বাংলাদেশের বউ-শাশুড়ির কঠিন খারাপ সম্পর্ক কেন?
প্রিয়া রহমান : বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবাবে বউ-শাশুড়ির কঠিন-খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করছে। এর উত্তরের জন্যে বেশিদূর যেতে হবে না। এজন্য বৃদ্ধা নিবাসগুলিতে গেলেই মিলবে প্রমাণ?
বৃদ্ধা নিবাসের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা জাতিরকন্ঠকে জানালেন, অনেক আশা করে তিনি নিজের পছন্দ মত তাঁর ডাক্তার ছেলে বিয়ে করিয়েছিলেন।মেয়েটি বিয়ের পর স্বামীকে নিজের মত করে নিতে শুরু করে।
একপর্যায়ে সংসারের সব কিছু করাযত্ব করে নেয় স্বামীকে ভুল-ভাল বুজিয়ে। এরপর শুরু হয় সাংসারিক মনোমালিন্য।একসময় যে ছেলেটি মায়ের সব দুঃথ কষ্ঠ বুঝত সে আলাদা হতে শুরু করে। এরপর দিনের পর দিন বৌয়ের উস্কানিতে ঝগড়া। যার শেষমেষ আমি এখন বৃদ্ধাআশ্রমের বাসিন্দা।
ভারতের বউ শাশুড়িরা কেমন সেই বৃত্তান্ত নিয়ে একটি ভিডিও গান তুমুল জনপ্রিয় হওয়ার পর বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশেও পুত্রবধূ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আজো ‘আগে দর্শনদারী পরে গুন বিচারি’ দর্শন অনুসরণ করা হয়।ইউটিউবে ‘বি আওয়ার পোনডাতি’ বা ‘আমাদের বাড়ির বউ হও’ ওই প্যারোডি গানের ভিডিওটি এখন পর্যন্ত চার লাখ বারের বেশী দেখা হয়েছে।
সেখানে গানের কলিগুলোয় একজন শাশুড়িকে বলতে দেখা যাচ্ছে, তিনি তার ছেলের জন্য লম্বা, ফর্সা ও সুন্দরী বউ খুঁজছেন, যে কিনা নিখুঁত গোল রুটি বানাতে পারবে। সে চাকরি করলেও তাকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে।
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলছেন, শাশুড়ি বউয়ের মধ্যেকার একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক চিরাচরিত।অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে এই অবস্থা বিদ্যমান।দেশটিতে শিক্ষার হার বাড়ছে এবং মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে আসছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, শাশুড়িরা এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পুত্রবধূ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুণ নয়, রূপকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন।
“তাকে গৃহকর্মে নিপুণ হতে হবে, ঘরের কাজ করতে হবে। এমনকি যারা বাইরে কাজ করছে, ঘরে এসেও তাদেরকে আবার তাদের নির্ধারিত কাজ করতে হচ্ছে”, বলছিলেন মাহবুবা নাসরীন।
“এখনো আমাদের সমাজে ছেলেদের কাজ এবং মেয়েদের কাজ একেবারে সুনির্দিষ্ট ভাবে আলাদা করা আছে, যার জন্য ওই কাজগুলোও তাদেরকে জানতে হবে এবং এটাই স্বাভাবিক”।কিন্তু পুত্রবধূকে নিজস্ব জায়গা করে দেয়ার মানসিকতা কতটা তৈরি হয়েছে?
মিজ নাসরীন বলছেন, স্তরভিত্তিক সমাজ হওয়ায় একেক স্তরে পরিস্থিতিটা একেক রকম।“বেশীরভাগ স্থানেই তৈরি হয়নি”।তিনি বলছেন, শাশুড়ি অর্থনৈতিক কারণেই ছেলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু পুত্রবধূ আসার পর দেখা যাচ্ছে সেই নির্ভরশীলতার জায়গাটায় ভাগাভাগি হচ্ছে। এর কারণে শাশুড়ি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
“ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে এবং সব জায়গাতে সব শ্রেণীতে বদলাচ্ছে না”।“যেখানে নিরাপত্তাহীনতা বেশী, সেই জায়গাতেই এটা হচ্ছে। যেখানে মেয়েটা শাশুড়ির পরিবারের তুলনায় একটু নিম্ন অবস্থায় আছে সেইসব জায়গায় এটা আছে”।