• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

বহু নারীতে আসক্ত নারীবাজ ট্রাম্পের গোপন অধ্যায়-


প্রকাশিত: ১২:৩০ এএম, ২২ মে ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৩৯ বার

প্রিয়া রহমান    :   রোয়ানে ব্রিওয়ার লেন তখন ২৬ বছর বয়সী মডেল। এক পুল পার্টি থেকে তাকে 55হাত ধরে টেনে নিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিওয়ার বলেন, তিনি আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেলেন। ড্রয়ার খুললেন। আমাকে সুইমস্যুট পরতে বললেন। আমি বাথরুমে গেলাম (একটি সুইমস্যুট নিয়ে)। সেটা পরলাম। এটা ছিল একটি বিকিনি। তারপর বেরিয়ে এলাম। আমাকে দেখে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে উঠলেন- ‘ওয়াও’! ব্রিওয়ার স্মরণ করেছেন মার-এ-লাগোর একটি পুল পার্টির কথা। বলেছেন, সেই পার্টিতে ছিলেন ৫০ জন নারী মডেল ও ৩০ জন পুরুষ। যুবতীরা জলকেলি করছিল। কেউ এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছিলেন। অন্য কারো প্রতি নয়, আমার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন।

44হঠাৎ তিনি আমার হাত ধরলেন। আমাকে সেখানকার একটি ম্যানসন দেখালেন। জানতে চাইলেন আমার সঙ্গে কোন সুইমস্যুট আছে কিনা। আমি বললাম নেই। আমি সাঁতার কাটতে পছন্দ করি না। এরপরই তিনি আমাকে একটি রুমে নিয়ে গেলেন। ড্রয়ার খুললেন। আমাকে একটি সুইমসুট নিতে বললেন। তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স ৪৪ বছর। প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে তার। ফ্লোরিডায় পাম বিচে তার এস্টেট মার-এ-লাগোতে তিনি সাক্ষাতের জন্য বেছে নিলেন ব্রিওয়ারকে। সে সম্পর্কে ব্রিওয়ার বলেন, তিনি আমাকে পুলের পানি থেকে তুলে নিলেন। বললেন, আমি হচ্ছি আশ্চর্যরকম এক ট্রাম্প গার্ল, তাই নয় কি? যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে ‘প্রিজামটিভ নমিনি’ বা গৃহীত মনোনীত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মেয়েদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসে। এ বিষয়ে কমপক্ষে ৫০ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে ছয় সপ্তাহ ধরে। এসব নারী কোনো না কোনো সময় ট্রাম্পের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তারা তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন অথবা তার হয়ে কোনো কাজ করেছেন। এমন নারীদের সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়েছে, যারা ট্রাম্পকে কিশোর বয়স থেকেই চেনেন। তাদেরই একজন রোয়ানে ব্রিওয়ার লেন।

1 নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন ট্রাম্প। তাছাড়া নারীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়েও রয়েছে নানা মুখরোচক গল্প। নারীদের তাচ্ছিল্য করার অনেক উদাহরণও রয়েছে তার। ‘দ্য সেলিব্রেটি অ্যাপ্রেনটিস’ শিরোনামের এক রিয়েলিটি শোয়ের এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যখন হাঁটু ভাঁজ করে বসো, সেটা নিশ্চয়ই সুন্দর একটি ছবি।’ মার্কিন কমেডিয়ান, অভিনেত্রী, লেখিকা রোজি ও’ডনেল প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘মোটা’ ও দেখতে ‘কদাকার’। একজন নারী আইনজীবী তার সন্তানের জন্য বুকের দুধ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘জঘন্য’। কিন্তু এসব ঘটনা ও মার-এ-লাগো পার্টিতে ব্রিওয়ারের সঙ্গে ট্রাম্পের আচরণের পার্থক্য রয়েছে। ব্রিওয়ারের সঙ্গে ট্রাম্পের যখন ওই পার্টিতে দেখা হয়, তখন বলতে গেলে ট্রাম্প তাকে চিনতেনই না।

