• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

বালাগালউলা বেকামালিহি-আজ মিলাদুন্নবী


প্রকাশিত: ২:২৯ এএম, ২ ডিসেম্বর ১৭ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৯৫ বার

স্টাফ রিপোর্টার  :  আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর একই সঙ্গে bbbজন্ম এবং মৃত্যু দিবস। আজ থেকে ১৪শ’ বছর আগে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল মানুষের মুক্তির দিশারী হিসেবে এই ধরায় আগমন করেন। তাঁর জন্মদিন ছিল আরবী হিজরী রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ। দিনটি ছিল সোমবার। তিনি যখন এই ধরায় আগমন করেন তখন পুরো আরব হেজাজ ছিল অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। মূর্খতা, দুর্নীতি, কুসংস্কার এবং পাপাচারে লিপ্ত ছিল আরবের এই উপদ্বীপের মানুষজন। মাত্র ২৩ বছরে তিনি আরব সমাজের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে একই দিনে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।

তিনি একই সঙ্গে ছিলেন মানবতার মুক্তির দূত, সর্বযুগের সর্বশেষ্ঠ মানব, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক। মুসলিম বিশ্বের কাছে তাই নবীর জন্ম এবং মৃত্যুর দিনটি একই সঙ্গে আনন্দ-বেদনার। এদিনে সমগ্র বিশ্বের মুসলমান পরম শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে তাদের প্রিয় নবীকে স্মরণ করবে। তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘বালাগালউলা বেকামালিহি, কাসাফাদদুজা বেজামালিহি, হাসানাত জামিউ খেসালিহি সাল্লুআলাইহে ওয়াআলিহি।’

এদিকে বিশ্বের অনান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য সরকারী, বেসরকারী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুসলিম উম্মার সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তি কামনা করেন। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ পত্রিকা অফিসগুলো বন্ধ থাকবে। ফলে আগামী রবিবার কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না।

আরব হেজাজের কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ। মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) বিশেষ কোন জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি। তিনি কোন বিশেষ দেশ বা অঞ্চলের জন্যও প্রেরিত হননি; তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য। তাই তো পবিত্র কোরান শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, হে নবী (সা.)!

আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা-২১ আল আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)। আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন বলেন: ‘আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সমগ্র মানবতার জন্য সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা-৩৪ আস সাবা, আয়াত: ২৮)।

মহানবী হজরত মুহম্মদকে (সা.) দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে মহাগ্রন্থ আল কোরানে কারীমে বিভিন্ন সূরা ও আয়াত নাজিল করা হয়েছে। সূরা আল বাকারার ১২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতা’আলা আরও বলেন: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে। ‘আমি আপনাকে সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।’

(সূরা-১৭ আল ইসরা/বনি ইসরাঈল, আয়াত: ১০৫ ও সূরা-২৫ আল ফুরকান, আয়াত: ৫৬)। ‘হে নবী (সা.)! নিশ্চয় আমি আপনাকে সাক্ষী, শুভ সংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা-৩৩ আল আহযাব, আয়াত: ৪৫)। ‘অবশ্যই আপনাকে আমি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সূরা-৩৫ আল ফাতির, আয়াত: ২৪)। ‘নিশ্চিতরূপেই আপনাকে আমি সাক্ষী, শুভ বার্তাবাহক ও সাবধানকারী হিসেবে পাঠিয়েছি।’ (সূরা-৪৮ আল ফাত্হ, আয়াত: ৮)।

তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন অসুন্দর, অন্যায়, অপরাধ ও মন্দ কাজের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে এবং সুন্দর, ন্যায়, পরোপকার, কল্যাণকামিতা ও সৎকাজের শুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে মঙ্গল ও কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে; যাতে মানুষ ইহজগতে চিরশান্তি, পরজগতে চিরমুক্তি, চিরকল্যাণ ও চিরমঙ্গল লাভ করতে পারে।

মহানবীর জন্মে আগেই তাঁর পিতা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। ফলে এতিম হিসেবে জন্মের ৪ বছর পর্যন্ত প্রিয় নবীকে লালন-পালন করেন দূতমাতা হালিমা। এর পর তিনি তাঁর মাতা আমেনার কাছে ফিরে আসেন। তাঁর বয়স যখন ৬ তখন মায়ের সঙ্গে মদিনা থেকে ফেরার পথে কুফা নগরীতে মা আমেনাও মৃত্যুবরণ করেন। পিতামাতা মারা যাওয়ার পর তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে বড় হন। শেষ পর্যন্ত দাদা মারা গেলে চাচা আবু তালিব নবীর কিশোর বয়সে দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি এমন এক সময় পৃথিবীতে আগমন করেন, যে সময় আরবজাহানে যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি লেগেই থাকত। গোত্রে গোত্রে মারামারি, কাটাকাটি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কন্যাশিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। আবরবিশ্ব ছিল পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। খুব ছোটকাল থেকে এসব দৃশ্য তার মনে রেখাপাত করেছিল। তিনি তখন থেকে আবর জাতির মুক্তির উপায় খুঁজতেন। ছোটবেলা থেকেই হয়রত মুহম্মদ (সা.) সত্যবাদী, বিশ্বাসী, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন। এ কারণে সব শ্রেণী, বর্ণ ও গোত্রের লোক তাঁকে বিশ্বাস করত। সবাই তাঁকে ডাকত আল আমিন বা বিশ্বাসী বলে।

তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে মানবতার কল্যাণে বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। দীর্ঘ ২৩ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং জুলুম- নির্যাতন সহ্য করে বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি ইসলামের বাণী পৌঁছে দেন। তাঁর আগমনে মানবজাতি লাভ করেছে কল্যাণময় পথের পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা, মানবিক মূল্যবোধ ও মর্যাদার গভীরতম চেতনা। কোরানের অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।

আল্লাহ্ আরও ঘোষণা করেছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে থাকে। অতএব হে ঈমানদারগণ; তোমরাও নবীর শানে দরুদ ও সালাম পেশ কর। ৬৩২ সালে ৬২ বছর বয়সে আজকের এইদিনে তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর বিদায় হজের ভাষণে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছিলেন: তোমাদের মাঝে আমি রেখে যাচ্ছি দুটি মূল্যবান জিনিস‘কোরান ও সুন্নাহ’। এ দুটিকে তোমরা যতদিন আঁকড়ে থাকবে ততদিন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।