• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশী শিশুদের গিনিপিগ বানিয়ে আইসিডিডিআরবি’র শিশুপথ্য ব্যবসা


প্রকাশিত: ২:৩১ এএম, ২৯ জুন ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৭ বার

icddrb child-www.jatirkghantha.com............শফিক আজিজ. ঢাকা: বাংলাদেশী শিশুদের গিনিপিগ বানিয়ে আইসিডিডিআরবি’র শিশুপথ্য ব্যবসায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং পুষ্ঠি বিজ্ঞানিরা। অভিযোগ করা হয়েছে বিদেশীদের স্বার্থে বাংলাদেশী শিশুদের ওপর ‘শিশুপথ্য’ প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা চালানো হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবি’র শিশুপথ্য পর্যালোচনা করে পুষ্ঠি বিজ্ঞানিরা বলেছেন, আইসিডিডিআরবি’র শিশুপথ্যে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি রয়েছে।যা শিশু স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশী শিশুদের গিনিপিগ বানিয়ে আইসিডিডিআরবি’র শিশুপথ্য ব্যবসায় নেমেছে বেশ কিছুদিন ধরে।ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে সরকারের টনক নড়ে।পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এনিয়ে গঠন কওে দুটি তদন্ত কমিটি।
সূত্র জানায়,
চরম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র আইসিডিডিআরবির উৎপাদিত পথ্যে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি উপাদান ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন একদল শিশু বিশেষজ্ঞ। তবে, আইসিডিডিআরবি’র গবেষক দল বলছেন, সরকারি নীতিমালা মেনে প্রয়োজনীয় উপাদান ব্যবহার করেই এই পথ্য তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে আলাদা দুটি কমিটি গঠন করে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে চরম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। অতি দরিদ্র বলে এদের অধিকাংশই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে পারে না, খেতে পারে না পুষ্টিকর খাবার। ফলে এসব শিশুর অনেকেই অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এসব শিশুর কথা চিন্তা করে ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রায় চার বছর গবেষণা করে স্বর্ণালী-১ ও ২ নামে দুটি পথ্য উদ্ভাবন করেছে আইসিডিডিআরবির একদল গবেষক। কিন্তু এই পথ্যে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি উপাদান ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন একদল শিশু বিশেষজ্ঞ।

আইসিডিডিআরবি পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘তীব্র অপুষ্টিতে যেসব শিশুরা ভোগে তাদের খাদ্য পৌঁছায় দিতে হবে। আর আমরা এই খাবার ভিত্তিক চিকিৎসা তৈরি করেছি।’তিনি আরো বলেন, ‘এটি কোনো ক্রমেই নিয়মিত বা অতিরিক্ত হিসেবে যে খাবার গ্রহণ করা হয় তা নয়, এটি বিশেষ খাবার যা ওষুধ হিসাবে কাজ করবে।’

বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনারের চেয়ারপার্সন ডা. এস কে রয় বলেন, এই খাবার ভিত্তিক চিকিৎসা শিশুদের জন্য কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিও করবে।  আমাদের দেশে যে খাবার আছে সেগুলো দিয়ে এই খাবার পুষ্টি দুর করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে গবেষণা করে দেখা গেছে ঐসব খাবারটিকে আরওটিএফ বলে। উচ্চ মাত্রায় চর্বি ও উচ্চ মাত্রার ক্যালরি থাকে। যা শরীরে খুব তাড়াতাড়ি চর্বি ধরে। আর এটি শরীরের জন্য কখনও ভাল না।’

আর এই গবেষণাকে স্বাগত জানালেও এর ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।

বারডেম পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আকতারুন্নাহার আলো বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার দুইটি প্রশ্ন আছে। প্রথমত কি ধরনের দুধ এখানে ব্যবহার হচ্ছে। সেটি আমাদের সকলের জানা দরকার। আর দ্বিতীয়ত এক বছরের নিচের শিশুদের ছোলার ডালটি হজমের খুব ব্যাঘাত ঘটে। আর এটি নিয়ে আরো গবেষণার দরকার বলে মনে করি আমি।’তিনি আরও বলেন, ‘এটি চালু করা যায় কিনা। এ বিষয়ে সরকারের ভাবা উচিৎ।’

এদিকে, উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিবের নেতৃত্বে আলাদা দুটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানালেন জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. মো. আলমগীর আহমেদ বলেন, ‘দু’টো কমিটিকে একটি সময়সীমা ধরে দেয়া হয়েছে। তা শেষ হলে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।’

তবে, কালক্ষেপণ না করে তীব্র অপুষ্টির শিকার এসব শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইসিডিডিআরবির উদ্ভাবিত পথ্য কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা যাচাই করে দ্রুত চলমান বিতর্কের অবসান জরুরী বলে মনে করছেন শিশু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।