বাংলাদেশে মতপ্রকাশ সংকটজনক
আর্টিকেল নাইনটিনের বৈশ্বিক রিপোর্ট-
স্টাফ রিপোর্টার : বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান সংকটজনক শ্রেণিতে রয়েছে। ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম, যা ২০২২ সালে ছিল ১৩০তম অবস্থানে। এছাড়া স্কোর অনুযায়ী মাত্র ১২, এটি ২০১৮ থেকে ১১ ও ১২-এর মধ্যে আটকে আছে। দুই যুগে এই স্কোর কমেছে ৩২ পয়েন্ট।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের পরেই। একইভাবে ভারতের অবস্থানও সংকটজনক শ্রেণিতে রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের বৈশ্বিক মতপ্রকাশ রিপোর্টে এই অবস্থান উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক মতপ্রকাশ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিজিওনাল ডিরেক্টর শেখ মনজুর-ই-আলম। প্রতিবেদনে সংকটজনক, অতি বাধাগ্রস্ত, বাধাগ্রস্ত, স্বল্প বাধাগ্রস্ত ও মুক্ত, এই পাঁচটি শ্রেণিতে ১৬১টি দেশকে ভাগ করা হয়েছে। মোট ২৫টি সূচক ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিমাপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫টি সূচকের মধ্যে সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্কোর সম্পূর্ণ ঋণাত্মক। ২০০৯ সাল থেকে ৮টি সূচকেই ক্রমাগত খারাপ করে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেন্সরশিপে। ধর্ম পালন ও নারী-পুরুষের আলোচনার স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক। এছাড়া সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও একাডেমিক-সাংস্কৃতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্কোরে। ২০১৮-২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর আটকে আছে ১১ ও ১২-এর মধ্যে। যা দশ বছরে কমেছে ৮ পয়েন্ট। ২ যুগে এই স্কোর কমেছে ৩২ পয়েন্ট। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৪।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যা থেকে মুক্ত থাকার সূচকটি বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমে স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তিনটি সূচকই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় আছে সাংবাদিকদের হয়রানিমুক্ত পরিবেশে কাজ করার স্বাধীনতায়। এছাড়া আইনের ক্ষেত্রে মানহানির মামলা দিয়ে হয়রানির সূচকের স্কোর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান।
এ সময় ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের জন্য ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। গ্রহণ করার সংস্কৃতি দেশে গড়ে ওঠেনি। ক্ষমতার রাজনীতির হাতে মতপ্রকাশ জিম্মি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নজরদারি ও সভা-সমাবেশ করার অধিকারের দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে। আইন করা হচ্ছে নিবর্তনমূলক, ব্যক্তির পরিচয়ভেদে ভালো আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে।
সোহরাব হোসেন বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হলে মানবাধিকার থাকতে হবে, মানবাধিকার থাকতে হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। সরকার জনগণকে ভয় পেলে সেটি বিপজ্জনক। সরকার জনগণকে ভয় পেলে তারা নানাভাবে আইন দিয়ে সেটা মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে। সেটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চেয়ে কিছুটা নমনীয়। কিন্তু ভয়ের সংস্কৃতি রয়েই গেছে। যতদিন এই ভয়ের সংস্কৃতি থাকবে, ততদিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় অবনতি ঘটতে থাকবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, স্কোর থেকে ভয়াবহতা বোঝা যায় না। সরকারের মনস্তত্ত্ব হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা। সরকার সত্যিকারের গণতান্ত্রিক হলে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।