• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘বাবা, তুমি আইসা আমারে নিয়া যাও, ওরা আমারে মাইরা ফালাইতাছে’


প্রকাশিত: ৯:২৮ পিএম, ২২ আগস্ট ১৪ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২১৪ বার

 

lady-1স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা: 
‘বাবা, তুমি আইসা আমারে নিয়া যাও, ওরা আমারে মাইরা ফালাইতাছে’- শুক্রবার ভোর পৌনে ছয়টায় মোবাইল ফোনে এভাবেই মমতা রানী বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা নিতাই চন্দ্র পালের কাছে।

মেয়েকে বাঁচাতে ঠিক তখনই গেন্ডারিয়ার বাড়ি থেকে ছুটে যান বাবা নিতাই। কিন্তু মমতার শ্বশুরবাড়ি পুরান ঢাকার ৭১/১ শাহ সাহেব লেনের পাঁচতলার বাসায় গিয়ে মেয়ের নিথর দেহ পেলেন তিনি। এরপর ছুটে গেলেন থানায়, আর সবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ময়নাতদন্তের পর লাশ কাঁধে নিয়ে সন্ধ্যায় শ্মশানঘাটে মমতার লাশ দাহ করলেন নিতাই।
নিতাই চন্দ্র পালের অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তিনি  বলেন, ` শুক্রবার ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে মমতা আমাকে ফোন করে। এ সময় সে বলে, “বাবা আমারে ওরা মাইরা ফালাইতাছে। আমারে আইসা নিয়া যাও।”
পুলিশ জানিয়েছে, ভোরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মমতা রানী পালের লাশ দেখতে পান তাঁর স্বামী রাজন দাস। রাজন ওষুধের ব্যবসা করেন। রাজন দাসের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায়।
তবে ক্ষুব্ধ নিতাই বলেন, ‘আমার গেন্ডারিয়ার যোগীনগরের বাসা থেকে মেয়ের বাসায় যাই। দেখি খাটের ওপর মমতাকে অচেতন অবস্থায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। মেয়ের গলায় দাগ এবং রক্ত ঝরছিল। আর ওর স্বামী রাজনের পিঠে খামচির দাগ ছিল। মনে হয় আমার মেয়ে বাঁচনের চেষ্টা করছিল।’
নিতাই চন্দ্র পালের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য তাঁর মেয়ে হত্যা করা হয়েছে। ভোর সোয়া ছয়টার দিকে মমতার বাসার নিচে গেটও বন্ধ করে রাখা হয়। পরে ধাক্কা দিয়ে বাসার ভেতরে যান তিনি।
নিতাই বলেন, ‘তিন মাস আগে রাজনের সঙ্গে মমতার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের গহনা দিয়েছিলাম। কিন্তু ২২ দিন আগে আবারও রাজন টাকা চায়। কিন্তু আমি ঠাটারি বাজারে মুদি দোকানের ব্যবসা করি। তাই টাকা দিতে পারি নাই।’

সামান্য মুদি দোকানের ব্যবসা করলেও মমতাকে স্নেহ-মমতায় বড় করেছিলেন নিতাই চন্দ্র পাল। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অনার্সে ভর্তি করিয়েছিলেন মেয়েকে। দুই মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে মমতাই ছিলেন সবার ছোট। তবে যোগ্য ছেলে মনে করে তিন মাস আগে রাজনের সঙ্গে বিয়ে দেন নিতাই। তিনি বলেন, ‘আমি কি আর পাইলাম। তিন মাসের মধ্যে মেয়ের লাশ। এই সময় খালি টাকা চাইত ওর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। টাকা দিতে পারি নাই, তাই মমতারে মারত।’

হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে রাজন পুলিশকে জানান, সামান্য মনোমালিন্য হয়েছিল। ভোরে তিনি মমতাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। প্রথমে সালাউদ্দিন হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে সকাল ৭টার দিকে মমতাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
গেন্ডারিয়া থানার উপপরিদর্শক চম্পক চক্রবর্তী জানান, ধারণা করা হচ্ছে নির্যাতনে মমতার মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে। এ ঘটনায় মমতার বাবা গেন্ডারিয়া থানা একটি মামলা করেছেন। মামলার আগেই রাজনকে আটক করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্প পুলিশ ।