বাংলাদেশে হামলে পড়তে আইএস স্বীকারোক্তির চেষ্টা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন আইএস আছে এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক মহল। বাংলাদেশের ওপর যেন হামলে পড়তে পারে সে কারণে এ ধরনের চেষ্টা হচ্ছে।দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃত্রিমভাবে ‘জঙ্গিবাদ ও আইএস সৃষ্টির’ চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।সদ্য সমাপ্ত নেদারল্যান্ডস সফর নিয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার নেদারল্যান্ডস সফরের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই শান্তিপ্রিয়। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এখানে জঙ্গিবাদ, আইএস আর্টিফিসিয়ালভাবে ক্রিয়েট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে— একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে সিরিয়া, মিসর, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বানানোর জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় ষড়যন্ত্রও আছে। বাংলাদেশকে কোনোভাবে যদি অনিরাপদ করা যায়; জঙ্গি আছে, আইএস আছে এটা যদি স্বীকার করানো যায় তাহলে বাংলাদেশে হামলা করা যায়, এ পরিকল্পনা কিন্তু অনেকেরই আছে।’
এ বিষয়ে দেশের মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। আমরা চাই না এদেশ অস্থির ভূখণ্ড হোক।’সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে বা যারাই এসব করছে, আমরা দেখছি তারা একটি বিশেষ দলের লোক। হয় তারা ছাত্রজীবনে শিবির করছে অথবা বিএনপি করছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এখন বিদেশি হত্যা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। যারা এটা করছেন তারা কি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছেন?
আজ দেশে যখন উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষ খেয়ে পরে ভালো আছে, প্রত্যেকের উপার্জন বাড়ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, আজ ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে, যখন মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশকে অনিরাপদ বলে একটি আওয়াজ তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে।’প্রসঙ্গত, তিন দিনের সফরে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসে যান। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের আমন্ত্রণে তিনি এই সফরে যান।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে ডাচ রাজধানীতে আমস্টারডাম শিফোল এয়ারপোর্ট সেন্টারে পৌঁছায়। সেখানে অভ্যর্থনা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রায় নেদারল্যান্ডসের প্রশাসনিক রাজধানী হেগ নগরীতে গ্র্যান্ড হোটেল আমরাথ কুরহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি এখানেই অবস্থান করেন।নেদারল্যান্ডসে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
ফলপ্রসূ আলোচনার পর বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস শিক্ষা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের জন্য বদ্বীপ এলাকা নিরাপদ ও উৎপাদনশীল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সম্মত হয়।
শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসের রাণী ম্যাক্সিমার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। রাণী অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের দেওয়া নৈশভোজ সভায় যোগ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী একটি ব্যবসা-সংক্রান্ত সেমিনারে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।নেদারল্যান্ডসে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে গত শুক্রবার বিকেলে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।