‘বাঙালি তাড়ালে খবর আছে’
ডেস্ক রিপোর্টার : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইনের নামে আসাম থেকে বাঙালিদের তাড়ানোর চেষ্টা করলে ছেড়ে কথা বলব না ।এনিয়ে বিজেপি’কে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েই ক্ষান্ত হননি তৃণমূল সুপ্রিমো। নাম না করে বিজেপি নেতৃত্বকে সতর্ক করে তার পরামর্শ, আগুন নিয়ে খেলবেন না। গোটা দেশে আগুন জ্বলবে।বুধবার বীরভূমের আহমদপুরে সরকারি পরিষেবা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় মমতা বলেন, বিজেপি’কে দেখুন। এখন আসাম থেকে বাঙালি তাড়ানোয় নেমেছে।
৩০-৪০ বছর ধরে যারা রয়েছেন, এখন সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের নামে তাদের তাড়ানোর চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষকে সেখান থেকে বিতাড়নের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এই চক্রান্তের প্রতিবাদে তৃণমূল সুপ্রিমোর নির্দেশে আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে গান্ধীমূর্তির সামনে ধর্না-অবস্থানে বসবেন দলীয় সংসদ সদস্যরা।বিজেপি নেতাদের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অসমে আগুন জ্বালাবেন না। যাকে ইচ্ছা, তাকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। মমতার অভিযোগ, নাগরিকপঞ্জীতে নাম না থাকায় ইতিমধ্যেই একজন আত্মহত্যা করেছেন। আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বাঙালিরা।
দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মমতা এরপর গলার সুর চড়িয়ে বলেন, মনে রাখবেন আমাদের লোকজনকে যদি তাড়াতে শুরু করেন, তাহলে ছেড়ে কথা বলব না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অসম আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য। সেখানে গোলমাল হলে, এ রাজ্যে তার প্রভাব পড়বে। এ কী আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে! জীবন-জীবিকার তাগিদে এক রাজ্যের লোক অন্য রাজ্যে যেতে পারে, থাকতে পারে। সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে।মমতার কথায়, আসামের লোক এখানে থাকলে ঠাঁই দেব, সেভাবে ওদেরও (আসাম সরকার) বাংলার লোককে ঠাঁই দেয়া উচিত।
তার অভিযোগ, এমন বেশ কিছু কাগজপত্র দেখছি, যেখানে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের ভোটার কর্মসূত্রে আসামে রয়েছেন, তাদেরও তাড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
নাগরিকত্ব আইনের নামে আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের গায়ে বাংলাদেশি তকমা চাপিয়ে, তাদের বিতাড়নের চেষ্টা শুরু হয়েছে। ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি উলফা প্রধান পরেশ বড়ুয়ার নাম নাগরিকপঞ্জীতে থাকলেও, সমাজের বিভিন্ন স্তরের বহু বিশিষ্ট বাঙালি, সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ বরাক উপত্যকার প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাভাষীর নাম বাদ গিয়েছে তালিকা থেকে। এই বিষয়টি নিয়েই প্রতিবাদে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
এদিন বীরভূমের এই সভায় জনপরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যতটা উদারহস্ত হয়েছেন, ঠিক ততটাই খড়্গহস্ত হয়েছেন বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে। ইদানীং রাজ্য বিজেপি’র প্রথম সারির নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে রাঢ়বঙ্গের এই অংশে। সভা, সমাবেশ আর মিছিলের মতো কর্মসূচির আয়োজন করছে গেরুয়া শিবির। সেই সব সভা-সমাবেশ থেকে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে নানারকম হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আহমদপুরের সভা থেকে মমতার পাল্টা হুঁশিয়ারি— কয়েকটা নেতা জুটেছে! এখানে এসে বড় বড় কথা! কতগুলো গুন্ডা-বদমায়েশকে জুটিয়ে এনে শুধু অকথা-কুকথা। বেশি কথা বলবেন না। মানুষ বিজেপি নেতাদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, রাজনীতিতে পারছে না, উন্নয়নে পারছে না, তাই শুধু আজেবাজে কথা। যা ইচ্ছে, তাই বলছে। এরপর সুর আরো চড়িয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, জনগণের জন্য বিজেপি সরকারের কোনো অবদান নেই। অবদান নেই দলিত, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি-উপজাতি আর ছাত্র¬যুবদের প্রতি। একটাই কাজ, মানুষের ওপর অত্যাচার করা। এফআরডিআইয়ের নামে ব্যাঙ্কে সঞ্চিত সাধারণ মানুষের অর্থ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা। যখন তখন কমাচ্ছে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদের হার। আর বাড়িয়ে চলেছে রান্নার গ্যাসের দাম।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আমরা রামকে ভালোবাসি, কিন্তু চওড়া কাঁধের রাবণকে নয়। কারণ রাবণ ছিল অত্যাচারী!