‘বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরিতে ফেডারেল রিজার্ভ-সুইফট লেনদেন কর্তৃপক্ষ দায়ি’
নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে প্রিয়া রহমান : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন ঘটনার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বে থাকা গভর্নর ড. আতিউর রহমান। লেনদেনের শৃঙ্খল বা চেইনে ভুল হওয়ার জন্য শুধু বাংলাদেশকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আতিউর রহমান একথা বলেন।
সাক্ষাৎকারটি গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। আতিউর রহমান এ ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ককে দায়ী করে বলেন, ‘যেখানে আমেরিকায় অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০০ ডলার বাইরে নিতে চাইলে নানা প্রশ্ন করা হয়, সেখানে লাখ লাখ ডলার চলে গেল অথচ ফেডারেল রিজার্ভ কোনো প্রশ্ন তুলল না। ফেডারেল রিজার্ভের উচিত ছিল বাংলাদেশের গভর্নর অথবা অন্য কারোর সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা।’
গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ঢুকে ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত রিজার্ভের অর্থ থেকে সাইবার অপরাধীরা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। চুরির ঘটনায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করেন আতিউর রহমান।
আতিউর রহমান বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ যথাযথভাবে পরিশোধ আদেশগুলো যাচাই করেনি। এ ক্ষেত্রে তাদের ভয়ানক দুর্বলতা ছিল। আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) মেইল করেছি, ফ্যাক্স করেছি; কিন্তু সেখানে এগুলো দেখার কেউ ছিল না। আমাদের একটা হটলাইন দরকার ছিল।
তিনি বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ চাইলে খুব সহজে এই অর্থ উদ্ধার সম্ভব ছিল। ফেড যদি আন্তরিকভাবে সাহায্য করতে চাইত, তাহলে একটা ফোনই যথেষ্ট ছিল। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে বললেই হতো যে, অর্থ আটকাও এবং ফেরত দাও।
আতিউর রহমান বলেন, তিনি বছর খানেক আগে একটি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ব্যাংকের প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে রিজার্ভ চুরির পর নিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশ ব্য্যাংকের সাবেক গভর্নর আরও বলেন, এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি ভীতি তৈরি হয়েছে। এ ঘটনার মাধ্যমে বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশিত হয়েছে।
আতিউর রহমানের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের মুখপাত্র। এটা তাদের (ফেড) কম্পিউটার সিস্টেমের কোনো দুর্বলতার কারণে হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এ ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বলতার ফসল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতা ছিল। কিন্তু আতিউর রহমান তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমি আগেই বুঝেছিলাম কোথাও সমস্যা আছে। আমার ভাগ্য খারাপ যে, তা এখন ঘটল। যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ার আইকে নিযুক্ত করার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা দ্রুত করা সম্ভব হয়নি।
ভুলের জন্য তিনি দায়ী নন উল্লেখ করে আতিউর রহমান বলেন ‘গভর্নর হিসেবে প্রতিটি ছোটখাটো বিষয় দেখার দায়িত্ব তার নয়। কারও পাসওয়ার্ড হয়তো চুরি হয়ে থাকতে পারে। এটা বিভাগীয় ব্যর্থতা, গভর্নরের নয়।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে কোনো অপরাধী থাকলে তাকে ধরা এবং শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ ছাড়া কাউকে দোষারোপ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।