22ব্যক্তিগত জীবনে ট্রাম্প নারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে থাকেন, তারই এক উদাহরণ ব্রিওয়ার। এসব নারীর অনেকের ব্যক্তিগত জবানিতেই উঠে এসেছে নারীদের সঙ্গে ট্রাম্পের অনভিপ্রেত রোমান্টিক সময়, নারীদের প্রসঙ্গে ট্রাম্পের ভাষ্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারীদের ওপর ট্রাম্পের চাতুর্যপূর্ণ নির্ভরতা বা কর্মস্থলে নারীদের উত্ত্যক্ত করার কথা। এসব সংঘটিত হয়েছে ট্রাম্প টাওয়ারে ট্রাম্পের অফিসে, তার বাসায়, নির্মাণ কাজের সাইটে বা কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতার পেছনের মঞ্চে। ট্রাম্পের কাছে এসব নারীর সঙ্গে সম্পর্ক বা আচরণ অস্থায়ী বা অগুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলেই মনে হয়। কিন্তু ওইসব ঘটনার সম্মুখীন নারীদের জীবনে ট্রাম্প ও আচরণ স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে। নারীদের সঙ্গে ট্রাম্পের এমন সম্পর্কের সূচনা তার স্কুলজীবন থেকেই। ট্রাম্প পড়ালেখা করেছেন নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে।

33 কেবল ছেলেরাই পড়ত এই বোর্ডিং স্কুলে, যেখানে মেয়েদের উপস্থিতি একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। তবে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে মেয়েদেরও নিয়ে আসা যেত। আর সেই সুযোগ সবসময়ই কাজে লাগিয়েছেন ট্রাম্প। প্রতিবারই তিনি নিয়ে আসতেন নতুন নতুন মেয়েদের। তাদের সবাই হতো সুন্দরী, সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত। ট্রাম্পের ওই সময়ের এক সহপাঠী জর্জ হোয়াইট ওই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘ডোনাল্ড যেসব মেয়েদের নিয়ে আসত তাদের সৌন্দর্য নিয়ে সে খুবই সংবেদনশীল ছিল। ডোনাল্ডের কাছে এটা ছিল প্রদর্শনী।’ ধীরে ধীরে সে নিজের একটি ‘প্লেবয়’ ইমেজ গড়ে তোলে স্কুলে। শেষের দিকে তার সহপাঠীরা তাকে ‘লেডিস ম্যান’ বলে ডাকতে শুরু করে। জর্জ হোয়াইট বলেন, ‘সে কখনোই একই মেয়েকে

একাধিকবার নিয়ে আসত না। নানা ধরনের মেয়েকে সে নিয়ে আসত। এসব মেয়ে ছিল দেখতে সুন্দর, অত্যাধুনিক এবং সুন্দর পোশাকে সজ্জিত। তাদের দেখেই বুঝা যেত যে তারা উচ্চশ্রেণির।’ ট্রাম্পের কাছে ওই সময়ের কথা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে সঙ্কোচবোধ করে বলেন, ‘এটা বলা হয়তো ঠিক হবে না, আমি নিজেই বিপদে পড়ব।’ পরে জানান, মেয়েদের নিয়ে তার ‘চমৎকার অনুভূতি’ ও ‘অসম্ভব ভালো লাগা’ ছিল। ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড সি. ট্রাম্প যেভাবে নারীদের সঙ্গে আচরণ করতেন, তার স্পষ্ট প্রভাব পড়ে ট্রাম্পের ওপরও। ফ্রেড ট্রাম্প সবসময়ই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিজেই নিতেন এবং পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ রাখতেন নিজের কাছে। ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ও সত্তরের দশকে ট্রাম্পের বান্ধবী ছিলেন ইভানা জেলনিকোভা। ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে এক নৈশভোজে তার উদাহরণ পেয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের পরিবারের সঙ্গে জেলনিকোভা একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে শুরুতেই ফ্রেড ট্রাম্প অর্ডার দিয়েছিলেন স্টেকের। তার দেখাদেখি বাকি সবাইও স্টেক অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু ইভানা অর্ডার করেছিলেন মাছ। ফ্রেড তখন ওয়েটারকে বলেন যে ইভানা মাছ নয়, স্টেক খাবে। বাবার এমন আচরণকেই ওইদিন সমর্থন করেছিলেন ট্রাম্প। ফ্রেড ট্রাম্প নারীদের কাজ করা নিয়ে খুব একটা খুশি ছিলেন না। আশির দশকে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানে কনস্ট্রাকশন হেড হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় বারবারা এ. রেসকে। তাতে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি ফ্রেড ট্রাম্প। ট্রাম্প এ প্রসঙ্গে বলেন, তার বাবা ছিলেন ভিন্ন সময়ের মানুষ। ট্রাম্পের মা ছিলেন গৃহিণী। এখনও নিজের মা-বাবাকেই আদর্শ মনে করেন তিনি। নারীদের প্রতি ট্রাম্পের আচরণের আরও দিক বেরিয়ে আসে যখন নব্বইয়ের দশকে মিস ইউনিভার্স সংস্থাকে কিনে নেন ট্রাম্প। তখন সুন্দরী যুবতীদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান ট্রাম্প। ১৯৯৭ সালের মিস ইউনিভার্সের প্রতিযোগী ছিলেন ২১ বছর বয়সী মিস উটাহ টেম্পল ট্যাগার্ট। তার মতো তরুণীদের সঙ্গে ট্রাম্প যেভাবে আচরণ করতেন, তাতে চমকে গিয়েছিলেন তিনি। ট্যাগার্টের সঙ্গে ট্রাম্পের পরিচয়ও হয়েছিল অস্বাভাবিকভাবে। তিনি বলেন, তিনি সরাসরি আমার ঠোটে চুমু দেন। আমার কাছে এটা ছিল অশ্লীল। ওই সময় তিনি মার্লা ম্যাপলের সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন। আমার মনে হয়েছিল আরও অনেক মেয়েকেই তিনি এভাবে চুম্বন করেছেন। এটা ছিল অত্যন্ত অনুপযোগী। অপরিচিত মেয়েদের ঠোঁটে চুম্বন করার বিষয়ে নিজে রক্ষণশীল বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তবে ট্যাগার্টের দাবি, তার ঠোঁটে ট্রাম্পের চুম্বন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ওই প্রতিযোগিতার শেষে গালা উদযাপনের পর ট্যাগার্টের প্রতি মনোযোগী হন ট্রাম্প। তাকে ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে সহযোগিতা করতে নিউ ইয়র্কেও আমন্ত্রণ জানান। ট্রাম্প টাওয়ারে ট্যাগার্ট পৌঁছালে সেখানেও ট্যাগার্টের ঠোঁটে চুম্বন করেই তাকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ট্যাগার্টকে বয়স কমিয়ে বলারও পরামর্শ দেন তিনি। ট্যাগার্ট ওই সময়ের কথা মনে করে বলেন, ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন যে এজেন্সিগুলোতে তিনি বলবেন যে ট্যাগার্টের বয়স ১৭। তাতে অবশ্য রাজি হননি ট্যাগার্ট। ক্যারি প্রিজিন নামের আরেক মিস ইউএসএ প্রতিযোগী জানান, ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবেও রিহার্সেলের সময় প্রতিযোগী তরুণীদের মূল্যায়ন করতেন। তিনি নিজের স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমাদের বলা হতো শুরুর পোশাকটি পরার জন্য যেগুলো সুইমসুটের মতোই শরীর প্রদর্শন করত। আমাদের বলা হতো তার জন্য মঞ্চে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।’ ২০০৯ সালের মিস ক্যালিফোর্নিয়া প্রিজিন লিখেছেন, ট্রাম্প লোকজন নিয়ে আসতেন এবং আমাদের খুব কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন। একজন জেনারেলও বোধহয় তার প্লাটুনকে এভাবে পর্যবেক্ষণ করেন না। তিনি কোনো একজন তরুণীর সামনে এসে দাঁড়াতেন, তাকে আপাদমস্তক দেখতেন এবং বলতেন, ‘হুম’। এরপর পাশের তরুণীর ক্ষেত্রেও একই কাজ করতেন। ছোট্ট একটি প্যাডে তিনি নোট নিতেন। এসবের শেষে তিনি বলতেন, ‘ঠিক আছে। আমি চাই সব মেয়ে সামনে আসুক।’ ট্রাম্প মিস অ্যালাবামার দিতে তাকালেন; বললেন, এখানে আসো। তিনি এক ধাপ সামনে গেলেন। ট্রাম্প তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বলো, এখানকার মেয়েদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি সুন্দরী?’। মিস অ্যালাবামা তখন চারপাশে তাকিয়ে বললেন, ‘আমাকে বাদ দিয়ে? আমার কাছে আরকানসাসকে ভালো লাগে। সে মিষ্টি একটি মেয়ে।’ ট্রাম্প তখন বললেন, ‘সে মিষ্টি কি না, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। সে কি আবেদনময়ী?’ প্রিজিন লিখেছেন, এটা স্পষ্টই ছিল যে ট্রাম্পের এসব আচরণের অর্থ ছিল ওইখানে উপস্থিত তরুণীদের তার নিজের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী দুটি দলে ভাগ

