বাহ্, কী অপূর্ব!’ বাসর রাতে বিড়াল মারে..?
শরীফ মজুমদার: ছোট ফুফু বেশ ঝাঁঝালো গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোর কি সত্যিই কোনো প্ল্যানপ্লুন নেই?’
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেয়ালে শিকারের অপেক্ষায় থাকা একটা টিকটিকি দেখছিলাম। ফুফুর গলার ঝাঁজে শেষ পর্যন্ত কী ঘটে, তা দেখার সৌভাগ্য হলো না। তাঁর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কয়েকটা টিকটিকি মারলে কেমন হয়?’এবার রীতিমতো হুংকার ছাড়লেন তিনি, ‘থাপড়ায়ে দাঁত ফেলে দিব! আমি তোর সাথে ইয়ার্কি করছি?’
দাঁত ফেলে দেওয়ার কথায় দমে গেলাম। ফুফুর ধারণা, আমার মতো একটা ‘হ্যাবলাকে’ বউ নামক মানুষটি উঠতে-বসতে ‘বেচে খাবে’! কাজেই তেমন কিছু যাতে না হয়, তার জন্য এখনই ‘প্ল্যানপ্লুন’ করা দরকার! আমার এই ফুফু আমার দেখা দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা এবং ভয়ংকরতম নারী। আমাদের গোষ্ঠীতে অন্ত কিংবা আন্তপারিবারিক ঝুট-ঝামেলায় পরামর্শক হিসেবে তো কাজ করেনই, ধমকি-ধামকি এবং চড়-থাপড় দেওয়ার কাজগুলোও নিজে দায়িত্ব নিয়ে করেন!
খানিক বাদেই একটু সুর নরম করে বললেন, ‘বাসর রাতে বিড়াল মারার কথা যে বলেছি, গল্পটা জানিস তো? বউকে যা টাইট দেওয়ার, বাসর রাতেই দিতে হয়!’
আমি একটু হাই তোলার মতো ভঙ্গি করে বললাম, ‘এই মেয়ে তো আধুনিক যুগের। বিড়াল-টিড়াল মারলে ভয় পাবে না। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বরং খাঁচায় বন্দী বাঘ-সিংহের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়!’
এবার আর মুখে নয়, চোখের অগ্নিদৃষ্টি দিয়েই বুঝিয়ে দিলেন যে ‘থাপড়ায়ে’ আরও একবার দাঁত ফেলতে ইচ্ছুক তিনি! আমি আবারও দমে গিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে, তুমিই বলে দাও কী করতে হবে।’
‘আজ বাদে কাল বিয়ে। এখন তো আর তেমন কিছু ভেবে বের করা যাবে না। তুই বরং তোদের পোষা বিড়ালটাকেই…’
ফুফু কথা শেষ করতে পারলেন না। এতক্ষণ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকা ফুফা বলে উঠলেন, ‘তোমার মাথাটাথা খারাপ হয়েছে নাকি! কী আবোলতাবোল বকছ!’
ফুফু নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ‘হ্যাঁ, খারাপ হয়েছে তো মাথা! এখন তুমি কী করবে?’
ফুফা এমনভাবে চুপ করে গেলেন যে আমি বুঝলাম, ছোট ফুফুর মতো কারও মাথা খারাপ হলে কী করা উচিত, সেটা তাঁর জানা নেই!
ফুফু আমার দিকে তাকিয়ে কী একটা বলতে গিয়ে আবার ফুফার দিকে চেয়ে বললেন, ‘যেভাবে বসে আছে, ওভাবেই চুপ করে বসে থাকুক। কথার মধ্যে বাঁ হাত ঢোকানোর দরকার নেই!’
তারপর আমাকে হাতেকলমে শিখিয়ে-পড়িয়ে দিলেন, কীভাবে কী করতে হবে। আগে থেকেই বাসার আধপোষা কম বয়সী বিড়ালটাকে খাটের নিচে রেখে আসা হবে। বিড়াল তো আর ছোট ফুফা নয় যে চুপচাপ বসে থাকবে! তার কাজই হচ্ছে মিউ মিউ করা! আর যে-ই মিউ করবে, আমার কাজ হবে মুখে চূড়ান্ত বিরক্তির ভাব এনে ‘এইটা আবার কোত্থেকে আসল’ বলে খেল দেখানো!
আমি অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম! কিন্তু ফুফুর কথা না শুনে উপায় নেই। এই বোকা মানুষটার কথায় অন্যথা হলে বিয়েবাড়িতে লঙ্কাকাণ্ড বেধে যাবে। তা ছাড়া ব্যাপারটা দেখে নতুন বউ কেমন ভড়কে যায়, সেটাও খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল।
অবশেষে ‘আজ বাদে কালের’ সেই বাসর রাত এল।
পরিকল্পনামাফিক সবকিছুই হয়েছে। এখন ধর তক্তা মার পেরেক! কিন্তু বাসরঘরে ঢুকেই আক্কেলে বিরাট ধাক্কা লাগল। খাটের ওদিক থেকে আওয়াজ এল, ‘ফ্যানের সুইচটা অন করেন তো, গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছে!’ তাকিয়ে দেখি ঘোমটা-টোমটা ফেলে উনি আয়েশ করে বসে আছেন! এটা কেমন কথা! এত দিন কল্পনা করে আসছি, সিনেমাটিক কায়দায় গিয়ে ঘোমটা সরিয়ে থুতনি একটু ওপরে তুলে বলব, ‘বাহ্, কী অপূর্ব!’ আর এখন?
পাশে গিয়ে বসতেই রাজ্যের আলাপ জুড়ে দিল। কত কী কাহিনি! কিন্তু বিড়ালটার হয়েছেটা কী? কতক্ষণ হয়ে গেল অথচ মিউ করার নাম নেই! খানিক পর আমার অস্থিরতা দেখে চোখে কৌতুক নিয়ে বলল, ‘বিড়াল খুঁজছেন?’ আমার হাঁ করা মুখের দিকে না চেয়েই বলতে লাগল, ‘সেই তখন থেকে মিউ মিউ করছে, তাই একটা আছাড় দিয়ে দিলাম শেষ করে!’
তারপরই প্রাণখোলা হাসিতে ঘর কাঁপিয়ে, আঁচলের নিচ থেকে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকা বিড়ালটা বের করে আহ্লাদি গলায় বলল, ‘এমন বোকাও মানুষ হয়! এই গল্প তো সবারই জানা। আর ভালোবাসা ছাড়া আমাকে অন্য কোনো জিনিস দিয়ে কাবু করা যাবে না, সেটা আগেই বলে দিচ্ছি!’ ততক্ষণে আবিষ্কার করলাম অন্ধকার ঘরে তার একটা হাত আমার হাতে!
বাসর রাতে বিড়াল মারো ২য় পর্ব—
অতি ছোটবেলা থেকেই দেখিতেছি–পুরুষ যত শক্তিমানই হউক না কেন, বিবাহের পর পরই কেমন যেন পুতাইয়া যায়! সেই পুতানোর ধরন এমনই যে, যেই পুরুষ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠিয়াই নিয়মিত ব্যায়াম করিয়া শরীরের বাইসেপ- ট্রাইসেপ বাড়াইতো–আজ সেই তার বউয়ের হাত-পায়ের বাইসেপ টিপিয়া আদরে ঘুম পাড়াইয়া দেয়!! বাবা মায়ের এত কষ্টের তৈরী সুউচ্চ মেরুদন্ডের পিলার, বাসর রাতের পর থেকেই কেমন নড়বড় করিতে থাকে!!
যাহাদের মেরুদন্ডের পিলার এহেন নড়বড়ে, তার একটাই কারণ। উনারা বাসর রাতেই বিলাই মারিতে ব্যর্থ হয়েছেন! আর যারা প্রথম পনের মিনিট কাম-ক্রোধ আটকাইয়া শক্ত হাতে বিলাই মারিতে পারে, তারাই ভবিষ্যতে নিজেদের মেরুদন্ডের পিলারে সিমেন্ট লাগাইতে সমর্থ হয়।
সুতরাং, বাসর রাত শুনিয়াই শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গা না চু্লকাইয়া– আসেন দেখি কিভাবে সহজেই বিলাই মারা যায়!
