বাংলাদেশের উন্নয়নে সব ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি
দিনা করিম, নয়াদিল্লী থেকে:
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের উন্নতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে আপ্লুত। ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী আজ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলে মোদি তাঁকে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সফরের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানান। মোদি তা গ্রহণ করে বলেছেন, তিনিও হাসিনাকে যত দ্রুত সম্ভব ভারতে দেখতে চান। চলতি মাসেই নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে।
বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম পরামর্শদাতা কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী আজ শুক্রবার দিনভর ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
সন্ধ্যায় তিনি জানান, ‘অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে আমাদের কথা হয়েছে। এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। আমরা খুবই খুশি।’ প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার যে নীতি তিনি প্রথম দিন থেকেই নিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশ অভিভূত। এই নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি দুই দেশের সম্পর্ককে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি বিশেষ জোর দিয়েছেন বিদ্যুৎ, অবকাঠামো নির্মাণ ও পর্যটনের ওপর। বিশেষ করে তিনি জোর দেন দুদেশের মধ্যে রেল, সড়ক, জলপথ, জাহাজ ও বিমান সংযোগসহ মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপনে।
সাত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৩০ জনের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লি এসেছেন। আজ সারা দিন ধরে তিনি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পানিসম্পদমন্ত্রী উমা ভারতী, অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। দিনভর বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসল আলোচনা কাল (শনিবার) হবে।
জেসিসির বৈঠক হবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। সেই বৈঠকের পরই সহযোগিতা ও সম্পর্কের বিস্তারিত গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলা যাবে। এখন শুধু এটুকু বলতে পারি, আমরা খুবই খুশি। এমন চমৎকার পরিবেশেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়া উচিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী না বললেও বাংলাদেশ ও ভারতীয় সূত্র অনুযায়ী দুই দেশের পক্ষে জরুরি প্রায় সব বিষয় নিয়েই মাহমুদ আলী কথা বলেছেন। যেমন, উমা ভারতীর সঙ্গে তিস্তাসহ দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীগুলির পানির সুষম ও ন্যায্য বণ্টন নিয়ে কথা হয়েছে।
পাশাপাশি নদীর সংযুক্তিকরণ ও গঙ্গার সংস্কার যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি ডেকে না আনে সে বিষয়টিরও আলোচনা করা হয়েছে। উমা তাঁকে বলেছেন, নিম্ন অববাহিকার দেশের স্বার্থ হানি করে এমন কিছুই করা হবে না। ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ কেনা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। অর্থ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে কথা বলেছেন অরুণ জেটলির সঙ্গে। নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে।
পশ্চিমবঙ্গের চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদকে নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, যাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জামায়াতকে অর্থ সাহায্যের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারকে বিব্রত করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়টি কোনো বৈঠকে উল্লেখ করেছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে মাহমুদ আলি বলেন, ‘এটা আপনাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ অভ্যন্তরীণ বিষয়টি যে বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বেগের তা মনে করানো হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজ এর বেশি কিছু নয়। তবে আমরা ভারতের কাছ থেকে সব রকমের সহযোগিতা চাই।’