• মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৪

বাঁশখালীর কান্নার জবাব কি দেবে এস আলম গ্রুপ ?


প্রকাশিত: ২:৩৩ এএম, ৬ এপ্রিল ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২২৪ বার

এস রহমান/সাইফুল বারী মাসুম  :   জোর-জবস্তি করে জমি নিয়ে আধা মাগনা দর দিয়ে শিল্প গড়ার S alam-www.jatirkhantha.com.bdবিরোধী ছিলেন এলাকাবাসী। ফলে এলাকাবাসীর হতাহতের পরিবারের কান্না থামছে না। বাঁশখালীর এই কান্না-এই আর্তনাদের জবাব কি দেবে এস আলম গ্রুপ ?

বাঁশিখালীর পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রুপ ৬০০ একর জমির উপর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। গত কয়েক মাস ধরে চলছে অসন্তোষ। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, জোরজবস্তি  করে এস আলম জমি কিনে।অনেকেই প্রকৃত মূল্য পায়নি। কারো কারো কাছ থেকে জমির নেয়া হয়েছে আধা মাগনা দরে। এর ফলে জমি ও কাজ হারিয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছিলেন এলাকাবাসী। তাঁদের প্রশ্ন এস আলম গ্রুপ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে চারটি জীবন।

সংঘর্ষে হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ভিটে ও পেশা হারানোর শঙ্কা থেকে তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এস আলম গ্রুপ নানাভাবে চাপ দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি কিনছিল অথবা জমি বিক্রি করতে বাধ্য করছিল।এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কারণে জমির মালিকদের ক্ষোভ ছিল। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে চিংড়ি ঘের ও লবণ চাষের জমি হারিয়ে গেলে কাজ হারানোর শঙ্কায় ছিলেন অন্যরা।

এদিকে ভিটে ও পেশা হারানোর শঙ্কা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী মিছিলে গিয়েছিলেন তিন ভাই। নিজে অক্ষত ফিরলেও গুলিতে দুই ভাইকে হারিয়ে কাতর এখন বদি আহমদ। মঙ্গলবার চরপাড়ায় বদির বাড়িতে গেলে শোকের মাতম দেখা যায়। টিনের চালার মাটির ঘর এই ভাইদের। বদি জাতিরকন্ঠকে জানান, মিছিলে আমরা তিনভাই পাশাপাশি ছিলাম। গুলি খেয়ে তারা দুজন পড়ে যায়। মরতুজার গুলি লাগে বুকে, আনোয়ারের লাগে অণ্ডকোষ ও গলায়।

মরতুজা পানি চাইল, পানি দেওয়ার পর চোখ বন্ধ করল, আর খোলেনি। আনোয়ারও পানি চাইল, দেওয়ার আগেই সে মারা যায়, আফসোস বদির ভারাক্রান্ত কণ্ঠে।মরতুজার বড় মেয়ে আফসার বেগমের স্বামী জাকির আহমদ এবং জাকেরের বাড়ি বদিদের বাড়ির কাছেই।মরতুজার দুই স্ত্রীর ঘরে ১০ ছেলে-মেয়ে। ছোট ভাই আনোয়ারের ছেলে-মেয়ে চারজন। জাকেরের রয়েছে চার ছেলে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের মুজিবের টিলা এলাকায় সোমবার সংঘর্ষে প্রাণ হারান চারজন।তাদের মধ্যে দুজন মরতুজা আলী (৬০) ও আনোয়ার ইসলাম আংকুর (৫৫) সহোদর। অন্য দুজনের মধ্যে জাকির আহমেদ (৩২)মরতুজার মেয়েজামাই এবং মো. জাকের (৫৫) মরতুজার প্রতিবেশী।

নানা কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় সোমবার বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী গ্রামবাসী সমাবেশ করতে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ। তাতে গুলি চালায় পুলিশ, নিহত হয় চারজন।
মরতুজাদের তিন ভাইয়ের পরিবারের কোনো জমি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে না গেলেও কাজ হারানোর শঙ্কা থেকে তারা মিছিলে গিয়েছিলেন।

মরতুজা ও আনোয়ারের ভাই বদি বলেন, তারা মূলত লবণচাষি। নিজেদের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করেন।
মরতুজার প্রথম স্ত্রী নুরজাহান বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে তাদের কোনো জায়গা নেই। তার স্বামী গিয়েছিল শুধু প্রতিবাদ করতে।কেন তাদের মেরে ফেলা হল? আমরা কি বিচার পাব না? তোমরাই বল।
এদিকে চারজন নিহতের এই ঘটনায় বাঁশখালী থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চীনের সহায়তায় এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬ হাজার কোটি টাকায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এস আলম গ্রুপের জমি কেনার পর ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’ ব্যানারে সংঘটিত হয় স্থানীয়রা।সোমবার তারা সমাবেশের কর্মসূচি দিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষের একদলও পাল্টা সমাবেশ ডাকে। উত্তেজনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।

স্থানীয়রা বলছেন, রোববার রাতে পুলিশ বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী সাতজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলে সোমবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মুজিবের টিলা এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) হাবিবুর রহমান বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধীরা সমাবেশ করতে চাইলে অন্য পক্ষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। তা থামাতে গেলে পুলিশের উপর হামলা হয়। তখন পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়।

সোমবার বিকালের ঘটনা বর্ণনা করে বদি আহমদ বলেন, আমরা স্কুলের কাছাকাছি গেলে পাঁচটি সিএনজি অটোরিকশা ও দুটি ট্রাকে ৫০-৬০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।
এরপর পুলিশ এসে টিয়ার সেল ছোড়ে। তখন গ্রামের লোকজন একসাথে হয়ে পুলিশকে ধাওয়া দেয়।

এস আলম গ্রুপের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাছিরউদ্দিনের উপস্থিতিতেই এই হামলা হয় বলে দাবি করেন বদি।বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল বলে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া সার্কেলের এএসপি এ কে এম এমরান ভুইয়া দাবি করেছিলেন।তা প্রত্যাখ্যান করে বদি বলেন, আমাদের কারও কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না।আমরা লবণচাষি। বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বাড়ি-ঘর, চাষের জমি ধ্বংস হয়ে যাবে, সেকারণেই প্রতিবাদ করতে মিছিলে গিয়েছিলাম।