পদ্ধতি ১. দুরুদুর বুকে নতুন বউ যখন আপনার পায়ে ধরে সালাম করিতে আসিবে ….. তখনি পিছাইয়া যান! গম্ভীর কন্ঠে বলেন –>”আমার পা অতি পাক। উহা স্পর্শ করিতে হইলে
তোমাকে সাবান দিয়া হাত ধুইয়া আসিতে হইবে!!” নতুন বউ আর কি বলিবে?! হাত ধুইয়া আসিয়া যখন আবার আপনার পা ধরিয়া সালাম করিবে, ততক্ষণে আপনার বিলাই মারা শেষ!
পদ্ধতি ২. নতুন বুউয়ের খোমা দেখে– ‘পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে গিয়ে দেখেছিনু তোমায়’– টাইপ ডায়লগ দিলেন- তো গেলেন! বরঞ্চ সন্দেহজনক ভাবে তাকাইয়া থাকেন। আর রহস্যময় গলায় কন –”তুমার চেহারা কেন জানি খুবই পরিচিত লাগতাছে! মনে হয় রমনায় অন্য কোন পুলার সাথে
দেখছিলাম!!” বউ যতই আত্মপক্ষ সমর্থন করুক না কেন, আপনি খালি অবিশ্বাসের হাসি হাসতে থাকেন। এহেন সন্দেহের ফলে বিলাই যে পুরাই চিকায় পরিণত হইবে- সেই ব্যাপারে নিচ্চিত থাকতে পারেন!!
পদ্ধতি ৩. বাসর ঘরে বিছানায় উঠেই অনেকে আবেগে কাইত হয়া যায়! আপনি তা না করে বরং খাটের চিপা চাপা থেকে একটা ছারপোকা খুঁজে বার করেন। এরপর হিংস্র ভাবে উহা
টিপিয়া মারিয়া বউয়ের দিকে তাকাইয়া ঠান্ডা গলায় বলেন –> “আমার নিরব শত্রুদের আমি এইভাবেই পিষে মারি!” এভাবে দেখবেন, বিলাই নিরবেই মারা পড়িবে।
পদ্ধতি ৪. বউয়ের নাক-কান দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন তো বিল্লী মারার খেলায় ডাক মারিলেন! বরঞ্চ, খুঁত বাইর করেন। আর বলদ বলদ গলায় বলিতে পারেন — >”আহা…. তোমার নাক দেখি অতিশয় লম্বা! সমস্যা নাই, আমার হাতের একাধিক রাম থাবড় খাইলেই নাক স্ব স্থানে বসে যাইবে।” — এহেন ডায়লগের পর বিল্লি আপনাতেই আত্মহত্যা করিবে বলিয়া আশা করা যায়!
পদ্ধতি ৫. আপনার কাম- ক্রোধ উত্তেজনা যদি অতি বেশী হয়- অর্থাৎ বিলাই মারার জন্য পনের মিনিটের ধৈর্য্যও যদি না থাকে …….. তাহলে আরেকটা পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখতে
পারেন। বাসর ঘরে ঢুকেই ফরাৎ করে পাঞ্জাবী ছিড়িয়া এবং কুইক পাজামা খুলিয়া বিছানায় ঝাপাইয়া পড়িয়া বউয়ের হাত ধরিয়া বলেন –“ভালোবাসা দিবি কিনা বল!?!” এহেন আকস্মিক ঘটনায় ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া বিলাই মরে যেতে পারে!
জানিনা এহেন টিপসে আপনার কাজ হইবে কি না! কারণ, আমি যে অবিবাহিত!! তবুও রিস্ক লইয়া ট্রাই লইবেন , প্রত্যাশা রইলো!!
পরিশেষে…. মেরুদন্ড সোজা করিয়া দাড়াইতে পারেন না যেসব ভাইজান; তাহাদের জন্য দু ‘লাইন–
“বউ পিছ পিছ ঘুরিছে দেখ অভাগা পুরুষ জাতি
বাসর রাতেই বিলাই মারিলে কি ছিলো এমন ক্ষতি!!”
বিঃদ্রঃ যারা বিলাই টিলাই মারিতে চান না, তারা ‘প্রেম করে বিয়ে’ করিতে পারেন। আর যারা প্রেম করতে চান কিন্তু লজ্জ্বায় পিছিয়ে যান(!), তাহারা নিচে ক্লিকান।