বাইরের কেউ যাতে গণমাধ্যমের কাজে হস্তক্ষেপ করতে না-রাষ্ট্রপতি
বিশেষ প্রতিবেদক : বাইরের কেউ যাতে গণমাধ্যমের কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।সমালোচনা যাতে ‘একপেশে’ না হয়ে গঠনমূলক হয়, সে বিষয়েও তিনি সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ এর ২৫ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি বলেন, “সেলফ সেন্সরশিপকে কাজে লাগাতে হবে। বাইরের কেউ যাতে গণমাধ্যমের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।”
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা হস্তক্ষেপে গঠিত ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়।
সে সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির খবর’ সরবরাহ করেছিল বলে দুদিন আগে এক টেলিভিশন আলোচনায় জানান ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। যাচাই না করেই তা প্রকাশ করা বিরাট ভুল ছিল বলেও তিনি স্বীকার করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতেও গণমাধ্যমকে কাজ করতে হবে।“সকল গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে জাতির উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে তারা আরও তৎপর হবে।”
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছে তা করা বা যথেচ্ছাচার নয়। একজনের স্বাধীনতার জন্য অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি। তাই দায়িত্ব পালনকালে আপনাদেরকে সচেতন হতে হবে।”
তিনি বলেন, সংবাদপত্রে সরকার, এমনকি রাষ্ট্রপতির সমালোচনা করতেও বাধা নেই। কিন্তু তা যেন তথ্যভিত্তিক হয়।
“কোনোভাবেই যেন একপেশে না হয়। গঠনমূলক সমালোচনা সরকার পরিচালনা ও জাতিগঠনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
ধর্মের অপব্যবহার রোধেও সংবাদ মাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ যাতে অশুভ কিছু করতে না পারে সে ব্যাপারেও গণমাধ্যমকে ভূমিকা নিতে হবে। সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে এবং প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীনভাবে পালিত হয়।“আমরা কখনোই এ ঐতিহ্য রক্ষায় কোনো ছাড় দিতে পারি না।”
বাংলাদেশের উন্নয়নের ‘অগ্রযাত্রা’ এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “উন্নয়নের এ যাত্রাকে আরও এগিয়ে নিতে আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎ সাহসই পারে একজন সাংবাদিককে পেশাগত উৎকর্ষের শীর্ষে নিয়ে যেতে।”
ডেইলি স্টারের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে ২৪ জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়।নব্বইয়ের দশকে সাংবাদিক এস এম আলীর উদ্যোগে ডেইলি স্টার প্রকাশিত হয়। মিডিয়া ওয়ার্ল্ড কোম্পানি গঠন করে এই দৈনিকটি প্রকাশে তার সঙ্গে বিনিয়োগ করেন ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমান ও র্যাংগস গ্রুপের আব্দুর রউফ চৌধুরী। এস এম আলীর মৃত্যুর পর সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন মাহফুজ আনাম।
মিডিয়া ওয়ার্ল্ডের চেয়ারপারসন রোকেয়া আফজাল রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার, থাইল্যান্ডের দ্য নেশন মাল্টিমিডিয়া গ্রুপের সম্পাদনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের প্রধান উপদেষ্টা সুথিচাই সাই ইয়ুন, ভারতের দ্য হিন্দু গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান এন রাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।