বাংলাদেশের ১ম টেস্ট জয়ের নেপথ্যে নায়ক হাবিবুলের র্কীতি
সীপা খন্দকার: বাংলাদেশ টেস্ট জয়ের ইতিহাস রচনা করেছিল।এর নায়ক ছিলেন হাবিবুল বাশার।এ সম্পর্কে হাবিবুল বাশার বললেন ‘এই একটা রেকর্ডই আমার কাছ থেকে কেউ কোনো দিন ছিনিয়ে নিতে পারবে না’—দেশের প্রথম টেস্ট জয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কীর্তি এমনই এক ব্যাপার যে অনুভূতির অংশীদার কেউ চাইলেই হতে পারবেন না।
অনেকের অনেক অর্জন থাকতে পারে, দেশের ক্রিকেটে আসতে পারে অনেক সাফল্য, কিন্তু দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের অধিনায়ক হিসেবে হাবিবুলের সেই অনির্বচনীয় অনুভূতি, সেই অনন্য অভিজ্ঞতা যে একান্তই তাঁর।
১০ জানুয়ারি ২০০৫। আজ থেকে ১১ বছর আগের চট্টগ্রামের সেই সকালটি আলাদাভাবেই অমরত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই সকালেই টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ৫ বছরের মাথায় বাংলাদেশ নিয়েছিল প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পরিসরে যে মুহূর্তটির জন্য এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন, চট্টগ্রামের সেই সকাল অবসান ঘটিয়েছিল সেই অপেক্ষার।
আজ দীর্ঘ ১১ বছর পর আরও ক্যালেন্ডারের পাতায় আরও একটি ১০ জানুয়ারি সেই গর্বের অনুভূতিটা যেন জাগিয়ে দিচ্ছে নতুন করেই। নস্টালজিয়ার অনুভূতিটা একই সঙ্গে সচেতন করিয়ে দিচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে গত এগারো বছরের পাওয়া-না-পাওয়ার গল্পটাকেও।
এমন একটা গৌরবের সাক্ষী যিনি সেই হাবিবুল বাশার ভুলেই গিয়েছিলেন আজকের তারিখটা। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। দেশের ক্রিকেটের অনেক বড় দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে প্রথম টেস্ট জয়ের সেই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই যেন স্মৃতিকাতর বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক, ‘এই অনুভূতিটা অসাধারণ।
আমি টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, আমার ক্যারিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন এটি। খেলা ছেড়েছি এত বছর, কিন্তু এখনো কেউ যখন সেই অর্জনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, তখন মনে হয় আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সত্যিই সার্থক।’
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়টা পরম প্রার্থিত ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে একের পর এক ব্যর্থতা ঘিরে ধরেছিল দেশের ক্রিকেটকে। বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অস্তিত্বকে জানান দিতেই টেস্ট জয়টা জরুরি হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সিরিজে সেই লক্ষ্য অর্জন আমাদের ক্রিকেটকে অনেকটা পথ সামনে নিয়ে গেছে বলেই অভিমত হাবিবুলের, ‘টেস্ট জয়টা খুব জরুরি ছিল।
সবাই আমাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছিল। সমালোচনা অন্ত ছিল না। সে সময় টেস্ট ম্যাচটা জিতে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই জয় আমাদের ক্রিকেটকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করি আমি। আজকে আমরা অনেক সাফল্য পাই। ক্রিকেট বিশ্বে আমরা এখন প্রতিষ্ঠিত শক্তি। প্রথম টেস্ট জয়টা আমাদের এত দূর আসার অনুপ্রেরণা হয়েই আছে।’
দেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নেতৃত্ব দিয়ে ভেতরে গর্বের অনুভূতিটা থাকলেও হাবিবুলের একটা আক্ষেপ এখনো থেকে গেছে। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসাটা আজ এক যুগ পরেও মেনে নিতে তাঁর খুব কষ্ট হয়। তিনি মনে করেন, ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট জিতে গেলে আমাদের ক্রিকেটের চেহারাটা অন্যরকমই হতো, ‘মুলতানে আমি অধিনায়ক ছিলাম না।
খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বে সেই দলে আমি ছিলাম সহ অধিনায়ক। আমরা টেস্টটা জিততে জিততে হেরে গেছি। সেই দুঃখ এখনো আমি ভুলতে পারি না। পাকিস্তানের মাটিতে সেই টেস্টটা আমরা জিতে গেলে আমরা দুই বছর আগেই টেস্ট জয়ের গৌরব পেতাম। আমার সেই আক্ষেপের কাছে প্রথম টেস্ট জয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার সুখানুভূতিও ঢাকা পড়ে যায়। মুলতানে জিততে পারলে আমাদের ক্রিকেটের চেহারাই অন্যরকম হতো।’
এগারো বছরের পথপরিক্রমায় আমাদের ক্রিকেটের অর্জন অনেক হলেও টেস্টে আমরা খুব বেশি এগোতে পারিনি—ব্যাপারটা দুঃখ দেয় হাবিবুলকেও। তবে এ জন্য তিনি দায়ী করেন বেশি করে টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়াটাকেই, ‘আমাদের ক্রিকেটের বর্তমানের যে সাফল্য, তাতে আমাদের অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া উচিত।
কিন্তু আমরা তা পাচ্ছি না। টেস্টে খুব বেশি এগোতে না পারার অন্যতম কারণ এটাই। বেশি করে টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম বলে বিশ্বাস আমার।’বেশি করে টেস্ট খেলতে না পারার হাহাকার আর কত দিন আমাদের সঙ্গী হবে কে জানে!