বাবরি মসজিদ ধ্বংসের খেসারত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী’র!!
দিল্লী মিরা নায়ার : ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের খেসারত দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী লালকৃষ্ণ আডবাণী ? ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপির সিনিয়র নেতারা এসব কথা তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১২০-বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের চার্জ গঠনের জন্য অনেক প্রমাণ রয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি পদের দৌড় থেকে সরাতেই মোদী আডবাণীকে বিপাকে ফেললেন।’’ তাঁর মতে, যে সিবিআই বাজপেয়ী জমানায় ‘ষড়যন্ত্র’-র অভিযোগ খারিজ করেছিল, এখন মোদী-রাজে তারাই তা ফিরিয়ে আনল!
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পঁচিশ বছর পরে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের চার্জ গঠন হল লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীদের বিরুদ্ধে। সঙ্গে মোদী সরকারের মন্ত্রী উমা ভারতী-সহ মোট ১২ জন। আর আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগামিকাল অযোধ্যায় পৌঁছচ্ছেন রামলালা দর্শনে।
লখনউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত আজ এই চার্জ গঠন করার আগে অভিযুক্ত সব নেতারা অবশ্য নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। আডবাণীরা আদালতে জানান, মসজিদ ধ্বংসে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই, তাঁরা বরং সেটি থামাতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালত তা মেনে নেয়নি। বরং বলেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১২০-বি ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের চার্জ গঠনের জন্য অনেক প্রমাণ রয়েছে। চার্জ গঠন হলেও যদিও আডবাণীদের গ্রেফতার করা হয়নি।
ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পেয়েছেন বিজেপির নেতারা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লখনউয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আগামী দু’বছর ধরে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলার রোজ শুনানি চলবে। রায়বরেলীর আদালতের এই সংক্রান্ত মামলাটিও লখনউয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাবাস।
অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের চার্জ গঠনের পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এ বার কি রাষ্ট্রপতি পদের দৌড় থেকে পাকাপাকি ভাবে ছিটকে গেলেন আডবাণী? আর উমা ভারতীকে কি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেবেন নরেন্দ্র মোদী? কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি পদের দৌড় থেকে সরাতেই মোদী আডবাণীকে বিপাকে ফেললেন।’’ তাঁর মতে, যে সিবিআই বাজপেয়ী জমানায় ‘ষড়যন্ত্র’-র অভিযোগ খারিজ করেছিল, এখন মোদী-রাজে তারাই তা ফিরিয়ে আনল!
ক্ষমতায় এসে ‘মাগর্দশক মন্ডল’-এর সদস্য করে আডবাণীদের কোণঠাসা করেছেন মোদী, এ বার প্রবীণদের আদালতে ছোটাচ্ছেন। যে আডবাণী, জোশীরা বিজেপিকে তিলে তিলে তৈরি করেছেন, এই বয়সে তাঁদের আদালতে ছোটানোর জন্য বিজেপির অনেকেও এখন মোদীকেই দায়ী করছেন। বাবরি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় কাটিয়ার খোলাখুলি এই অভিযোগ করেছেন।
তবে বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘আদালত চার্জ গঠন করলেই আডবাণীর রাষ্ট্রপতি হওয়া আটকে যাবে, ব্যাপারটা এমন নয়। কল্যাণ সিংহও তো অভিযুক্ত হয়ে রাজ্যপাল পদে রয়েছেন। বরং সাংবিধানিক রক্ষাকবচ মেলায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাই চলছে না!’’
আর বিজেপি যে বাবরি ধ্বংসের অভিযুক্তদের পাশেই রয়েছে, তা বোঝাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মন্তব্য, ‘‘আমাদের নেতারা নির্দোষ। আইনি প্রক্রিয়া চলুক, তাঁরা নিষ্কলঙ্ক হয়ে ফিরবেন।’’ আদালতে পৌঁছনোর আগে আজ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আগামিকাল যোগী যাচ্ছেন অযোধ্যায় রামলালা দর্শনে। কল্যাণ সিংহের পরে যোগীই উত্তরপ্রদেশের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী, যিনি অযোধ্যায় গিয়ে রামলালা দর্শন করবেন।
তবে অযোধ্যা-মামলা নিয়ে কংগ্রেস আডবাণীদের আক্রমণ না করে ঘুরপথে মোদীকেই বিঁধেছে। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু মোদী কি তাঁর মন্ত্রীকে সরাবেন?’’ কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী অবশ্য আগেই বলেছেন, রামের জন্য তিনি জেলে যেতেও রাজি। বিজেপি নেত্রী আজ দাবি করেন, অযোধ্যায় কোনও ষড়যন্ত্র করেননি তিনি। আন্দোলন করেছেন প্রকাশ্যে।
বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি অবশ্য বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্র যে সব সময়ে গোপনীয় হয়, তা নয়। প্রকাশ্যেও ষড়যন্ত্র করা যায়। তার প্রমাণ রয়েছে বলেই আদালত চার্জ গঠন করেছে।’’