‘বহুমাত্রিক’প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার-চীনের পথে ঢাক ত্যাগ
কূটনৈতিক রিপোর্টার : অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে ঢাকা-বেইজিং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে, সেই সঙ্গে আসতে পারে কিছু ঘোষণা।
বুধবার দুপুর ১টায় চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ইউনূস বেইজিংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বলে সরকার প্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়।বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই চীন সফর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবার বোয়াও সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে তিনি বক্তব্য দেবেন।এদিন চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
শুক্রবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হওবে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের। সেখানে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।সেদিন চীনের একটি হাইটেক পার্কে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে ইলেক্ট্রিক ভেহিকল, সোলার প্লান্ট ও চিপস কারখানা পরিদর্শন করবেন। শনিবার পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে এবং সেখানে তিনি বক্তব্য দেবেন।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ‘বহুমাত্রিক’।চীন আমাদের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে। আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে চলেছি, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হিসেবে চীনকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে একটা বার্তা যাচ্ছে।
এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব।প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।পানি সম্পদ উন্নয়নে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় রয়েছে এর মধ্যে। এছাড়া বিনিয়োগ ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বিষয়ে কিছু ঘোষণাও আসতে পারে।
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শি জিনপিং ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনারও সুযোগ রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য, রোহিঙ্গা, জিডিআই, অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।রোববার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “চীন সফরে মূল ফোকাস হবে চীনের সিইওদের (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে পরিণত করা।চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এটা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সফর। দুই দেশ কূটনীতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে।”
প্রেস সচিব বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের ফোকাস থাকবে চীনের কোম্পানিগুলো যেন তাদের কারখানা বাংলাদেশে রিলোকেট করে। প্রধান উপদেষ্টা আগেও চীনের সোলার কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ, বৈশ্বিকভাবে চীন অনেক ট্রেড বেরিয়ারের মধ্যে পড়ে গেছে।বাংলাদেশে থেকে উৎপাদন করে যদি রপ্তানি করে, তাহলে কোনো বাধার মুখে পড়বে না। দুটি কোম্পানি বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর একটি হচ্ছে ‘লংগি’। এটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল কোম্পানি। বিশ্বের ৭০ ভাগ সোলার তারা তৈরি করে। বাংলাদেশে তারা আসা মানে এ খাতে প্রচুর জব তৈরি হবে এবং এক্সপোর্ট করা যাবে।”
চার দিনের সফর সফর শেষে শনিবার চীনের একটি উড়োজাহাজে বেইজিং থেকে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। এই সফরে ৫৭ জনের একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে রয়েছে।