বাংলাদেশে এখন একটি রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে যা চালাচ্ছেন একজন লেডি হিটলার-খালেদা জিয়া
লন্ডন প্রতিনিধি: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এখন একটি রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে যা চালাচ্ছেন একজন লেডি হিটলার’—। এ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কারণ তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যা হুকুম দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন, তাঁর সামন্তরা, অর্থাৎ প্রশাসনের যাঁরা আছেন, তাঁরা সেভাবে কাজ করছেন। অন্য কারও কোনো নির্দেশ-আদেশ সেখানে চলে না।
খালেদা জিয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের আরো সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আজকে দেশের এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণরূপে হাসিনা দায়ী।’ গতকাল রোববার রাতে যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনের রিভারব্যাংক পার্ক প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠিত নাগরিক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মোটেও ভালো নেই।’
যুক্তরাজ্য সফররত খালেদা জিয়ার সম্মানে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি ওই সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যাওয়ার পর দেড় মাসে এই প্রথম তিনি প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখলেন। সভা চলাকালে হোটেলের সামনে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস লন্ডনে অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যা করে বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেন, চিকিৎসা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি লন্ডনে একান্ত ব্যক্তিগত সফরে এসেছেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে আরও কিছুদিন রেখে দিতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন দেশের কী অবস্থা। সে জন্য আমাকে যেতেই হবে।’ জানান, তিনি বেশ সুস্থ ও ভালো আছেন।
বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণের তীব্র সমালোচনা করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসন থেকে মেধাবী ও যোগ্য অনেককে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৪০০ এর বেশি কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকদের ডাবল-ট্রিপল প্রমোশন দিয়ে ওপরে উঠানো হচ্ছে।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রীর এমপি হওয়ারও যোগ্যতা নেই।
যে কারণে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাজেটও আজ খরচ হয় না। বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে কমিশন বাণিজ্য আর বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। কিন্তু এসব অপকর্মগুলো দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) চোখে দেখে না। তারা কেবল খালেদা জিয়া আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ব্যস্ত।’
বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না—মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ধ্বংস নয়, গড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। সবকিছু ভুলে যেতে হবে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের গত সাত বছরের শাসনামলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, ‘এ সময়ে বিএনপির তিন হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
এক হাজার ২০০ জনকে গুম এবং এক হাজার ১২ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি। মিথ্যা মামলার সংখ্যা ২৪ হাজার। আসামি করা হয়েছে ৬০ লাখ নেতা-কর্মীকে এবং অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে ছয় হাজার ৪৭৮ জনের।’ বিএনপির নেতা-কর্মীদের থানায় নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করে দেওয়া হয় এবং তাদের চিকিৎসা করানোরও সুযোগ দেওয়া হয় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘বিচার বিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের জামিন দেওয়া হয় না।
আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপিকে একেবারে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলটির চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, বিএনপিকে ভাঙা যায় না, ভাঙা যাবে না। ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনও সে রকম চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও মঈন উদ্দিন জড়িত।
সব ঘটনায় সরকার বিএনপিকে দায়ী করছে—অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যার মুহূর্তে কূটনৈতিক পাড়ার সড়কের বাতি বন্ধ ছিল কেন? তার জন্য কি বিএনপি দায়ী? তিনি অভিযোগ করেন, ‘জঙ্গির কথা বলে হাসিনা বিদেশিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। বুঝাতে চাইছেন, তিনি ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশে জঙ্গির উত্থান ঘটবে। কিন্তু জঙ্গিদের উত্থান যে কাদের সময়ে হয়েছে, সেটা তারা ভুলে যাচ্ছে।
যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠান, পল্টনে সিপিবির সভা, রমনার বটমূলে, গোপালগঞ্জের গির্জায় ও নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের সভায় বোমা হামলার ঘটনা আওয়ামী লীগের আমলেই ঘটেছিল। কিন্তু একটা জঙ্গিও তারা ধরেনি। আমরা সরকারে আসার পর সবগুলো জঙ্গিকে ধরেছি। সাজা দিয়েছি।’
অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিস্থিতি বর্ণনা করে খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নেওয়াকে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল দাবি করে খালেদা বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ন্যায় ওই নির্বাচনেও বিএনপিকে জিততে দেওয়া হতো না। বরং ওই নির্বাচনে অংশ নিলে এই সরকার দেশে-বিদেশে বৈধতা পেয়ে যেত।
টানা তিন মাসের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘ঢাকায় সেভাবে আন্দোলন করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রাম দেশে যে আন্দোলন হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ওই রকম আন্দোলন হয়নি। ঢাকাতে দেখা মাত্রই গুলি করা হচ্ছে।’ দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কমিটিগুলোতে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আন্দোলন-সংগ্রাম যারা করেছে, যারা রাজপথে ছিল তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ভাই-ভাইয়ের পকেট কমিটি আর চলবে না।’ কেন্দ্রীয় কমিটিসহ অনেক কাজ এগিয়ে রেখে এসেছেন বলে জানালেন তিনি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রমুখ। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন।