• শনিবার , ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বার কাউন্সিলের তুঘলকি সিন্ধান্ত॥ প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্ট হচ্ছে না


প্রকাশিত: ৩:৩৩ এএম, ১২ জুন ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৬৪ বার

শফিক আজিজি : ঢাকা ১২জুন ২০১৪:

বার কাউন্সিলের তুঘলকি সিন্ধান্তের ফলে প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্ট হচ্ছে না। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আইনজীবী হিসেবে অনুশীলন (এনরোলমেন্ট) করার জন্য তালিকাভুক্ত হওয়ার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। লিখিত কোনো নোটিশ বা আদেশের মাধ্যমে নয়, মৌখিক আদেশের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফরম দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দেশে নর্থসাউথ, ব্র্যাক, নর্দানসহ মোট ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের আইন বিভাগ থেকে সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছে আরও ৩০ হাজারেরও অধিক ছাত্রছাত্র্রী। এ সব ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের হাতে। ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে হতাশা, গ্লানি আর ক্ষোভে ফুঁসছে স্নাতকধারী এ সব শিক্ষার্থী। চোখে মুখে কষ্টের ছাপ দেখা গেছে অভিভাবকদেরও।

বার কাউন্সিলের তথ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে মামলা, সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তাই সম্প্রতি তাদের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়ার পরই পরীক্ষা দিতে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু পর পর দুইবার বার কাউন্সিল থেকে চিঠি দেওয়ার পরও ইউজিসির পক্ষ হতে কোনো প্রকার জবাব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বার কাউন্সিল বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকেও কোনো প্রকার নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এ কারণে এ সব শিক্ষার্থীদের ভাগ্য এখন পুরোপুরি বার কাউন্সিলের উপর নির্ভর করছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি ইউজিসির পক্ষ থেকে বার কাউন্সিল ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা আছে- প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি/এলএলএম প্রোগ্রামে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বার কাউন্সিলে এ্যাডভোকেটশিপ তালিকাভুক্তির নিবন্ধনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) থেকে তালিকা পাঠানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তালিকা কমিশনের পক্ষে যাচাই করাও সম্ভব নয়। কারণ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা, ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রমের আওতায় আছে। সুতরাং ইউজিসি থেকে কোনো প্রকার তালিকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে বার কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

বার কাউন্সিল ও ইউজিসির পারস্পারিক সম্পর্কহীনতায় এই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কি হবে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সচিব মো. আলতাফ হোসেন জানান, কয়েকদিন পর এনরোলমেন্ট কমিটির একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। তারপর এ সব শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। এদের বিষয়ে অন্যভাবেও সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কোন সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবগুলো মনে নেই। তবে দারুল ইহসান, প্রাইম, নর্দান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, আমেরিকা বাংলাদেশ, অতীশ দীপঙ্কর ও ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি ভূমিকা পালন করছে, জানতে চাইলে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার একরামুল হক চৌধুরী বলেন, কি সমস্যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছে না, তা আমাদের জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো প্রকার নোটিশ দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনে আমরা বার কাউন্সিলে গিয়েছিলাম। বার কাউন্সিল বলেছে খুব দ্রুতই এ বিষয়ে সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারলাম তারা এখন পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিচ্ছে না।

নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম রেজিস্ট্রার আবুল হোসেন বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার কাউন্সিলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করতে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো চিঠি আমাদের দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আইন কিংবা বিধিতেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না মর্মে কোনো কিছু বলা নেই।

তিনি বলেন, আমাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি, অথচ বার কাউন্সিল ও ইউজিসি মিলে গোপনে গোপনে ভুতুড়ে নিয়ম করে আমাদের ছাত্রছাত্র্রীদের এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে দিচ্ছে না। এটা সম্ভবত অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আবুল হোসেন বলেন, আমরা বার কাউন্সিল ও ইউজিসিকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। যদি তারা এটার সমাধান না করে তাহলে আইনগতভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্নাতক পাসকৃত শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি নিয়েই প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। আমরা তা দেখেই ভর্তি হয়েছিলাম। চার বছর অনার্স করার পর এখন কেন আইনজীবী হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।

স্টামফোর্ডের নাজমুস সাকিব, রাসেল, নর্দানের আতিকুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির আব্দুস সালাম, মানিক সরকারসহ শতাধিক ছাত্রছাত্রী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বিষয়ে সুষ্ঠু প্রতিকার কামনা করেছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বার কাউন্সিলের মধ্যে চলছে একে অন্যের উপর দায় চাপানোর প্রতিযোগিতা। আর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব মৌলি আজাদ বলেন, আমি তো জানি শুধু দারুল ইহসানের আউটডোর ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানি না।

ইউজিসির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, বার কাউন্সিল থেকে একবার তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আমরা একটি চিঠি দিয়ে বলেছি, আমাদের পক্ষে এত ছাত্রছাত্রীর তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, বার কাউন্সিলে শিক্ষার্থীদের তালিকা আমাদের কমিশনের দায়িত্ব না। এ ছাড়া কমিশনের পক্ষে এত শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করাও সম্ভব নয়।

বার কাউন্সিল কমিশনের তালিকা ব্যতীত অংশগ্রহণ করতে দেবে না আর কমিশনের পক্ষে তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়, তাহলে এ সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কি হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আশা করি বার কাউন্সিল এত শিক্ষার্থীর জীবনের কথা চিন্তা করে এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে।