বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন পর্ব—
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিচিত্র সব বিনোদনে ভরে ওঠে এই ঢাকা নগর। ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপন শুরু হয় রাত ১২টার পর। আর বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন শুরু হয় সূর্য ওঠার পর। তবে বাংলা নববর্ষের মূল আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে।
চৈত্র মাসের শেষ বিকেল থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুরসহ নানা এলাকায় চলে চৈত্রসংক্রান্তির উৎসব। এখন আর চৈত্রপর্ব বা চরকপূজা হয় না। শুধু নামেই চরকপূজা টিকে আছে। তবে এখানে এখন নীল পূজা হয়। নীল হচ্ছে মহাদেবের আরেক নাম। বেলা তিনটার সময় প্রদীপ জ্বালানো হয়। সন্ধ্যাবেলায় সেসব প্রদীপ কলাপাতার ভেলায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
এদিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা পালন করে ভাইছাতু অনুষ্ঠান। বের হয় কালী ও শিব-গৌরীর সং। তারা ঢাকের তালে নাচ-গান করে বকশিশ নেয়। এ আয়োজনটি এলাকার বর্ষবরণে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। তাছাড়া নববর্ষের দিন গণেশপূজাসহ নানা রকম আয়োজন চলে। বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে হালখাতা, পুরোনো খাতা বদলে নতুন খাতায় নতুন বছরের ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু। এদিন দোকানে বিকিকিনি হয় না। পানাহার, আনন্দ আর অভ্যর্থনায় দিন কেটে যায়।
মেলা ছাড়া বাংলা নববর্ষ কল্পনাই করা যায় না। একসময় ঢাকার সবচেয়ে বড় মেলার আসর বসত ফরিদাবাদ, ধূপখোলার মাঠ আর শ্যামপুরে। এখনো এসব এলাকায় আগের মতোই মেলা বসে। ঢাকার স্বামীবাগের কাছে লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম এলাকায়ও বসে বিশাল মেলা। গেন্ডারিয়া এলাকার ধূপখোলা ময়দানের মেলা একসময় খুব নামডাক ছিল। ধূপখোলা এখন কেবল নামেই আছে। তবে পুরোনো ঐতিহ্য ধরে এখানে মেলা বসে প্রতিবছর। একই কথা খাটে ধোলাইখালের বেলায়। এখানকার মেলার আদিরূপ, সেই জৌলুশ এখন আর নেই। তবে প্রাচীন রীতি মেনে এখনো ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতিবছর আয়োজন হয় পূজাপর্বের পাশাপাশি বর্ষবরণ মেলা।
বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ মানেই হলো চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি শুরু হয় সকাল নয়টার মধ্যে। আর ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয় বছরের নতুন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। দিনব্যাপী পুরো রমনা উদ্যান, শাহবাগ আর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলে আরও নানা আয়োজন। আর বাংলা একাডেমীতে এদিন শুরু হয় মাসব্যাপী বৈশাখী মেলা।
ঢাকার ধানমন্ডিতে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চকে ঘিরেই এখন আমাদের অনেক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। বাংলা নববর্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চসহ পুরো ধানমন্ডি লেক তথা ধানমন্ডি এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। এখানেও দিনভর চলে নানান অনুষ্ঠান আর মেলা। অন্যদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বনানী মাঠে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠান ও মেলা আমাদের নববর্ষ উদ্যাপনে নতুন সংযোজন। এভাবেই শহরজুড়ে নানা আয়োজনে কেটে যায় বাংলা বছরের প্রথম দিনটি।