• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলা ভাইয়ের চেলাদের আত্মঘাতি বোমায় নিহত-১


প্রকাশিত: ১২:৪৬ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ১৫ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৫ বার

babgla viরাজশাহী  জেলা প্রতিনিধি:  রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি মসজিদে বিন্ফোরণে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে উপজেলার মচমইল গ্রামের সৈয়দপুর বকপাড়া আহমদিয়া মুসলিম জামা’ত মসজিদের এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ থেকে ১২ জন।ওই মসজিদে আহমদিয়া bbbbbbbbbbbসম্প্রদায়ের লোকজন নামাজ পড়েন বলে জানা গেছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জুমার নামাজের সময় ওই মসজিদে এক ব্যক্তির কাছে থাকা বোমা বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।

মসজিদ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিটের দিকে বোমাটি বিস্ফোরণ হয়। এতে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার পরিচয় জানা যায়নি।মসজিদের মুয়াজ্জিন গোলাম মোস্তফা জানান, হামলাকারী নামাজ শুরুর আগেই মসজিদে প্রবেশ করে সামনের সারিতে অবস্থান নেয়। নামাজ প্রথম রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাত শুরুর পরই বোমাটি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে মুসুল্লিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হামলাকারী আহত হয়ে ছটফট করতে থাকেন। এসময় তার সহযোগি আরো দুজন মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে ১০ থেকে১২ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, মচমইল সৈয়দপুর চকপাড়া আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ওই মসজিদে দুপুর দেড়টার দিকে জুমার নামাজ শুরুর পর দ্বিতীয় রাকাতে এক যুবক পোশাকের নিচ থেকে বোমা বের করে বিস্ফোরণ ঘটান। এর পরপরই জিন্স পরা দুই যুবক মসজিদ থেকে বের হয়ে গেছে।

ওসি মতিয়ার রহমান জানান, বিস্ফোরণে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের মধ্যে ময়েজ উদ্দিন, সায়েব আলী এবং নয়ন নামে ১২ বছর বয়সী এক বালককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনই ওই মসজিদে নামাজ পড়েন। বিস্ফোরণের পর পুলিশ মসজিদটি ঘিরে রেখেছে।

নামাজ পড়তে আসা কয়েকজনের বরাত দিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি এম এম সাইফুল ইসলাম বলেন, মসজিদে ৫০/৬০ জনের মতো নামাজি ছিলেন। তাদের মধ্যে জিন্স পরা দুই যুবক বিস্ফোরণের পর দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। নামাজ পড়তে আসা বৃদ্ধ গোলাম উদ্দিন বলেন,১টা ৩৫ মিনিটে খোতবার পর নামাজ শুরু হয়। প্রথম রাকাত শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় রাকাত শুরু হলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।

ঘটনার পর রাজশাহী থেকে আসা আহামদিয়া সম্প্রদায়ের নেতা সেলিম আহমেদ বলেন, তাদের উপর হামলার ব্যাপারে পুলিশ আগেই তাদের সতর্ক করেছিল।রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদসহ  পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ রাতে সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিসহ অন্য হামলাকারীদের পরিচয় বের করার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত করা ছাড়া কিছু বলা যাবে না।

কারা এ হামলা চালিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ২০০৩-০৪ সালে এই বাগমারা এলাকাতেই জেএমবির শুরা কমিটির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি নামে একটি জঙ্গি দল সক্রিয় হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা এবং দিনাজপুরে মন্দিরে হামলা ও ইতালীয় পাদ্রী হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন ঘটনায় জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে ঢুকে নামাজরতদের ওপর গুলি চালানো হলে মুয়াজ্জিন নিহত এবং তিনজন আহত হন।
তার একমাস আগে গত ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে বোমা হামলায় দুইজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন।

এরপর ১০ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার দারুস সালামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বাণী ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা ভাই নামে একজন নিহত হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিহত ওই যুবক ছিলেন জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান।

মাহফুজের আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ ছিল এবং তিনি হোসাইনী দালানে বোমা হামলায় ‘সরাসরি’ অংশ নিয়েছিলেন বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তবে কারা ওই হামলা চালিয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে উগ্রপন্থি হামলার শিকার হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এরকম বহু হামলার ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। ২০১৩ সালে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও আহমদিয়াদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি তোলে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হামলাকারীর পরিচয় জানা যায়নি। তাকে সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।এর আগে গত শুক্রবার চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির সুরক্ষিত এলাকায় জুমার নামাজের সময় মসজিদে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।