• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বসুন্ধরার পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০ সিসি ক্যামেরা বসছে কেরানীগঞ্জে


প্রকাশিত: ৫:৫১ পিএম, ৯ নভেম্বর ২৩ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১০৮ বার

স্টাফ রিপোর্টার : কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার আওতাধীন ৫টি ইউনিয়নকে ২০০ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে কেরাণীগঞ্জের সেমন্তী কনভেনশন হলে এ কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের পক্ষে তাঁর সেক্রেটারী, বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাকসুদুর রহমান ১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন। চেক গ্রহণ করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার)। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ঢাকার উপকণ্ঠ কেরাণীগঞ্জের বিশাল একটি জনপদ নিরাপত্তার চাদরে চলে আসছে। বিশেষ করে রাজধানীর পাশ্ববর্তী উপজেলা হওয়ায় বিভিন্ন সময় এখানে নানা অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। সিসিটিভি নজরদারির আওতায় এলে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই লাঘব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেরাণীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ম. ই. মামুন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সেক্রেটারী ও নির্বাহী পরিচালক মাকসুদুর রহমান, চিফ প্রটোকল অফিসার মেজর (অব.) মোহসীনুল হাকিম, একান্ত সচিব এমডি আমিনুল ইসলাম, ফেরদৌস বিন সিদ্দিক, বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম মো. শ্যামল, কালের কণ্ঠ’র উপ-সম্পাদক হায়দার আলী, নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ডেপুটি সিএনই আশিকুর রহমান শ্রাবণ, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির সেক্রেটারিয়েট টিমের সদস্য রণিত সেন, মারুফ কাজী, সোহেল।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান, ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ খুশী, সাকুর হোসেন সাকু, সাইদুর রহমান চৌধুরী ফারুক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী স্বাধীন শেখ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বক্তব্যের শুরুতে তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পৃষ্ঠপোষকতাকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কেরাণীগঞ্জকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা গ্রুপকে আমরা পাশে পেয়েছি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের যে অঙ্গীকার সেটি বাস্তবায়নে পুলিশ বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কেরাণীগঞ্জের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ তারই অংশ। পুলিশ বাহিনী নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত শান্তি সমাবেশের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, সেখানেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মাহুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, একসময় কেরাণীগঞ্জ সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে কেরাণীগঞ্জে কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারত না। সব শ্রেণি পেশার মানুষ সারাক্ষণ আতংকে থাকত। সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমরা কেরাণীগঞ্জকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছি। এতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কথাও না বললেই নয়।

নসরুল হামিদ বিপু বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা জোরদারে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এই ধরনের সিসিটিভি দেশের আধুনিক এলাকা ছাড়া আর কোথাও নেই। কেরাণীগঞ্জে যে সিসিটিভি ক্যামেরা বসতে যাচ্ছে, সেগুলো খুবই অত্যাধুনিক। প্রতিটি অলি-গলিতে আমরা ক্যামেরা স্থাপন করব। এর মধ্য দিয়ে কেরাণীগঞ্জের মানুষকে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিয়ে যাবে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা কেরাণীগঞ্জকে শতভাগ অপরাধমুক্ত ঘোষণা করব ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, ১৯০৫ সালে ঢাকার নবাববাড়িতে প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৯৭ বছরে পাকিস্তান শাসনামলসহ সব সরকারের নেতৃত্বে মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৩ বছরে আমরা সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছি। এখন সমগ্র বাংলাদেশ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত।

উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম তাঁর বক্তব্যে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের যে সুফল কেরাণীগঞ্জের মানুষ পাবে, তার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত সড়কে ব্যাপক ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। আমি দায়বদ্ধতা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটারজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে ডাকাতি, অতিরিক্ত গতিতে গাড়িচালনা থেকে শুরু করে অপরাধ কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই লাঘব হয়ে গেছে। কোনও এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে যে কোন অপরাধী অপরাধ সংঘটনের আগে চিন্তাভাবনা করবে। কেরাণীগঞ্জে যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, সেটি হবে দেশের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির। এ কাজে এগিয়ে এসে বসুন্ধরা গ্রুপ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা জোরদারে বড় অবদান রাখল।

কেরাণীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, অনেকগুলো চোখ, যা দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা কেরাণীগঞ্জের মানুষকে নিরাপত্তা দিবে। সেই চোখগুলোর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আজকে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পাশাপাশি এই সিসিটিভি ক্যামেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি কেরাণীগঞ্জবাসীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায় কেরাণীগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে আমি বসুন্ধরা গ্রুপকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন, তারই অংশ এটি। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে কেরাণীগঞ্জের ৯৯ শতাংশ অপরাধ দমন হবে বলে আমি মনে করি।

সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সোনার মানুষ লাগে। দক্ষ জনশক্তি এবং প্রযুক্তির মেলবন্ধন এই দেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্তকারী অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে সিসিটিভি নজরদারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ঢাকা জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একটি পরিকল্পণা প্রণয়ন করেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন। এটি বাস্তবায়নে বসুন্ধরা গ্রুপের মতো একটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এগিয়ে এসেছে, তা আমাদেরকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ম. ই. মামুন বলেন, প্রতিটি নাগরিকের সকল নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কেরাণীগঞ্জের সে কাজটি শুরু হচ্ছে, এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নেতৃত্বে কেরাণীগঞ্জকে অপরাধমুক্ত করতে বেশ আগে থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেই পদক্ষেপ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

জানা গেছে, এ কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে থ্রি এস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম নামক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার গুলশান এলাকার নজরদারিতেও প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার কাজ করছে।
এ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কেরানীগঞ্জের প্রায় অর্ধেক এলাকা নজরদারির আওতায় আসতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জ একটি উপজেলা হলেও এখানে বিপুল জনসংখ্যা। শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় এবং রাজধানীর পার্শ্ববর্তী হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই এখানে ঘনবসতি। ফলে এখানে অপরাধপ্রবণতাও বেশি। বিশাল এই এলাকাকে সিসিটিভির মাধ্যমে প্রশাসনের নজরদারির আওতায় আনার যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, এতে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই লাঘব হবে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকার নিকটবর্তী এলাকার মধ্যে কেরাণীগঞ্জ সব থেকে বেশি অপরাধ প্রবণ এলাকা। এখানে প্রচুর বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায় অর্থাৎ ডাম্পিং এলাকা মনে করে এই এলাকায় অপরাধীরা বিভিন্ন স্থানে মার্ডার করে নিরাপদ এলাকা মনে করে লাশ এখান ফেলে যায়। বিশেষ করে শুভাঢ্যা, জিনজিরা, কোন্ডা, তেঘরিয়া এই চারটি জোনের অপরাধ প্রবণতা বেশি- এমন স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবীর বলেন, কেরাণীগঞ্জ একটি উন্নয়নশীল এলাকা। আবাসনের পাশাপাশি এখানে প্রচুর শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকায় ভাসমান লোকের সংখ্যা বেশি। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা পুরো কেরাণীগঞ্জ এলাকাটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করি। সেই অনুযায়ী আমরা প্রাথমিকভাবে একটি প্রকল্প হাতে নিই। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে জানালে তিনি আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। সেই অনুযায়ী পুরো কেরানীগঞ্জকে ২০০টি সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়। এক্ষেত্রে প্রায় ৫ কোটি টাকার একটি বাজেট ধরা হয়। কেরাণীগঞ্জের আমাদের আওতায় মোট ৫টি ইউনিয়নকে ৪টি জোনে ভাগ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই সিসি ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত এলাকাগুলোতে মাদক কেনাবেচার একটি হাব রয়েছে। ব্যবসায়ী এলাকা হওয়ায় ছিনতাই, চুরি এবং ডাকাতির ঘটনাও প্রায়শই ঘটে থাকে। তাই এই পুরো এলাকাকে নিরাপদ রাখতে এই সিসি ক্যামেরারগুলোর মাধ্যমে নজরদারি করতে আমাদের খুব সুবিধা হবে। তাছাড়া কোন অপরাধ সংঘঠিত হয়ে থাকলে সিসি ক্যামেরা দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করাও অনেক সহজ হবে।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় এই পরিকল্পনা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গাড়ি পোড়ানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে, এসব ঘটনাও নিয়মতি নজরদারিতে রাখতে পুরো এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা দরকার।

কেরাণীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এ টি এন বজলুর রশীদ খন্দকার বলেন, কেরাণীগঞ্জের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সিসি ক্যামেরা লাগানোর উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এখানে প্রায়ই চুরি ডাকাতি হয় এবং অপরাধীদের সহজে ধরা যায় না। সিসি ক্যামেরা লাগালে এ ধরনের অপরাধ দমন অনেক সহজ হবে। এছাড়া পুলিশের একার পক্ষে সবসময় সব এলাকায় একসাথে নজরদারি করা সম্ভব না। সিসি ক্যামেরা লাগালে তাদের কাজ অনেক সহজ হবে। ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। দেখা যায়, কলেজের মেয়েরা অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে বখাটে ছেলেদের হাতে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। বিভিন্ন বিরম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে থানার আওতাভুক্ত পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা গেলে এ ধরনের অপকর্ম নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সঙ্গে অপরাধীদেরও চিহ্নিত করা যাবে। শুনেছি আইনশৃঙ্খলাবহিনীর এই নিরাপত্তা জোরদারের কাজে আরথিকভাবে সহযোগিতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এটি তাদের অসম্ভব ভালো একটি উদ্যোগ। আমি তাদের এমন মহৎ কাজের সাধুবাদ জানাই।

আমবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা ইয়াসমিন বলেন, আমার স্কুলকেন্দ্রিক বিবেচনা করলে শিক্ষক হিসেবে পুলিশের এমন উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ আমাদের এলাকায় বাচ্চা চুরির বেশ উপদ্রব ছিলো। এখন পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা গেলে এই ধরনের ঘটনা কমে যাবে। অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারবে। কারণ স্কুল গেট পর্যন্ত আমরা শিক্ষার্থী দেখে রাখতে পারি; কিন্তু স্কুলের সীমানার বাইরে চলে গেলে তো খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। তাই এ ধরনের ব্যবস্থা হলে আমাদের জন্য খুবই উপকার। শুনেছি বসুন্ধরা গ্রুপ এই কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখেন।

স্থানীয় সমাজকর্মী জাকির আহমেদ মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এটি অবশ্যই খুব প্রয়োজনীয় এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ। কারণ তাদের পক্ষে প্রতিটি অলিগলিতে সার্বক্ষণিক টহল দেওয়া সম্ভব না। সেক্ষেত্রে সমগ্র দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ যদি এভাবে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয় তবে এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। কারণ আমি মনে করি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর এবং স্বাভাবিক ঠিক রাখার জন্য এটি একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। কারণ যদি কখনও কোথাও কোন অপকর্ম হয় তবে অপরাধীদের খুব সহজেই চিহ্নিত করা যাবে এবং এ ধরনের ঘটনাও কমে আসবে। এখানে বসুন্ধরা গ্রুপের কথা না বললেই নয়। কারণ সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের যে অবদান তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কেরাণীগঞ্জবাসী অবশ্যই তাদের এই মানবিক ও সামাজিক কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাবে। এটি কেরাণীগঞ্জে একটি রোলমডেল হয়ে থাকবে। আশা করি এ ধরনের কাজ আগামীতেও বসুন্ধরা গ্রুপ অব্যাহত রাখবে। এ জন্য আমি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

আগানগরের রওজাতুল উলুম পূর্ব ইমামবাড়ি মাদ্রাসার মুহতামিম ও প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, আমার জন্য এটি খুব ভালো একটি কাজ হয়েছে। মাহফিলের উদ্দেশে আমাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়্। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক সময় রাত ৩টা থেকে ৪টা বেজে যায়। সেক্ষেত্রে এই এলাকা যদি সিসি ক্যামেরার আওতায় আসে তবে আমি নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবো। কারণ আমাদের এই এলাকায় মাদকাসক্তদের বেশ উপদ্রব আছে যারা রাতে মানুষকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। চুরির ঘটনাও ঘটে থাকে বিভিন্ন সময়। সিসি ক্যামেরা থাকলে এ ধরনের কাজ কমে যাবে। একই সঙ্গে পুলিশের পক্ষে অপরাধীদের শণাক্ত করাটাও সহজ হবে। একটা দেশ সরকারের এককভাবে চালানো সম্ভব না। শুনেছি এই কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আল্লাহ যাদের সম্পদশালী করেছেন তারা এভাবে দেশ ও সমাজের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে তবে দেশ আরও উন্নত হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি বসুন্ধরা গ্রুপ যাতে আরও ভালো করে এবং তাদের ব্যবসার সমৃদ্ধি আরও বেড়ে যায়।

জিনজিরার ইউপি চেয়ার‌ম্যান হাজী সাকুর হোসেন সাকু, বলেন জিনজিরার অধিকাংশ এলাকা আগে থেকেই সিসি ক্যামেরার আওতায় আছে। এখন পুরো মডেল থানার এরিয়া যদি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা যায় সেটা অবশ্যই ভালো কিছু হবে। কারণ পুলিশের একার পক্ষে টহল দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকলে নজরদারি করা অনেক সহজ হবে। এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বসুন্ধরা এই কাজের সাথে জড়িত থাকলে অবশ্যই এটা তাদের একটি ভালো উদ্যোগ। এ ছাড়া আমাদের স্থানীয় এমপি বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রীও নিজ উদ্যোগে পূর্ব থেকেই আইনশৃঙ্লার উন্নয়ন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা জোরদারে এমন বিভিন্ন কাজ করে আসছে। আমি এ ধরনের কাজের সাধুবাদ জানাই।