রমনার বটমূলে ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল, ১৪০৮ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০ জন নিহত ও অনেকে আহত হন। এরপরও রমনার বটমূলে থেমে যায়নি ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব, প্রতিবছরই এই উৎসবের ব্যাপ্তি বেড়েছে। এখন সেই রমনার বটমূল পেরিয়ে পুরো রাজধানীজুড়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শুধু তাই নয়, সারা দেশে একই সময়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আয়োজন করা হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের।
বটমূলে ছায়ানট
রমনার বটমূলে শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সেদিন সকাল থেকেই শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকনির্দেশনা মেনে দলে দলে মানুষ গিয়ে জমায়েত হন রমনার বটমূলে।
মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রাধান্য দেওয়া হয় ছায়ানটের এই সাংস্কৃতিক আয়োজনে। এবারে ‘শান্তি, মানবতা, মানুষের অধিকার’ শিরোনামের এবারে আয়োজন করা হবে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর প্রভাত অম্বর মাঝে’ এই রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে শুরু হবে এবারের ছায়ানটের আয়োজন।
বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় যোগ দিতে এই দিন সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও ‘ছবির হাট’ এলাকা হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। হাজারো মানুষ, গান, ঢাকঢোল আর বাঁশির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারুকলা চত্বর। এর সঙ্গে থাকে সমকালীন ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি প্রধান প্রতীক। চারুকলার নবীন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা মাস খানেক ধরে এসব প্রতীক ও সাজসরঞ্জাম তৈরি করেন। এখানে শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি, চিত্রিত সরা, মুখোশ, কাগজের পাখিসহ বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রি করা হয় সুলভ মূল্যে। আর এই অর্থ দিয়েই মঙ্গল শোভাযাত্রার অর্থের জোগান দেওয়া হয়।
এবারও পয়লা বৈশাখে পথে নামবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। জানা গেছে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে বর্ষবরণ আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’।
প্রধান প্রতীক ছাড়াও বড় আকারের প্রতীকের মধ্যে থাকবে কাকাতুয়া, ময়ূর, বাঘ, হাতি, ঘোড়া ও ছাগল। আর থাকবে বিশাল আকারের এক মাছ। এ ছাড়া মাঝারি ও ছোট আকারের মুখোশ ও পাখি। রূপসী বাংলা হোটেল, মৎস্য ভবন ও দোয়েল চত্বর ঘুরে আসবে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামের চলমান এই রঙের মেলা।
বকুলতলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে পয়লা বৈশাখের আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তির সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় বর্ষবরণের নানা আয়োজন।
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে পয়লা বৈশাখের আগের দিন থেকেই শুরু হয় আয়োজন। পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সুরের ধারার সহস্র শিল্পী সুরে সুরে মেতে উঠবেন সেদিন। চ্যানেল আই ও সুরের ধারা যৌথভাবে এই আয়োজন করে। রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে আসা হাজারো শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সূর্য ওঠার পরপরই গেয়ে উঠবেন গান।
রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জানান, গতবারের মতো এবারও সারা দেশ থেকে হাজারো শিল্পী ঢাকায় চলে এসেছেন। তাঁদের পাশাপাশি দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরাও অংশ নেবেন এই আয়োজনে। সুরের ধারার শিল্পীদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত, দেশাত্মবোধক ও লোকসংগীত পরিবেশন করবেন। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গান দিয়ে শুরু হবে এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
শাহবাগে শিশুপার্কের সামনে সকাল থেকেই পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজন করে ঋষিজ শিল্পগোষ্ঠী। নতুন বছরকে বরণ ও পুরোনোকে বিদায় করতে সকাল থেকেই তারা মেতে ওঠেন গানে।
ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে পয়লা বৈশাখের দিন খুব সকাল থেকেই গানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছরই এই আয়োজন করা হয়। বিকেলেও থাকে বৈশাখী কনসার্টের আয়োজন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা অংশ নেন এই আয়োজনে।
কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে আয়োজন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখী উৎসব। সন্ধ্যার পর থাকে বৈশাখী কনসার্ট। এ ছাড়া মিরপুর, বনানী সোসাইটি মাঠসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাকির হোসেন রোড মাঠে প্রতিবছর বৈশাখী মেলা ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এবারও আয়োজন করা হয়েছে মেলা ও কনসার্টের।
এ ছাড়া রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে আয়োজন করে বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা শোভাযাত্রাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। মঞ্চস্থ করেন বিভিন্ন নাটিকা।