বিআইডব্লিউটি চেয়ারম্যান ‘গণবিরোধী’, প্রত্যাহার দাবি
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর তীর ইজারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও পরিবেশকর্মীরা। এছাড়া নদী রক্ষায় ব্যর্থতা ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নেয়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান শামছুদ্দোহা খন্দকারকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
রোববার রাজধানীর হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানবন্ধন ও সমাবেশে এই দাবিসহ মোট পাঁচটি দাবি উত্থাপন করা হয়।
সিটিজেনস রাইটস মুভমেন্টসহ পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক আটটি সংগঠন যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
অন্য সংগঠনগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার কল্যাণ পরিষদ, ইনিশিয়েটিভ ফর পিস (আইএফপি), গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশ (জিসিবি), পরিবেশসম্মত বাসযোগ্য ঢাকা বাস্তবায়ন পরিষদ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, পীস এবং নৌ, সড়ক ও রেলখাত রক্ষা জাতীয় কমিটি। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিটিজেনস রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুসার রেহমান।
সমাবেশে উত্থাপিত অন্য তিনটি দাবি হলো- হাইকোর্টের রায়, নদ-নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার এবং নদীবিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে নদীর তীরভূমি ইজারা প্রদানকারী বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, বিআইডব্লিউটিএর দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সচিব পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন এবং সংস্থাটির গত তিন অর্থবছরের আয়-ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটনে স্বতন্ত্র নিরীক্ষা কমিটি গঠন।
পরিবেশসম্মত বাসযোগ্য ঢাকা বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব হাজী মোহাম্মদ শহীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না, নৌ-সড়ক-রেলখাত রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আশীষ কুমার দে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান আরিফ, পীসের নির্বাহী পরিচালক ইফমা হুসেইন, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রুবেল, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফরিদ আহমেদ, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী ও গণবিরোধী কাজ করেছেন। তাই অবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় ও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার তীরভূমি ইজারা দেয়া উচ্চ আদালতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন ও সরকারি সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন।’
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানসহ এর সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ একটি সরকারি সংস্থা হয়ে কীভাবে উচ্চ আদালত ও নদীবিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে তা বোধগম্য নয়। সরকার মুখে বলবে নদ-নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে; আর সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে নদীতীর ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু ও লুটেরাদের হাতে তুলে দেবে- এই দ্বৈতনীতি পরিহার করতে হবে।’
রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না দেশের নদ-নদীর তীরভূমির ইজারা বাতিল এবং এর সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে নদ-নদী ও উন্মুক্ত জলাধারসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান সাবেক এই ছাত্র নেতা।