করে ফেলা। অনেক মেয়ের কাছেই এটা অপমানজনক মনে হয়েছে। অনেক মেয়েই ট্রাম্পের চলে যাওয়ার পর মঞ্চের পেছনে গিয়ে কেঁদেছেন; ‘দ্য ডোনাল্ড’কে মুগ্ধ না করতে পেরে প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই তারা পরাজিত হয়ে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে ‘এমনটি কখনই করেননি’ বলে জানান। এ ধরনের আচরণ কাউকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয় ও তাদের অনুভূতিকে আঘাত করে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে আঘাত করতাম না।’ নারীদের শরীর নিয়েও ট্রাম্প সবসময়ই কথা বলতেন। ট্রাম্পের বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের দেখাশোনা করে থাকে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন। এখানেও তিনি নিয়মিত আলোচনার মধ্যেও কখনও কখনও নারী শরীর নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করতেন। ট্রাম্পের কনস্ট্রাকশন ফার্মের এক্সিকিউটিভ বারবারা এ. রেস তার সঙ্গে ট্রাম্পের এক সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করেন। লস অ্যাঞ্জেলস এলাকায় একটি প্রজেক্ট নিয়ে স্থপতির সঙ্গে কথা বলছিলেন তারা। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ট্রাম্প মারিয়ানা ডেল রে এলাকার নারীদের শরীর নিয়ে মন্তব্য করে বসেন। তিনি বলেন, ‘তারা (মারিয়ানা ডেল রে এলাকার নারীরা) নিজেদের নিতম্বের প্রতি যত্নশীল।’ তার এমন উক্তির কোনো আগাগোড়া আমি বা ওই স্থপতির বোধগম্য ছিল না। এর আরও কয়েক বছর পর রেসের শরীরের ওজন অনেক বেড়ে যায়। সেটা নিয়েও কথা শোনাতে ছাড়েননি ট্রাম্প। রেসের আরেক সহকর্মী লুইজি সানশাইনও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। লুইজির ওজন বেড়ে গেলে ট্রাম্প তাকে বলতেন যে, তাকে আগেই দেখতে ভালো লাগত। রেস আরও জানান, ট্রাম্পের অফিসে কোনো দর্শনার্থী এলে সবচেয়ে সুন্দরীদেরই এগিয়ে নেয়া হতো।
ট্রাম্পের নিজের জীবনে যত নারী এসেছেন তারা সবাই যে সুন্দরী, তা আশেপাশের মানুষের কাছ থেকেও নিশ্চিত হতে চাইতেন। ১৯৯৭ সালের মিস টিন ইউএসএ’র কথা। ওই প্রতিযোগিতার উপস্থাপনা করেছিলেন ট্রাম্পের মেয়ে ইভাংকা। ট্রাম্প বসে ছিলেন দর্শক সারিতে। তার পাশেই ছিলেন তখনকার মিস ইউনিভার্স ব্রুক অ্যানটয়নেট্টে মাহেয়ালানি লি। ট্রাম্প তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার কি মনে হয় না আমার মেয়ে আবেদনময়ী? সে আবেদনময়ী, তাই না?’ ব্রুক এই প্রশ্নে যথেষ্টই বিব্রত হন এবং ট্রাম্পের এমন প্রশ্ন তার কাছে অত্যন্ত বিশ্রি মনে হয়। শুরুতেই বলা ব্রিওয়ার লেনেরও একই অভিজ্ঞতা রয়েছে ট্রাম্পকে নিয়ে। নব্বইয়ের দশকে ট্রাম্পের সাবেক স্ত্রী মার্লা ম্যাপলস ও ইভানা ট্রাম্প সম্পর্কে ব্রিওয়ারের কাছে জানতে চান ট্রাম্প। তিনি ব্রিওয়ারকে বলেন, ব্রিওয়ার মার্লাকে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে কত মনে করেন। এটাকে ট্রাম্পের বালখিল্য আচরণ বলেই মনে করেন তিনি। পরে একই প্রশ্ন ট্রাম্প করেন তার তখনকার স্ত্রী ইভানা প্রসঙ্গেও। জবাবে ব্রিওয়ার বলেন, ‘তিনি তোমার স্ত্রী। সুন্দরী নারী। তুমি তাকে ১০ ছাড়া আর কী দেবে? আমি তোমার বউকে নিয়ে কোনো বিচার করব না।’ ট্রাম্প অবশ্য কোনো নারীকে অন্য নারীদের বিচার করার এমন অনুরোধ জানানোর কথা সম্পূর্ণভাবেই অস্বীকার করেন। কোনো নারীর সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা অন্যদের মাঝে চাউর করার অভ্যাসও ছিল ট্রাম্পের। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্কের একজন ডেপুটি মেয়র বারবারা ফিফে ট্রাম্পের সঙ্গে তেমন একটা পরিচিত ছিলেন না। তবুও এক সাক্ষাতে ট্রাম্প তাকে বলে বসেন, ওইদিনই তার এক মডেলের সঙ্গে ‘ডেট’ রয়েছে। ফিফে বলেন, ‘আমার কাছে সত্যিকার অর্থে এটাকে অপরিণত মনে হয়েছে।’ ট্রাম্পের অফিসের রেসও ট্রাম্পের এমন অভ্যাসের কথা জানিয়েছেন।
১৯৯৬ সালের মিস ইউনিভার্স অ্যালিসিয়া মাশাদো আরেক অভিযোগ এনেছেন। তিনি খানিকটা মুটিয়ে গিয়েছিলেন। এটা নিয়ে জনসম্মুখেই কথা শুনিয়েছেন ট্রাম্প। ওজন কমাতে মিস ইউনিভার্সের প্রেসিডেন্টের কাছে সহায়তা চান মাশাদো। কিন্তু তাকে একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় ও মিডিয়ার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ট্রাম্প সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় কাঁদতে কাঁদতে মাশাদো বলেন, আমি এটা করতে চাই না। ট্রাম্প প্রত্যুত্তরে বলেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। নিউ ইয়র্ক সিটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের ডেপুটি মেয়র অ্যালেয়ার টাউনসেন্ড ট্রাম্প সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, অনেক ক্ষেত্রেই তার মনে হয়েছে ট্রাম্পের কাছে লিঙ্গগত সম্পর্ক যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার পদ বা পদবি ততটা নয়। নিজের অফিসেও নারীদের অনেক সময়ই নিজের দেয়া ‘ডাক নামে’ ডাকতেন ট্রাম্প, যা অনেক সময়ই ছিল নারীদের অপমান করার শামিল। ট্রাম্পের জীবনের বিভিন্ন সময়ে আসা নারীদের বক্তব্যে এভাবেই উঠে এসেছে তার নারী সম্পর্কিত কেচ্ছা-কাহিনী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সম্ভবত হতে যাচ্ছেন ডেমোক্রেট দলের নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে যেভাবে সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প, নিউ ইয়র্ক টাইমসে উঠে আসা নারীদের নিয়ে তার এসব ঘটনা আরও সমালোচনার জন্ম দিবে সন্দেহ নেই। তার প্রভাব যে মূল নির্বাচনে নারী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সুখকর হবে না, তা বলাই যায়।