ মোস্তফা গার্ডেন সিটির পক্ষ থেকে হাবিবুর রহমানকে নোটিশ দেওয়া হয় বলে এপার্টমেন্টটির ব্যবস্থাপক বাবলা ভট্টাচার্য জানান।
প্রতিবেশীরা জানান, বৃহস্পতিবার ট্রেনিংয়ের জন্য স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় যান হাবিবুর রহমান। সঙ্গে নিয়ে যান দুই কিশোরী। বাকি চার কিশোরী ও এক কিশোরকে তালাবদ্ধ করে ফ্ল্যাটে রেখে যান।
শুক্রবার সকালে এই ফ্ল্যাট থেকে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা দৌড়ে আসেন। এসময় পুলিশ ও এপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের সহেযাগিতায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে প্রতিবেশীরা দেখতে পান কিশোরীরা মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি করছে। তাদের মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে।সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ তাদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
মৌলভীবাজার সদর থানার ওসি অকিল উদ্দিন জাতিরকন্ঠকে জানান, উদ্ধারকৃত যুবতিদের প্রত্যেকের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর। তারা হারপিক জাতীয় কিছু খেয়ে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এই কিশোরীরা বাসার মালিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে বিষাক্ত দ্রব্য খাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
বিআরটিএ কর্মকর্তা ও অসুস্থদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আসলে এদের আত্মহত্যার চেষ্টার কারণ জানা যাবে।সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।