বাংলার পাঠান মাশরাফির মন্ত্রে বদলে গেছে বাংলাদেশ
নীপা খন্দকার : বাংলার পাঠান মাশরাফির মন্ত্রে বদলে গেছে বাংলাদেশ দলের চেহারা। টি২০ ক্রিকেট মানে তো তা-ই_ মারমার-কাটকাট ব্যাটিং! শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠের নেটে সেটাই যেন প্রদর্শন করলেন ব্যাটসম্যানরা। যিনিই নামছেন, তার ব্যাটই হয়ে উঠছে একটা আস্ত ‘তলোয়ার’! উৎসুক কোনো সমর্থক এ অনুশীলন দেখলে হয়তো সাক্ষাৎ দেশি ভাষায় বলেই বসতেন_ ‘সাবাস, ধুমধাড়াক্কা মাইর ছাড়া কোনো কথা হবে না!’
পরশু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচের টি২০ সিরিজের দল ঘোষণা হয়ে গেছে। সে হিসেবে গতকাল ছিল নতুন স্কোয়াডের প্রথম অনুশীলন।এ সিরিজটাকে আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। যে কারণে শেষ দুই ম্যাচে স্কোয়াডে বেশ কিছু পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে। তাই মূল স্কোয়াড শুধু নয়, প্রাথমিক দলে থাকা ক্রিকেটাররাও অনুশীলন করলেন সমানতালে। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রে ওই ১৪ জনই!
যদিও তামিম ইকবাল গতকাল ছিলেন না।
আর বিদেশে থাকায় এখনও যোগ দেননি সাকিব আল হাসান। অবশ্য প্রথম দুই ম্যাচে সাকিব থাকবেন কি-না সেটা নিয়ে এখনও দোলাচল আছে! স্কোয়াডে যারাই থাকুন, আকর্ষণের কেন্দ্রটা কিন্তু বেশি কেন্দ্রীভূত হলো যারা নতুন কিংবা দলে নিয়মিত নন তাদের দিকে।
এই যেমন : দুই অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস ও শুভাগত হোম এবং দুই নবাগত আবু হায়দার রনি ও নুরুল হাসান সোহান_ তারা কিছুটা বাড়তি মনোযোগ তো দাবি করতেই পারেন।
এ তালিকাতেই থাকলেন বিপিএলে নিজেদের মান অনুযায়ী সেভাবে মেলে ধরতে না পারা দুই প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান_ সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস।
সৌম্য অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে এত খারাপ খেলেননি যে, জাতীয় দলে জায়গা পাবেন না, তবে ধারাবাহিকতার অভাবে প্রথম দুই ম্যাচে নেই লিটন। অবশ্য ‘এলকেডি’ শেষ দুই ম্যাচে নিজেকে প্রমাণের একটা সুযোগ সম্ভবত পাবেন। একই অবস্থা অভিজ্ঞ নাসির হোসেনেরও। যদিও গতকাল একাডেমি মাঠে অনুশীলন-পোশাক না পরেই হাজিরা দিতে এসেছিলেন এ অলরাউন্ডার।
স্কোয়াডটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই কিছুটা নির্ভার থেকে অনুশীলন করতে পারলেন ডাক পাওয়া ‘অনিশ্চিত’ ও অনভিজ্ঞ চারজন। ইমরুলের সুযোগ পাওয়াটা অবশ্য একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে যে পারফরম্যান্স এ ওপেনারের, তাতে ডাক না পাওয়াটাই হতো বিস্ময়কর।
টেস্টের ‘বিশেষজ্ঞ ওপেনার’ যে টি২০ ক্রিকেটটাও ভালো খেলতে পারেন, সেটা বিপিএলে প্রমাণের পর এবার জাতীয় দলের জার্সিতেও দেখানোর সুযোগ তার সামনে। ভালো ফর্মে আছেন। আত্মবিশ্বাসও আছে। একই কথা সত্য তার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সতীর্থ শুভাগত হোমের ব্যাপারেও। গতকালকের অনুশীলনে সেটারই কিছু ঝলক দেখালেন তারা। ব্যাটে বল লাগছে_ ইচ্ছামতো শট খেলতে সমস্যা কী!
মিরপুরের একাডেমি মাঠটাকে তিন ভাগ করে চলছে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন। পূর্ব দিকের নেটে বোলিং মেশিনে ব্যাটিং। সেন্টার উইকেটের নেট ও পশ্চিম দিকের নেটে বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিং। সেন্টার উইকেটেই চলল মারমার কাটকাট ব্যাটিংয়ের আসল কার্যকারিতা দেখানোর প্রদর্শনী।
তাতে অধিনায়ক মাশরাফি থেকে শুরু করে তরুণ রনি, সবাই ইচ্ছামতো হাত খুলে চার-ছয়ের পসরা সাজালেন। সেটা এমনই যে, প্রায় সময়ই বল একাডেমির মাঠ থেকে উড়ে গিয়ে মূল স্টেডিয়ামের বাইরের চত্বরে চলে যাচ্ছিল! রনি যেভাবে ব্যাট চালালেন, তাতে ফায়দাটা নিতে পারলে ভালো একজন বোলিং-অলরাউন্ডার বাংলাদেশ পেতেই পারে!
সকালে অবশ্য অনুশীলন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটল একটা দুর্ঘটনা। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের নেটে প্রবেশ করা নুরুল হাসান সোহান ব্যাট করছিলেন বোলিং মেশিনে। মেশিনে যিনি বল সরবরাহ করছিলেন, একাডেমি মাঠের সেই কর্মচারীর মাথার পেছন অংশে লাগল সোহানের সজোরে উঁচু করে মারা একটা স্ট্রেইট ড্রাইভ। সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে গেলেন তিনি। অনতিবিলম্বে পাঠিয়ে দেওয়া হলো অ্যাপোলো হাসপাতালে।
সেখানে প্রথমে তাকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। অবশ্য দুপুর নাগাদ তিনি আশঙ্কামুক্ত হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সোহানও।শুরুর দিকের এ দুর্ঘটনাটা বাদ দিলে দিনটা কিন্তু বেশ ধুমধাড়াক্কায় কাটালেন ব্যাটসম্যানরা!