বাংলাদেশের পাকনীতিতে ক্ষুদ্ধ ইন্ডিয়া
কূটনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন থেকে নিরাপত্তাসম্পর্কিত ছাড়পত্র নেয়ার (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) প্রয়োজনীয়তা তুলে নিয়েছে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এই সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা পরিষেবা বিভাগ (এসএসডি) এই শর্ত তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
সম্প্রতি ঢাকায় পাকিস্তানের হাই-কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই মূলত এই নীতিতে পরিবর্তন আসে। এই নভেম্বরেই অন্তর্বর্তী সরকার করাচি থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি কার্গো জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়, যা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারের আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত।
এদিকে, বাংলাদেশের এই ভিসা নীতি পরিবর্তন উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে এবং বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে।
এ নিয়ে সিডনি পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মুবাশার হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে যে, তারা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে আর ভারতকেন্দ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চায় না। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের জন্য কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।এদিকে, ভারতের প্রতিবেশী নীতিতে ফাঁকফোকর স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার আগ্রহ প্রকাশ করলেও, ভারতের পক্ষ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।